মাথায় ছাই-রঙা টুপি, এক গাল দাড়ি, পরনে মলিন সোয়াটার দারিদ্র আর বার্ধক্য একই সঙ্গে গ্রাস করেছে মার্কাসের চেহারাটাকে। গাড়ি থেকে নেমেই সহ-শিল্পীকে জড়িয়ে ধরলেন কার্লোস সান্তানা। বললেন, “তোমাকে এক বার দেখার জন্য ঈশ্বরের কাছে কত শত প্রার্থনা করেছি।” চল্লিশ বছর পরে দুই বন্ধুর দেখা। এক জনের দুনিয়াজোড়া নাম, জনপ্রিয় গিটারবাদক। অন্য জন ভাগ্যের ফেরে ভবঘুরে।
সালটা ১৯৬৮। ‘সান্তানা ব্লুজ ব্যান্ড’-এ ড্রাম বাজাতেন মার্কাস ম্যালোন। সান্তানাদের দলের তখনও অবশ্য অত নামডাক হয়নি। ওই বছরই কোনও এক অপরাধে কারাদণ্ড হয় তাঁর। স্যান কুয়েনটিন জেলে পাঠানো হয় মার্কাসকে। এর পর থেকে গানের দলের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তাঁর। মার্কাসের কেরিয়ার থেমে যায় ওখানেই। ইতিমধ্যে কার্লোসের আকাশছোঁয়া খ্যাতি। উডস্টক মিউজিক ফেস্টিভ্যালে প্রথম নজরকাড়া সাফল্য। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক সম্মান। ১৯৯৮ সালে রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেম পায় ম্যালোন-হীন ‘ব্যান্ড সান্তানা’। ২০০০ সালের পর আবার সুপার ডুপার হিট তাঁদের অ্যালবাম ‘সুপারন্যাচারাল’। বিক্রি হয় ১ কোটি ১৫ লক্ষ কপি।
সান্তানা কিন্তু পরে তাঁর হারানো বন্ধুকে অনেক খুঁজেছিলেন। কিন্তু প্রতি বারই ব্যর্থ হন। শেষে এক দিন টিভিতে একটা অনুষ্ঠান দেখে চমকে যান তিনি। শুরু হয় নতুন করে ম্যালোন-সন্ধান।
টিভি-র সেই অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা সাংবাদিক স্ট্যানলি রর্বাট। সম্প্রচারটি ছিল, ওকল্যান্ডে পথের ধারে গজিয়ে ওঠা একের পর এক বেআইনি ঝুপড়ি নিয়ে। রবার্ট দেখেন আস্তাকুঁড়ে কী যেন খুঁজছেন লাল আলখাল্লা পরা এক বৃদ্ধ। প্রশ্ন করায় বৃদ্ধ বলেন, এই আস্তাকুঁড়েই একটা ফেলে দেওয়া জিন্সের পকেটে তিনি এক বার ৮০০ ডলার পেয়েছিলেন।
রবার্ট তখনও জানেন না বাক্যালাপ কোথায় গিয়ে থামবে। কথায় কথায় বৃদ্ধের অতীত সম্পর্কে জানতে চান রর্বাট। প্রকাশ্যে আসে সত্য। বৃদ্ধ জানান, তিনিই সেই সান্তানার গানের দলের ‘মার্কাস দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট’।
মার্কাস জানান, জেল থেকে বেরিয়ে সে ভাবে কোনও কাজ পাননি। রাস্তাতেই থাকতে শুরু করেন। ক্রমে পথের ধারে ঝুপড়িটাই হয়ে ওঠে তাঁর আস্তানা। রর্বাটরা অবশ্য তাঁর বলা কথাগুলো পুরোপুরি বিশ্বাস করেননি। যদিও মার্কাসের অংশটা দেখানো হয়েছিল টিভিতে। সৌভাগ্যক্রমে যা নজরে পড়ে যায় সান্তানার।
সান্তানা নিজেই ছুটে এসেছিলেন ওকল্যান্ডে। মার্কাসের হাত ধরেই তো সঙ্গীত জীবনের শুরু। আতিপাতি করে খোঁজেন বন্ধুকে। কিন্তু এ বারেও ব্যর্থ। শেষে সান্তানার ম্যানেজারের সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ হয়ে যায় রবার্টের। শিকে ছেড়ে এ বারই।
গত শুক্রবার ফের ওকল্যান্ডের সেই পিয়েরমেন স্ট্রিটে আসেন রবার্ট। যেখানে প্রথম বার মার্কাসের দেখা পেয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে মার্কাসের পুরনো বন্ধু কার্লোস সান্তানা এবং এক রাশ খুশির খবর। ক্যামেরা নিয়ে তৈরিই ছিলেন রবার্ট। কালো রঙের ফোর্ড থেকে নেমে এলেন সান্তানা। “ও ম্যান!” মার্কাসের গলায় তখন একই সঙ্গে ঝরে পড়ছে আনন্দ ও বিষাদ। দু’হাত বাড়িয়ে বন্ধুকে জরিয়ে ধরলেন সান্তানা “মার্কাস তোমার কথা সব সময় মনে পড়ত।”
বহু সেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত সান্তানা। এ হেন মানুষটা বন্ধুকে ওই ঝুপড়িতে ফিরতে দেবেন না, আশা সকলেরই। নামজাদা গানের দলের ড্রামার থেকে কয়েদি। শেষে কাগজ-কুড়ানি, ঝুপড়িবাসী। তাঁর জীবনবৃত্ত সম্পূর্ণ হবে কি না, পুরনো জায়গা ফিরে পাবেন কি না মার্কাস ম্যালোন, জানে শুধু সময়। |