শহরে শীতের অতিথি: ‘নেইমার রোজগারের জন্য ইউরোপে খেলছে’
পেলে আমার কাছে একটা সমস্যা, বলছেন কার্লোস
পেলের টিমের অধিনায়ক হিসাবে তেতাল্লিশ বছর আগে তাঁর হাতে উঠেছিল বিশ্বকাপ। ডিফেন্ডার হলেও তাঁর গোলকে সর্বকালের সেরার তালিকায় রেখেছে ফিফা। সেই কার্লোস আলবার্তো তোরেস এখন কলকাতায়। বিশ্বকাপ নিয়েই। রবিবার বাইপাসের ধারের হোটেলে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে।

প্রশ্ন: উনিশশো সত্তরের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন টিমে পেলে আপনার অধিনায়কত্বে খেলেছিলেন। পেলের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?
কার্লোস: পেলেই তো আমার কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা। একটা ফোঁড়াও বলতে পারেন। ও বিশ্বের যেখানে সংবর্ধনা নিতে যাবে আমাকে নিয়ে যাবেই। এমনকী জোর করেও। সাও পাওলো, রিও সর্বত্র আমাকে সঙ্গী চায়। কলকাতায় আবার আসলেও হয়তো আমাকে নিয়েই আসবে। সত্তরের সোনার টিমের সবাই আমার বন্ধু। কিন্তু পেলে বেস্ট ফ্রেন্ড। দ্য বেস্ট।

প্র: আপনি পেলের কসমস টিমের সঙ্গে সাতাত্তরে কলকাতায় এসেছিলেন? মনে আছে?
কার্লোস: ছত্রিশ বছর আগের কথা। সব কিছু মনে নেই। কাদের বিরুদ্ধে ম্যাচটা খেলেছিলাম তাও এক্ষুনি মনে করতে পারছি না। তবে মনে আছে স্টেডিয়াম একদম ভর্তি ছিল। পেলেকে দেখার জন্য কলকাতার লোক সে দিন পাগল হয়ে গিয়েছিল। গোলটা কিন্তু আমিই করেছিলাম, সেটা মনে আছে। সবাই দাঁড়িয়ে উঠে হাততালি দিয়েছিল। সত্তরের বিশ্বকাপ ফাইনালে আমার গোলটার সময় ঠিক যেমন হয়েছিল মেক্সিকোতে।

প্র: সেই ফাইনালে ইতালির বিরুদ্ধে আপনার গোলটা তো ফিফা সর্বকালের সেরা গোলের তালিকায় রেখেছে! গোলটা নিয়ে নানা গল্পও আছে।
কার্লোস: আরে ওটার জন্য ফিফা দু’বার দু’টো ট্রফি দিয়েছে আমাকে। শেষটা এই তো দু’হাজার দশে! আমাকে যদি নিজের ফুটবলজীবনের সেরা ছবি বাছতে বলেন, ওই গোলটাই বাছব। এখনও স্বপ্নের মতো মনে হয়।

প্র: ওই গোলটা নাকি বিশ্বকাপের সেরা দলগত গোলেরও একটা?
কার্লোস: গোলটার আগে মনে হয় আমরা ১৫-১৬টা পাস খেলেছিলাম। আমাদের টিমের আট জন গোলটার সঙ্গে যুক্ত ছিল। বলটা যখন পেলের পায়ে, তখনই আমি ওভারল্যাপ করতে শুরু করেছিলাম। তারপর তো ইতিহাস। এখনও, এত বছর পরেও যেখানেই যাই ওই গোলটার জন্য প্রশংসা পাই। আমাদের সত্তরের দলটাই ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা দল।

একান্তে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। ছবি: উৎপল সরকার।
প্র: আপনার দেশে পরের বছর বিশ্বকাপ। ব্রাজিল কতটা ফেভারিট?
কার্লোস: ছ’মাস আগে হলে বলতাম, হয়তো সেমিফাইনাল যাবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আমদের টিম ফাইনালে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। নেইমার হচ্ছে স্কোলারির সেরা অস্ত্র।

প্র: শুধুই নেইমার? অস্কার, হাল্ক, ফ্রেডদের উপর আপনার আস্থা নেই?
কার্লোস: ওরা সবাই ভাল। কাপ জেতার ব্যাপারে ওদের সবার উপরই আস্থা রাখছি। কিন্তু তাও বলব, আর্জেন্তিনার জন্য যেমন মেসি, পর্তুগালের জন্য রোনান্ডো, তেমনই ব্রাজিলের জেতার জন্য নেইমার।

প্র: ব্রাজিল ছাড়া আর ফেভারিট কারা?
কার্লোস: স্পেন, জার্মানি আর ইতালি। তবে জার্মানি এ বারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে শক্তিশালী দল। ২০০৬-এ দলটা তরুণ ছিল। কিন্তু এখন মুলার, গোটজেরা ওয়ার্ল্ড বিটার।

প্র: নেইমারকে বলছেন ব্রাজিলের সেরা বাজি। বার্সায় মেসির সঙ্গে নেইমার খেলছেন বলেই কি আপনার এত আস্থা?
কার্লোস: সেটা তো নেইমার টাকার জন্য খেলছে! এখন তো সব সেরা প্লেয়ারই টাকা রোজগারের জন্য ইউরোপের ক্লাবে খেলে। ১৯৭৬-এর আগে ব্রাজিলের সব তারকা কিন্তু দেশেই খেলত। নেইমারের উচিত, নিজের রোজগারের কিছু টাকা ব্রাজিল ফুটবলের উন্নতির জন্য ব্যায় করা।

প্র: নেইমারের না হয় বিরাট প্রতিভা। কিন্তু প্যারিস সাঁ জাঁ-র কাভানি, মোনাকোর মুতিনহোর মতো ফুটবলাররাও তো প্রচুর টাকা পাচ্ছেন?
কার্লোস: ওটাই সমস্যা। এখন কোনও ফুটবলার এক বছর ভাল খেললেই তার দর আকাশছোঁয়া হয়ে যাচ্ছে এটা ঠিক হচ্ছে না। আমার মতে, সঠিক প্রতিভার সঠিক দাম পাওয়া উচিত।

প্র: এখানে মঞ্চে বিশ্বকাপ আনার পর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশ্নে আপনি বললেন, মারাদোনা নয়, পেলেই সর্বকালের সেরা। কেন পেলেকে এগিয়ে রাখলেন?
কার্লোস: পেলে আমার বন্ধু বলে নয়, খুব কাছ থেকে ওকে তো বহু বছর দেখেছি। ও রকম প্রতিভা আর কোনও দিন জন্মাবে না। মারাদোনা, মেসি, রোনাল্ডো কেউ পেলের ধারেকাছে নয়। ও ফুটবলের ঈশ্বর।

প্র: পেলেও সর্বকালের সেরা ফুটবল টিমে আপনাকে রেখেছেন?
কার্লোস: (হেসে) আমার বন্ধু বলে রেখেছে। এই তো, তিন মাস ধরে বিশ্বকাপ নিয়ে ব্রাজিলের দূত হয়ে দেশে-দেশে ঘুরছি। প্রতিদিনই পেলে ফোন করে, জানতে চায় কবে ব্রাজিল ফিরছি।

প্র: ক্রিসমাসের সময় বিশ্বকাপ নিয়ে ভারতে চলে এলেন? তা-ও আবার তিন দিনের জন্য?
কার্লোস: আমার স্ত্রী-ও প্রথমে মনমরা হয়ে গিয়েছিল। ক্রিসমাস তো বছরে এক বারই আসে। কলকাতা ফুটবল-পাগল। ভারতে ফুটবল উন্নতির সুযোগও আছে। সে সব বোঝালাম ওকে। (হেসে) রাজি হয়ে গেল। কী আর বলবে বেচারা।

প্র: ব্রাজিলে বিশ্বকাপ শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাক ভাবে হবে তো? যা অস্থিরতা চলছে আপনার দেশে?
কার্লোস: আমরা ব্রাজিলিয়ান, বুঝলেন! হয়তো এখনও সব স্টেডিয়াম রেডি হয়নি। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর এক সপ্তাহ আগে দেখবেন, গোলটা ঠিকই হয়ে গিয়েছে। আর আমরাই জিতেছি।

প্র: কিন্তু ব্রাজিলেই তো অনেকে বলছেন, দেশের আর্থিক হাল যেখানে এত খারাপ, তখন বিশ্বকাপ আয়োজনের পিছনে এত খরচ করা কেন? তার উপর স্টেডিয়াম ভেঙে পড়ছে! লোক মরছে!
কার্লোস: ভুল। আমাদের দেশের অর্থনীতি যথেষ্টই চাঙ্গা। আসলে অনেকে ভাবছে, দেশের রাস্তা-হাসপাতালের উন্নতির টাকায় স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে। বাইরে থেকে কেউ কেউ তাতে উস্কানি দিচ্ছে। আর স্টেডিয়াম ভেঙে পড়া? আরে, ক’দিন আগেই তো মস্কোয় থিয়েটার হল ভেঙে পড়ল!

প্র: আপনার পুরো নাম কার্লোস আলবার্তো তোরেস। কিন্তু পুরো বিশ্ব আপনাকে কার্লোস আলবার্তো নামেই চেনে। ‘তোরেস’ লালকার্ড দেখল কেন?
কার্লোস: (হেসে) তোরেস থাকলে আমাকে সবাই স্প্যানিশ বা পর্তুগিজ ভাবত। কিন্তু আমি ব্রাজিলিয়ান।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.