বালি ঘাট বাস স্ট্যান্ডে এসে নবান্ন যাওয়ার বাস খুঁজছিলেন বেলঘরিয়ার এক বাসিন্দা। এক কন্ডাক্টর তাঁকে জানালেন, বালি থেকে ও দিকে যাওয়ার সরাসরি কিছু নেই। হাওড়া গিয়ে ফের বাস ধরতে হবে।
উত্তরটা শুনে চমকে উঠেছিলেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু দীর্ঘ ৫০ বছরেও হাওড়া শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্তে যাওয়ার জন্য সরাসরি কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থা আজও তৈরি হয়নি! যদিও বালি থেকে শহরের দক্ষিণপ্রান্ত অর্থাৎ শিবপুরের দূরত্ব মাত্র ১৫ কিমি। এমনকী বালির দিক থেকে জেলা সদর, হাওড়া আদালত চত্বরে যাওয়ারও কোনও সরাসরি ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, বহুবার রাজ্য পরিবহণ দফতর, জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। রাজ্যে রাজনৈতিক পালা বদলের আগেও জনপ্রতিনিধিরা
আশ্বাস দিতেন ব্যবস্থা হবে। কিন্তু কিছুই হয়নি।
রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরে অবশ্য বালির তৃণমূল বিধায়ক তথা ভূতল পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান সুলতান সিংহ তাঁর নিজের দফতর থেকে ৬টি বাস বালিখাল থেকে শিবপুর বটানিক্যাল গার্ডেনের মধ্যে চালু করেছিলেন। কিন্তু মাত্র ২০ দিন চলার পরেই সেই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায় বলে তিনি নিজেই জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, “সমস্যাটা মারাত্মক। শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাওয়ার কিছু ব্যবস্থা নেই। তাই ৬টি বাস দিয়েছিলাম। কিন্তু রাস্তা সঙ্কীর্ণ হওয়ায় বড় বাসের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছিল। ফলে সময় মতো বাস না মেলায় যাত্রীও হচ্ছিল না।”
দক্ষিণ হাওড়া থেকে জিটি রোড ধরে এগোলে প্রথমে মধ্য, তার পর উত্তর হাওড়া হয়ে শহরের একেবারে শেষ প্রান্তে বালি। বাসিন্দাদের কথায়, বালি ও সালকিয়া থেকে হাওড়া স্টেশন হয়ে ধর্মতলা, শিয়ালদহর দিকে সরাসরি যাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি রুটের বাস চলাচল করে। কিন্তু একটি বাসও উত্তর দিক থেকে হাওড়া শহরের দক্ষিণ দিকে যায় না। ফলে সালকিয়া থেকে মাত্র ৫ কিমি দূরত্বে হাওড়া আদালতে যেতে হলেও স্টেশনে এসে ফের অটো কিংবা বাস ধরতে হবে। পাশাপাশি, শহরের উত্তর থেকে শিবপুর, আন্দুল, বি-গার্ডেন, মৌড়িগ্রাম, কোনা এক্সপ্রেসওয়ে, রামরাজাতলা, দাশনগর বা অন্য কোথাও যেতে চাইলে হাওড়া স্টেশনে চত্বর এসে নির্দিষ্ট গন্তব্যের বাস ধরতে হবে। একই রকম সমস্যা উল্টোদিকেও। অর্থাৎ মধ্য ও দক্ষিণ হাওড়া থেকে সালকিয়া, বেলুড় মঠ, দক্ষিণেশ্বর বা উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুরের দিকে যেতে হলেও একটি বা দু’টি বাস পাল্টে যেতে হবে।
ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্রেফ পরিকল্পনার অভাবেই বালি থেকে হাওড়ার দক্ষিণ প্রান্ত অর্থাৎ শিবপুরের দিকে বাস পরিষেবা চালু করা যায়নি। সুলতান সিংহ যে বাস চালু করেছিলেন তা-ও পরিকল্পনার অভাবেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘ ৩৪ বছরে না হলেও বর্তমান সরকার যেখানে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তকে পরিবহণের এক সুতোয় বাঁধতে চাইছেন, সেখানে কেন এখনও উত্তর থেকে দক্ষিণে কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হল না। তার উপর এখন রাজ্যের প্রশাসনিক কার্যালয় চলে এসেছে শহরের দক্ষিণ প্রান্তে, সেখানে কি এই যোগাযোগ ব্যবস্থা জরুরি নয়?
বালির বাসিন্দা, পেশায় আইনজীবী তথা হাওড়া-কলকাতা ট্রাফিক কমিটির চেয়ারম্যান অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, “শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন। পরিবহণ দফতরের উচিত বাসরুট চালু করা।”
প্রশাসনের সমস্ত মহলই সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। যেমন, উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক অশোক ঘোষ বলেন, “সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের প্রচণ্ড অসুবিধা হচ্ছে। বিষয়টি পরিবহণ দফতরে জানিয়েছি।”
পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “হাওড়ার রাস্তা সঙ্কীর্ণ ও খারাপ হওয়ায় বড় বাস চালানো শুরু হলেও তা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। তবে একটি বেসরকারি সংস্থাকে বলেছি যত শীঘ্র সম্ভব বালি-শিবপুর রুটে ১৫-২০টি ছোট বাস চালু করতে।” পরিবহণ দফতরের তরফেও নতুন রুটের পরিকল্পনা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী। |