প্রায় দেড় মাস হরতাল-অবরোধের জেরে দু’রকম চিত্র বাংলাদেশের শহরে আর গ্রামের বাজারে। শাকসব্জি-মাছের আকাল রাজধানী ঢাকার বাজারে। যেটুকু মিলছে, মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। আবার শহরের বড় বাজারে পাঠাতে না পেরে জলের দরে শাকসব্জি বেচে দিয়ে মাথা চাপড়াচ্ছেন যশোর, খুলনা, কুষ্ঠিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, চুয়াডাঙার কৃষকরা। ফলে ঢাকার শান্তিনগর, খিলাগাঁও বা কাপ্তানবাজারে যে সিমের দাম কিলোপ্রতি ৭০-৮০ টাকা, যশোরের বারিনগর বাজারে তা এক-দেড় টাকা। গ্রামের বাজারে ৩৫ পয়সা কিলো দরে যে মুলো বিকোচ্ছে, ঢাকায় তা ৫০ টাকা। রাজধানীতে যে ফুলকপি জোড়া ৭০-৮০ টাকা, মাগুরায় তা ৬-৮ টাকা। চালের দাম অবশ্য গোটা দেশেই রকেট গতিতে চড়ছে। ৪৮-৫৫ টাকার নীচেয় কোনও চাল নেই। আগুন তেলের দামও। এক সপ্তাহে বেড়েছে কিলোতে ৩০ টাকা।
বাজার থেকে ফিরে মাথা চাপড়াচ্ছেন গৃহিনী শাহনাজ পারভীন, “শীতের সব্জি ওঠায় এই সময়ে কোথায় দাম কম থাকবে, তা নয় শাকসব্জিতে হাত ছোঁয়ানোই দায়। মাঝারি সাইজের ফুলকপি বলে ৮০ টাকা জোড়া। শুধু পেঁয়াজের দাম একটু কমেছে। ১৪০ টাকা থেকে নেমে ১০০-য়।” কাওরান বাজার ও যাত্রাবাড়ি মহানগরের পাইকারি সব্জি ও মাছের বাজার, সারা বছর হাজার লোকের সমাগমে থাকে গমগমে। এখন সেখানে পণ্যও নেই, নেই খরিদ্দারও। কর্মহীন মুটেরা দঙ্গল পাকিয়ে তাস খেলছেন। কচ্চিত ট্রাক এসে পৌঁছলে মাছির মতো ভিড় করছেন আশপাশে, যদি মাল বওয়ার সুযোগ মেলে। যার সঙ্গে তাস খেলছিলেন, তার সঙ্গে তখন হাতাহাতি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকার বাজারে মাল আনার ভরসা পাচ্ছেন না তাঁরা। ট্রাকের ভাড়া যেমন সাধ্যের বাইরে চলে গিয়েছে, তেমনই রাস্তায় যে কোনও সময়ে আবরোধকারীদের তাণ্ডবের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। কোনও কথা না শুনে গাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছে পেট্রোল বোমা মেরে। এক ব্যবসায়ী বললেন, তার পরেও প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে গ্রামের বাজার থেকে দু-এক ভ্যান সব্জি ঢাকার বাজারে আনতে পারলে ভাল লাভ মিলছে। “কিন্তু এ ভাবে কি চলে? মানুষ খাবে কী, আমরাই বা কী খাবো,” পাল্টা প্রশ্ন তাঁর। স্বগতোক্তি করেন ব্যবসায়ী, “কে রাজা হবে তা নিয়ে মানুষের কোনও লাভ নেই। অথচ পুড়ে মরতে হচ্ছে তাদেরই।”
বিএনপি-জামাত জোটের বেহিসেবি হরতালে সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়ারা। পাঁচ ছ’বার করে পিছিয়ে কোনওক্রমে শেষ হয়েছে অধিকাংশ স্কুল-কলেজের বাৎসরিক পরীক্ষা। অবরোধেও প্রাণ হাতে করে পরীক্ষা দিতে গিয়েছেন তাঁরা। জামাতের জঙ্গিরা স্কুলভ্যান লক্ষ করেও দেদার বোমা ছুড়েছে। শিক্ষামন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করার জন্য স্কুলগুলিকে বলা হয়েছে, যাতে জানুয়ারির সেশন সময়ে শুরু করা যায়। কিন্তু ভোটের পর ফের হরতাল-অবরোধ শুরু হলে ভর্তি প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। |