সম্পত্তির লোভে ১৩ বছরের শ্যালককে খুন করার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল জামাইয়ের। শনিবার জামাই নজরুল ইসলামকে এই সাজা শোনান রামপুরহাট আদালতের বিচারক। সরকারি আইনজীবী কল্যাণ বন্দোপাধ্যায় জানান, উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে নজরুলের বাবা নুরুল হককে বিচারক বেকসুর খালাসের নির্দেশ দিয়েছেন।
২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর রামপুরহাটের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের ঘটনা। ঘটনার দিন দুপুরে সাইকেলে করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিল জয়কৃষ্ণপুর হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রবিউল শেখ (আকাশ)। রাত অবধি না ফেরায় বাড়ির লোকজন তার খোঁজ শুরু করেন। কোথাও না পেয়ে বিষয়টি রামপুরহাট থানায় মৌখিক ভাবে জানান পরিবারের লোকেরা। পরের দিন রামপুরহাট স্টেশনের পশ্চিম কেবিন লাগোয়া রেল লাইনের ধারে একটি ফাঁকা মাঠে তার গলা কাটা ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হওয়ার পরে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়। প্রথম দিকে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে না পারায় বাসিন্দাদের একাংশ, রামপুরহাট হাসপাতাল মোড়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। পরে নিহতের দেহের পাশ থেকে মেলা মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে পুলিশ তদন্তে কিছুটা এগোয়। খুনের প্রমাণ মিলতেই নজরুলকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশের দাবি, নজরুল এবং তারা বাবা নুরুল দু’জনে মিলেই রবিউলকে খুন করে। দু’জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। নুরুল পলাতক ছিলেন। গ্রেফতারির ওয়ারেন্ট জারি হওয়ার পরে মাড়গ্রাম থানার পুলিশ নুরুলকে ধরে। পরে তিনি জামিন পান। বিচার চলাকালীন নজরুল জেল হাজতে ছিলেন।
দুই দিদির পরে রবিউলই ছিল পরিবারের একমাত্র ছেলে। তার বাবা আগেই মারা যান। মা আঞ্জুনারাই দুই মেয়ের বিয়ে দেন। বড় জামাই মাড়গ্রাম থানার প্রতাপপুরের বাসিন্দা নজরুল ছিলেন পেশায় শ্রমিক। জাতীয় সড়কের ধারে জয়কৃষ্ণপুর মৌজায় আঞ্জুনারা বিবির ২৩ কাঠা জমি আছে। পুলিশ ও নিহতের পরিবারের দাবি, ওই জমি হাতাতে একমাত্র শ্যালক রবিউলকে খুন করেছে ওরা। আইনজীবী কল্যাণবাবু জানান, তদন্তে প্রমাণ হয়েছে, ঘটনার দিন নজরুলই শ্যালককে রামপুরহাট-দুমকা রেল লাইন দেখানোর নাম করে ফোন করে ডাকেন। রামপুরহাট স্টেশনের পশ্চিম কেবিন লাগোয়া মাঠের কাছে নজরুল শ্যালকের সাইকেলটি রেখে দেন। জামাইবাবুর সঙ্গে রবিউল রেল লাইন ঘুরে দেখে। অন্ধকার নামতেই ওই কিশোরের হাত-পা বেঁধে মুখ চেপে টানতে টানতে ফাঁকা মাঠে নিয়ে যায়। প্রথমে চপার দিয়ে রবিউলের মাথার পেছনে আঘাত করে। পরে নজরুল রবিউলের বুকের উপরে বসে ছুরি দিয়ে গলা কেটে দেয়। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতও করে। স্বামীর সাজা শোনার পরে স্ত্রী সাকিনার প্রতিক্রিয়া, “যে আমার ওইটুকু ভাইকে নৃশংস ভাবে খুন করতে পারে, ওই ব্যক্তি আমাকেও খুন করতে দ্বিধা করবে না। তাই প্রথম থেকেই আমি তার কঠোর শাস্তি চেয়েছিলাম।” |