হুমায়ুন কবীরের অপসারণ চাইলেন হুমায়ুন কবীর।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে সংঘাত তৈরি হয়েছে জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি হুমায়ুন কবীরের। গত ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর শক্তিপুরে কংগ্রেস ও তৃণমূলের সংঘর্ষের জেরে শনিবার রাতে শাসক দলের তিন জন স্থানীয় নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জামিন অযোগ্য ধারায় ওই তিন জনকে গ্রেফতার করে রবিবার সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ওই ঘটনার পরেই জেলা পুলিশ সুপারের ‘অপসারণ’ এবং শক্তিপুর থানার ওসি তুহিন বিশ্বাসের ‘বদলি’ চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন নেতা হুমায়ুন। ওই দাবিতে ৩ জানুয়ারি তাঁর খাসতালুক শক্তিপুর প্রতাপচন্দ্র ফুটবল মাঠে সভা করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। নেতা হুমায়ুনের বক্তব্য, “রেজিনগর বিধানসভা এলাকার ১৫ হাজার মানুষ ওই সভা থেকে পুলিশ সুপারের অপসারণ এবং শক্তিপুর থানার ওসি-কে বদলির আবেদন জানাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।” পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর অবশ্য বলেন, “অপসারণ করা হলে হবে। এ বিষয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই।”
শক্তিপুরে ওই সভার জন্য অবশ্য প্রশাসনের অনুমতিরও তোয়াক্কা করছেন না প্রাণীসম্পদ দফতরের প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী হুমায়ুন। তিনি বলেন, “সভা করার জন্য যে ক্লাবের মাঠ, সেই ক্লাবের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি। পুলিশ ও মহকুমা প্রশাসনের কাছেও অনুমতি চাইব। অনুমতি দিলে ভাল। না দিলেও আমরা সভা করব। সেক্ষেত্রে পুলিশ যদি গ্রেফতার করে, তা হলে তৃণমূলের ১৫ হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার করতে হবে।” প্রসঙ্গত, শনিবার বিকেলে শক্তিপুরে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে আগামী ৬ জানুয়ারি সেখানে সভা করার কথা ঘোষণা করেন জেলা কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরীও। |
অধীরবাবুর বক্তব্য, “কংগ্রেস যে দিন জেলা পরিষদ দখল করেছে, সেই দিনই পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরের বদলির ভাগ্যলিখন রচিত হয়ে গিয়েছে। এখন শক্তিপুরের হুমায়ুন কবীর সেই বদলির কৃতিত্ব নিতে চাইছে। এ যেন ঝড়ে বক মরে আর ফকিরের কেরামতি বাড়ের মতো অবস্থা।” অধীরবাবুর অভিযোগ, “এই জেলার পুলিশ কিন্তু শাসক দলের হয়েই কাজ করছে। শক্তিপুরে কংগ্রেসের প্রতিবাদ সভায় তৃণমূল হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু উল্টে কংগ্রেসের নিরস্ত্র ৪৭ জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ।”
রবিবার বহরমপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কিন্তু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে পুলিশ মন্ত্রী। তিনি রাজ্যের উন্নয়নের ভাবনায় ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু তাঁর নিয়োগ করা পুলিশ সুপারের অতি-সক্রিয়তার কারণে উপনির্বাচনে পরাজিত হই আমি।” হুমায়ুনের কথায়, “ঠিক মতো কাজ না করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী গত ১৭ ডিসেম্বর রেজিনগরে প্রশাসনিক বৈঠকে পুলিশ সুপারকে তিরস্কার করেছেন।”
তাঁর দাবি, গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় ১২ জন অভিযুক্তের মধ্যে ১০ জনকে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করেনি। দু’জন আদালতে আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু পুলিশের গাফিলতিতে তারাও জামিনে ছাড়া পেয়ে গিয়েছে। একই ভাবে দেড় মাস আগে শক্তিপুরের গরদুয়ারাপাড়ায় খুন হন এক যুবক। ওই খুনের এখনও কিনারা হয়নি। নেতা হুমায়ুনের অভিযোগ, “ফোনে আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওই ফোন নম্বর-সহ থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরেও পুলিশ সুপার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।” পুলিশ সুপার বলেন, “ওই অভিযোগের কোনও উত্তর হয় না। আমি কোনও মন্তব্য করব না।”
শক্তিপুরের ওসি তুহিনবাবুর বিরুদ্ধে হুমায়ুনের অভিযোগ, “ওই ওসি উদ্ধত আচরণ করেন।” তুহিনবাবু অবশ্য এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি। মন্ত্রী সুব্রত সাহাও পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে হুমায়ুনের ক্ষোভ নিয়ে নীরব থাকতে চেয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “কী হয়েছে আমি জানি না। তাই কোনও মন্তব্য করা উচিত হবে না।” |