মহাকাব্যিক টেস্ট ম্যাচে জয় মাত্র আট রানের জন্য হাতছাড়া করে ঘরের মাঠে পুরস্কার অনুষ্ঠানে আসার পথে গ্যালারির টিটিকিরি খেলেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক গ্রেম স্মিথ।
মহাকাব্যিক টেস্ট ম্যাচে জয় বিপক্ষের শেষ তিন উইকেট ফেলতে না পেরে হাতছাড়া করে পুরস্কার অনুষ্ঠানে আসার পথে বিদেশের মাঠ হর্ষধ্বনিতে ভরিয়ে দিল ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে।
তা হলে ওয়ান্ডারার্সে নৈতিক জয় কি টিম ইন্ডিয়া-র? যারা কিনা চতুর্থ ইনিংসে ৪৫৮ রান টার্গেট দেওয়ার পর বিপক্ষ শেষ দু’দিনের উইকেটে সাড়ে চারশোয় পৌঁছে গিয়েছিল! যাদের কিনা স্পিনার (অশ্বিন) পঞ্চম দিনের উইকেটে ৩৬ ওভার বল করেও একটি উইকেটও নিতে পারেন না! তবু প্রতিদ্বন্দ্বী অধিনায়কের কথা মানলে জো’বার্গ টেস্টে ভারতেরই নৈতিক জয় হয়েছে। “কৃতিত্বটা ভারতীয় দলেরই প্রাপ্য। প্রথম চার দিন ওরা অত্যন্ত ভাল করেছে। আজ শেষ দিনটা আমাদের ব্যাটসম্যানরা রাজত্ব করলেও আমরা জিততে তো পারিনি!” বলে দিলেন স্মিথ।
ধোনি যার প্রত্যুত্তরে বলছেন, “একটা ম্যাচের তিনটে ফল হতে পারে। জয়, হার বা ড্র। তিনটে সম্ভাবনাকেই মাথা থেকে বের করে দিয়ে এই মুহূর্তে আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বের হল, বিদেশের পিচ-পরিস্থিতির চাপ সামলে আমরা যে ভাবে এখানে পারফরম্যান্স করলাম। তিনটে ওয়ান ডে খেলে দক্ষিণ আফ্রিকার পিচের গতি, বাউন্স সম্পর্কে আমাদের দলের যতই ধারণা হয়ে থাকুক, প্রথম টেস্টে নামার আগে লাল বলে আমরা না খেলতে পেরেছি প্র্যাক্টিস ম্যাচ। না পেরেছি বৃষ্টিতে সঠিক নেট করতে। চাপটা তাই প্রচণ্ড বেশি ছিল। বিশেষ করে বোলারদের উপর যে, ওরা ঠিক কোন লাইনে টেস্টে বল করবে এখানে। কিন্তু আমাদের পেসাররা দুর্ধর্ষ বোলিং করেছে ওয়ান্ডারার্সে। ডারবানে তিন দিন পর দ্বিতীয় টেস্টে নামার আগে এখন ওরা ভাল ভাবেই জেনে গিয়েছে, এ দেশের উইকেটে ঠিক কী বোলিংটা করতে হবে? কখন, কতটা আক্রমণাত্মক কিংবা রক্ষণাত্মক হতে হবে। যেমন আজ মাঝের সেশনে আমরা প্রয়োজনের বেশি আক্রমণাত্মক ছিলাম। একটা সময়ে এই টেস্টে আমরা সহজেই হারতে পারতাম!” তবু এমন দিনেই জাহির চতুর্থ ভারতীয় বোলার এবং দ্বিতীয় ভারতীয় পেসার হিসাবে টেস্টে তিনশো উইকেট পেলেন (৮৯ ম্যাচে)। কালিসকে আজ আউট করে। কুম্বলে, কপিল, হরভজনের পর। |
যুদ্ধশেষের ফেরা। রবিবার ওয়ান্ডারার্সে। ছবি: এপি। |
ব্যাটসম্যানদেরও প্রভূত প্রশংসা করে ধোনি বলেন, “বিরাট দু’ইনিংসেই অসাধারণ ব্যাট করেছে। পূজারা অনবদ্য সেঞ্চুরি করেছে। বিজয়ের কথাও বলতে হবে। ও-ই দ্বিতীয় ইনিংসে নতুন বলের মুভমেন্ট, পেস, বাউন্স সামাল দিয়ে বিপজ্জনক সময়টা ক্রিজে কাটিয়ে দলকে পার করে দিয়েছিল। যে শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে বিরাট-পূজারা ঝড় তুলেছে।”
পূজারা-কোহলি জুটির তৃতীয় দিন শেষ সেশনে ১৭৫ তোলাটাকে স্মিথ আবার দক্ষিণ আফ্রিকার এই টেস্টে সবচেয়ে লজ্জার অধ্যায় মনে করেন। “তার পর থেকেই আমরা ভাল খেলেছি, কারণ, ওটাই আমাদের আত্মসম্মানে ধাক্কা দিয়েছিল। তার পর দু’ধরনের বাউন্সের পিচে এবি আর বিশেষ করে ফাফ যে ব্যাটিং দেখিয়েছে তাতে এই টেস্ট মাত্র আট রানের জন্য জিততে না পারায় আক্ষেপ আরও বেশি হচ্ছে,” বললেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক। যারা জিতলে টেস্ট ক্রিকেটের ১৩৬ বছরের ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে সর্বাধিক রান তাড়া করে জেতার বিশ্বরেকর্ড করত এ দিন।
শেষ দিনের খেলাটা এতটাই স্নায়ুউত্তেজক ছিল যে, দক্ষিণ আফ্রিকার জয় যখন প্রায় নিশ্চিত দেখাচ্ছে, সেই মাহেন্দ্রক্ষণে দু’প্লেসির রান আউট হওয়ার মুহূর্তে কমেন্ট্রি বক্সে রবি শাস্ত্রী পর্যন্ত উত্তেজনায় লাফিয়ে ওঠেন। রাহানের ওই থ্রো-কে প্যাট সিমকক্স বলছেন, “ক্রিকেট খেলাটার ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী থ্রো।” তবে কেপলার ওয়েসেলস থেকে শন পোলকপ্রাক্তন দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়কেরা মনে করছেন, “দক্ষিণ আফ্রিকাই জয় হাতছাড়া করল। এবং ব্যাপারটা চূড়ান্ত হতাশাজনক।”
প্রোটিয়া শিবিরের জন্য আরও হতাশার খবর, ডারবানে শেষ টেস্টে মর্নি মর্কেলের খেলা কার্যত অসম্ভব। অধিনায়ক স্মিথই বলে দিলেন, “মর্নির এখন ভাল রকম রিহ্যাব দরকার। আমাদের টিম ফিজিও বলছে, ডারবানে মর্নির খেলার আশা কুড়ি শতাংশ মাত্র।” যা শুনে প্রথম টেস্টের ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ বিরাট কোহলি বলছেন, “তাতেও ডারবানে আমাদের লড়াইয়ের তীক্ষ্নতা এতটুকু কমবে না। আমি বরাবর বিশ্বাস করে এসেছি, আমাদের উপমহাদেশীয় ব্যাটসম্যানদের স্কিল, টেম্পারামেন্টের আসল চ্যালেঞ্জ ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে। এই টেস্ট সিরিজের জন্য আমি সে ভাবেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছি। বরং অবাক লাগছে, দক্ষিণ আফ্রিকাকে শেষ দু’ওভার জেতার চেষ্টা ছেড়ে দিতে দেখে। তখন আস্কিংরেট ছিল তো আট, আর ফিলান্ডার ভালই খেলছিল! তা হলে?” |