নিতে অনীহা, পড়েই রয়েছে ট্যাক্সির পারমিট
রকারি ঘোষণাই সার। নতুন ট্যাক্সির পারমিট নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না কলকাতার মানুষ। কারণ, ট্যাক্সি চালিয়ে লোকসানের ঝুঁকিই বেশি।
সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতা শহরে দু’হাজার নতুন ট্যাক্সির অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। ৩০ সেপ্টেম্বর ছিল আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন। এর পরে দু’দফায় আবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। কিন্তু ২০ ডিসেম্বর তৃতীয় দফার শেষ তারিখ পেরিয়ে যাওয়ার পরে নতুন ট্যাক্সির জন্য আবেদন জমা পড়েছে মাত্র ১ হাজার ২৮০টি। পরিবহণ দফতরের কর্তাদের দাবি, ভাড়া বাড়াতে অনাগ্রহী সরকারের কাছ থেকে ট্যাক্সির পারমিট নিয়ে কেউই লোকসানের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।
পরিবহণ দফতরের কর্তাদের দাবি, এ রকম ঘটনা বেনজির। সাধারণত ট্যাক্সির পারমিট নেওয়ার জন্য প্রথম থেকেই আগ্রহীদের ভিড় চোখে পড়ে পরিবহণ অফিসের সামনে। আবেদনপত্র দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা ফুরিয়ে যায়। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে দু’হাজার ট্যাক্সির পারমিট দিতে আগ্রহীদের আবেদনপত্র জমা নেওয়া শুরু হয়েছে বেলতলার আঞ্চলিক পরিবহণ অফিসে। কিন্তু এ বারে সেই ভিড়টাই চোখে পড়ছে না। ফলে, ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে তিন মাস চেষ্টা চালিয়েও দু’হাজার ট্যাক্সির পারমিট দেওয়ার লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি সরকার।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, দু’হাজার ট্যাক্সির মধ্যে এক হাজার ট্যাক্সি হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। বাকি এক হাজার নন-এসি। ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নন-এসি ট্যাক্সির জন্য আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ৯০০। অন্য দিকে, এসি ট্যাক্সির জন্য আবেদন জমা পড়েছে মাত্র ৩৮০। পরিবহণ দফতরের এক কর্তার মতে, “আরও সময়সীমা বাড়িয়ে নন-এসির লক্ষ্যমাত্রা হয়তো কোনও রকমে পূরণ করা যাবে। কিন্তু এসি ট্যাক্সির লক্ষ্যমাত্রা কোনও অবস্থাতেই যে পূরণ হবে না, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।”
কিন্তু কী কারণে ট্যাক্সির পারমিট নিতে এত অনীহা?
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, সরকার যে পরিবহণ শিল্পে ভাড়া বাড়াতে অনাগ্রহী, সেই বার্তা ছড়িয়ে গিয়েছে। নতুন ট্যাক্সির দাম যেমন বেশি, তেমনই তার রক্ষণাবেক্ষণের খরচও এখনকার ট্যাক্সির চেয়ে অনেক বেশি। এসি ট্যাক্সির ক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতির খরচ আরও বেশি। এই অবস্থায় ডিজেলের দাম ফের বাড়লে ট্যাক্সি-মালিকদের লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে। নতুন ট্যাক্সি কিনে, ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে সেই ক্ষতির মুখোমুখি হতে সাহস পাচ্ছেন না কেউ। সে কারণেই নতুন ট্যাক্সির পারমিট নিতে অনীহা দেখা যাচ্ছে।
বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বিমল গুহর কথায়, “সরকার যে ভাড়া বাড়াবে না, সেই বার্তা ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে গিয়েছে। এখন যা ভাড়া, তাতে টেনেটুনে মালিকেরা সংসার চালিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু প্রতিনিয়ত জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। ইঞ্জিন অয়েল, বিমা সব কিছুরই খরচ বেড়ে গিয়েছে। নতুন ট্যাক্সির যন্ত্রাংশের দামও বেশি। এখন ৩-৪ টাকা ডিজেলের দাম বাড়লে আমাদের অবস্থা কিন্তু আরও খারাপ হবে।” বিমলবাবুর দাবি, “পুজোর আগে সরকার বাসের ভাড়া বাড়ালে দেখতেন, এত দিনে ট্যাক্সির পারমিট নিতে মালিকদের মধ্যে উৎসাহ বেড়ে যেত।” এক ট্যাক্সি-মালিক বলেন, “নতুন ট্যাক্সি কিনলে তো তার উপরে ঋণের কিস্তির বোঝা মাথায় চাপবে। এখন নতুন এসি ট্যাক্সির দাম প্রায় ৭ লক্ষ। নন-এসির দাম প্রায় ৫ লক্ষ। স্বভাবতই এই অবস্থায় এত বড় ঋণের বোঝা যেচে কোনও মধ্যবিত্ত পরিবার নিতে চাইছে না।”
ট্যাক্সির পারমিট নিয়ে মালিকদের অনাগ্রহের পিছনে ধর্মঘট নিয়ে সরকারের মুচলেকা নেওয়ার সিদ্ধান্তও একটি বড় কারণ বলে দাবি বিমলবাবুর।তিনি বলেন, “সরকারের শর্ত অনুযায়ী, ধর্মঘট না-করার হলফনামা দিতে সবাই ভয় পাচ্ছেন। কারণ, ধর্মঘটে জোর করে গাড়ি বার করতে গেলে যদি ভাঙচুর হয়, তাতে বিমা সংস্থাগুলি ক্ষতিপূরণ দেবে না। সে ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব কে নেবে! এই আশঙ্কা মালিকদের মধ্যে রয়েইছে।”
পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র অবশ্য এর পিছনে ভাড়াবৃদ্ধির কোনও সম্পর্ক নেই বলেই মনে করছেন। ট্যাক্সির পারমিট নিতে মালিকরা অনাগ্রহী বলেও মানছেন না তিনি। তাঁর মতে, “ট্যাক্সির ভাড়া নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। মাঝখানে পুজো পড়ে যাওয়ায় কিছু সমস্যা হয়েছিল। ট্যাক্সি নির্মাতারা মডেল তৈরিতেও কিছুটা দেরি করায় সমস্যা হয়েছে। আমরা খুব শীঘ্রই এই সব সমস্যা কাটিয়ে উঠব।”

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.