ট্যাক্সির পারমিট নেবে কে, বেলতলা ফাঁকা
লকাতা শহরে দু’হাজার নতুন ট্যাক্সির অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু তাতে কার্যত সাড়া মিলল না। আবেদনপত্র আহ্বানের সাত দিন কেটে যাওয়ার পরেও জমা পড়া আবেদনের সংখ্যা দু’শোও ছাড়ায়নি।
এই ‘অনাগ্রহ’ পরিবহণ-কর্তাদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে। ওঁদের একাংশের মতে, জ্বালানির দাম উত্তরোত্তর বাড়লেও গণ-পরিবহণের ভাড়াবৃদ্ধির প্রতি সরকারের অনীহা দেখে অনেকেই লোকসানের আশঙ্কায় পিছিয়ে আসছেন। এর সঙ্গে নতুন পারমিটের শর্ত হিসেবে ধর্মঘটে না-যাওয়ার যে লিখিত প্রতিশ্রুতি দাবি করা হচ্ছে, তারও ভূমিকা দেখছেন মহাকরণের কিছু কর্তা। রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র অবশ্য আশাবাদী। “এখনও তিন সপ্তাহ সময় রয়েছে। পারমিট নেওয়ার লোক ঠিক হাজির হবে।” প্রত্যয়ী মন্তব্য মদনবাবুর।
ট্যাক্সিচালকদের যাত্রী প্রত্যাখ্যানের (রিফিউজাল) সমস্যা মোকাবিলায় পরিবহণ দফতর চাইছে, আরও বেশিসংখ্যক ট্যাক্সি রাস্তায় নামুক। তাই স্থির হয়েছে, দু’হাজার নতুন ট্যাক্সির পারমিট দেওয়া হবে, যার অর্ধেক (এক হাজার) হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। প্রথমে বলা হয়েছিল, নতুন সব ট্যাক্সির রং করতে হবে নীল-সাদা। পরে পরিবহণমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, যাঁরা চাইবেন, তাঁরা ট্যক্সিতে এখনকার হলুদ রং-ও করতে পারেন। নতুন ট্যাক্সির পারমিট নিতে আগ্রহীদের থেকে আবেদনপত্র জমা নেওয়া শুরু হয়েছে গত ১ সেপ্টেম্বর, চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। পরিবহণ দফতর-সূত্রের খবর, প্রথম সপ্তাহে বেলতলার আঞ্চলিক পরিবহণ অফিসে এসি ট্যাক্সির পারমিট চেয়ে দরখাস্ত জমা পড়েছে ১৭টি। সাধারণ ট্যাক্সির জন্য ১৫৯টি।
অর্থাৎ, সব মিলিয়ে সাকুল্যে ১৭৬টি। যাকে ‘বেনজির’ হিসেবে অভিহিত করছেন পরিবহণ-অফিসারদের অনেকে। তাঁদের বক্তব্য: অতীতে প্রতি বার নতুন ট্যাক্সির পারমিট নেওয়ার জন্য প্রথম দিন থেকে আগ্রহীদের ভিড় জমতো বেলতলায়। আবেদনপত্র ফুরিয়ে যেত প্রায় চোখের নিমেষে। এ বার সেই ভিড়টাই চোখে পড়ছে না। যা অবস্থা, তাতে আদৌ সরকারের লক্ষ্যপূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দানা বেঁধেছে দফতরের অন্দরে। এবং এ হেন পরিস্থিতির জন্য একাধিক কারণকে দায়ী করা হচ্ছে। কী রকম?
দফতরের এক সূত্রের ব্যাখ্যা, “একটা বার্তা ছড়িয়ে গিয়েছে যে, রাজ্য সরকার বাস-ট্যাক্সির ভাড়া বাড়াতে চায় না। ফলে অনেকেই ভাবছেন, ডিজেলের দাম ফের বাড়লে ট্যাক্সি চালিয়ে লাভ তো দূর, লোকসানের মুখে পড়তে হবে।” দফতরের মধ্যেও এখন সেই প্রশ্ন উঠছে, ব্যাঙ্ক থেকে দেনা করে ট্যাক্সি কিনে মানুষ বাড়তি ক্ষতির বোঝা মাথায় চাপাতে যাবেন কেন? শহরের এক ট্যাক্সি-মালিকের কথায় একই সংশয়ের প্রতিধ্বনি। “এখনও আমরা টেনেটুনে চালিয়ে নিচ্ছি। কিন্তু দিন-দিন জিনিসপত্রের দাম যে ভাবে বাড়ছে, তাতে কত দিন পারব জানি না। এর উপরে ডিজেলের দাম তিন-চার টাকা বাড়লেও যদি ভাড়া না-বাড়ে, তা হলে তো নতুন ট্যাক্সি নিয়ে পথে বসতে হবে!” বলেন তিনি।
ট্যাক্সি-মালিক সংগঠন সূত্রের খবর: নতুন এসি ট্যাক্সির দাম প্রায় সাত লাখ টাকা। সাধারণ ট্যাক্সির অন্তত পাঁচ লাখ। স্বভাবতই অধিকাংশ মধ্যবিত্তের পক্ষে ঋণ না-নিয়ে অত টাকার সংস্থান করা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে প্রতি মাসে ঋণের কিস্তি গুনতে হবে। উপরন্তু জ্বালানি-মূল্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাড়া না-বাড়লে আর্থিক চাপ অসহনীয় হয়ে উঠবে মনে করেই সম্ভাব্য ট্যাক্সি-মালিকেরা পিছিয়ে আসছেন বলে সূত্রটির দাবি। সরকারি কর্তারাও তাঁদের আশ্বস্ত করতে পারছেন না। ডিজেলের দর চড়লেই ট্যাক্সিভাড়াও বাড়বে, এমন আশ্বাস সরকারি তরফে মিলছে না। এমনকী, খোদ পরিবহণমন্ত্রীও ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন।
এমতাবস্থায় সরকারের উপরে চাপ তৈরির জন্য তাঁরা যে আন্দোলনে নামবেন, সরকার সে রাস্তাও বন্ধ করে দিতে চাইছে বলে অভিযোগ ট্যাক্সি-মালিকদের একাংশের। এ প্রসঙ্গে তাঁদের আঙুল নতুন ট্যাক্সির পারমিট-শর্তের দিকে। সরকার এ বার এই মর্মে শর্ত জুড়েছে যে, নতুন ট্যাক্সির পারমিট নিতে গেলে মালিককে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, কোনও রকম ধর্মঘট-বন্ধ-হরতালে সামিল হয়ে তিনি গাড়ি বসিয়ে রাখতে পারবেন না। ট্যাক্সি-মালিক সংগঠনের একাংশের দাবি, ধর্মঘটে গাড়ি বার না-করলে যে পারমিট বাতিল করা হবে, এটা তারই প্রচ্ছন্ন হুমকি ছাড়া আর কিছু নয়। সংগঠনগুলির হিসেব অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে অন্তত ন’বার শুধু ট্যাক্সি ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। বাম আমলে চার বার, তৃণমূল জমানায় পাঁচ বার। বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের বিমল গুহ বলছেন, “ধর্মঘট মানুষের অধিকার। তা কখনওই কেড়ে নেওয়া যায় না। দরকারে আমরা কোর্টে যাব।”
ওঁদের ‘অবস্থান’ তাঁরা পরিবহণমন্ত্রীকে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি বিমলবাবুর। পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিপূরণের প্রশ্নও ওঁরা তুলছেন। “অনেকে ভাবছেন, বন্ধ-হরতালে গাড়ি বার করলে যদি ভাঙচুর হয়, তা হলে তো বিমার টাকা মিলবে না! তখন দায় কে নেবে? এমন সাত-পাঁচ ভেবে শর্ত মোতাবেক হলফনামা দিতে তাঁরা ভয় পাচ্ছেন। নতুন ট্যাক্সি নামানোর চাড় দেখা যাচ্ছে না।” মন্তব্য বিমলবাবুর।
বস্তুত পরিবহণ-কর্তাদের অনেকেও মনে করছেন, এই শর্তটি পারমিট গ্রহণে অনীহার মাত্রা বাড়িয়েছে। মন্ত্রী কিন্তু মালিকদের আশঙ্কাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। মদনবাবুর দাবি, বন্ধ-হরতালে গাড়ি ভাঙচুর হলে রাজ্য সরকারই আর্থিক দায় নেবে। “আমি তো আগেই বলেছি, ধর্মঘটে গাড়ির ক্ষতি হলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে। প্রয়োজনে আমরা বিমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ট্যাক্সি-মালিকদের বৈঠকও করিয়ে দেব।” আশ্বাস দিচ্ছেন পরিবহণমন্ত্রী। মন্ত্রীর মৌখিক আশ্বাসের উপরে অবশ্য মালিকদের বিশেষ ভরসা নেই। তাঁরা চাইছেন সরকারের তরফে লিখিত প্রতিশ্রুতি। তা দেওয়া হবে কি না, সে সম্পর্কে কোনও ইঙ্গিত এখনও দফতর-সূত্রে মেলেনি।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.