অবশেষে শ্রীরামপুরে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস তৈরির প্রক্রিয়া জোরকদমে শুরু হয়েছে। ঝাঁ-চকচকে বাস টার্মিনাস শুধু নয়, ওই প্রকল্প ঘিরে বাণিজ্যিক পরিকল্পনাও হয়েছে বিস্তর। ইতিমধ্যেই টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। বরাত পেয়েছে এমবিএল ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড নামে মুম্বইয়ের একটি সংস্থা। শ্রীরামপুর ইএসআই হাসপাতালের অদূরে জিটি রোডের ধারে (পশ্চিম শ্রীরামপুর) ওই প্রকল্প হচ্ছে। টাকা দিচ্ছে হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশন (এইচআরবিসি)।
প্রশাসন সূত্রের খবর, মোট ৯৮ কাঠা জমির উপরে ওই প্রকল্প হবে। বেসমেন্ট থেকে শুরু করে ছ’টি তল থাকবে ভবনে। বেসমেন্টে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। পার্কিংয়ের টাকা নেবে পুরসভা। একতলায় বাস টার্মিনাস। কমপক্ষে ২৫টি বাস সেখানে দাঁড়াতে পারবে। বাসচালক এবং কর্মীদের জন্য ঘর থাকবে। দোতলায় যাত্রীদের লাউঞ্জ হবে। সুদৃশ্য বিশ্রামাগার থেকে চা, কফির স্টল বা জনতা ক্যান্টিন বাদ যাবে না কিছুই। |
এই চেহারাই হবে বাস টার্মিনাসের। |
স্নানঘরও হবে। তিন তলা থেকে ছ’তলা বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করবে এইচআরবিসি। মূল ভবনের পিছনে ২ কাঠা জায়গা ছেড়ে রাখা হয়েছে। সেখানে সৌন্দর্যায়ন হতে পারে। লভ্যাংশের একাংশ তারা পুরসভাকে দেবে। আর মোট আয়ের ১০ শতাংশ প্রতি বছর পুরসভায় জমা পড়বে। এইচআরবিসি-র চেয়ারম্যান তথা শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দূরপাল্লার বাস দাঁড়ানোর পরিকল্পনা আছে ভবিষ্যতে।
পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রকল্পের ৪৫ কোটি টাকার পুরোটাই দেবে এইচআরবিসি। দু’বছরের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার কথা।” তিনি জানান, জমিটির মালিক পুরসভা। ৯৯ বছরের জন্য এইআরবিসিকে লিজ দেওয়া হয়েছে। জমি হস্তান্তর হয়ে গিয়েছে। জমিতে বর্জ্য ফেলেছিল পুরসভা। তা সরানো হচ্ছে। ১৪ ডিসেম্বর প্রকল্পের ভিত পুজো হয়। কল্যাণবাবু বলেন, “প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হলে শহরের চেহারাটাই বদলে যাবে। ইতিমধ্যেই অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। কাজও শুরু হয়েছে।”
গঙ্গার ধার ঘেঁষে এক সময়ের ডেনিসদের উপনিবেশ শ্রীরামপুরে শহরের প্রাণকেন্দ্র অত্যন্ত জনবহুল। কিন্তু শহরে স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড নেই। ৩ নম্বর রুটের বাস দাঁড়ায় স্টেশন-সংলগ্ন জায়গায়। অন্য বাস দাঁড়ায় আদালত চত্বরে। শ্রীরামপুর থেকে বিভিন্ন রুটের বাস এবং ট্রেকার সেখানে দাঁড়ায়। রাস্তার উপরেই যত্রতত্র বাস দাঁড়ানোয় ঘিঞ্জি শহরের রাজপথে যেন তালগোল পাকিয়ে যায় নাগরিক জীবন।
তবে ওই জায়গায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস করার পরিকল্পনা নতুন নয়। ১৯৯১ সালে শ্রীরামপুরে এসে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছিলেন, পুরসভা জমির বন্দোবস্ত করলে তাঁর সরকার বাস টার্মিমাস তৈরি করে দেবে। এর পরে পশ্চিম শ্রীরামপুরে জায়গাটি বাস টার্মিনাসের জন্য চিহ্নিত হয়। কিন্তু ওই জমি নিয়ে আইনি জটে প্রকল্প পিছিয়ে পড়ে। এক সময়ে তৎকালীন স্থানীয় সাংসদ, প্রয়াত আকবর আলি খোন্দকার এলাকা উন্নয়ন থেকে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন বাসস্ট্যান্ড গড়ার জন্য। তৎকালীন রাজ্য সরকারও দিয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শেষ পর্যন্ত কিছু দিন আগে জমি পুরসভার দখলে এসেছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ইদানীং পুরসভার তরফে সরকারি স্তরে বিভিন্ন জায়গায় আবেদন জানানো হচ্ছিল বাসস্ট্যান্ডটি তৈরির জন্য। কিছুদিন আগে বিষয়টি জানতে পারেন এলাকার সাংসদ। মাস কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী এইচআরবিসি-কে ওই প্রকল্প তৈরি করতে বলেন। |