বড়দিন মানেই ‘ক্রিসমাস ট্রি’, সান্তাক্লজ, রকমারি আলো আর অতি অবশ্যই কেক। এমনকী বাকিগুলো হোক না হোক ভেতো বাঙালিরও বড়দিনটা কেক ছাড়া আর জমে না।
শিল্পাঞ্চলের দুই শহরেও শপিং মলের বাইরে, ফুটপাথ জুড়ে ছোট ছোট দোকান করে ক্রিসমাসের নানা রকমারি জিনিস নিয়ে পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। ছোট ছোট সান্তাক্লজ পুতুল যেমন বিকোচ্ছে, তেমনই শপিং মলে ঠাসা রয়েছে বড় বড় সান্তার পুতুলও। বিশেষত, সপ্তাহান্তে বাবা-মায়ের হাত ধরে ইচ্ছেপূরণকারী সান্তাকে ঘরে নিয়ে যেতে ভিড় জমিয়েছে খুদেরা। সঙ্গে ‘ক্রিসমাস ট্রি’ সাজাতে রকমারি থলে, কাগজের চেন, চকোলেটেরও চাহিদা রয়েছে দেদার। |
আসানসোলে তৈরি হচ্ছে কেক। ছবি: শৈলেন সরকার। |
তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে কেকের। ফ্রুট কেক, পাম কেক, চকোলেট কেক থেকে শুরু করে এগলেস কেক ও নানা ধরণের পেস্ট্রির জোগান দিতে হিমশিম দশা দোকানিদেরও। দুর্গাপুরের সিটিসেন্টার, বিধাননগর, বেনাচিতি-সহ নানা বাজার ঘুরে দেখা গিয়েছে, সবচেয়ে বেশি চাহিদা পাম কেকের। তারও আবার নানা বৈচিত্র্য রয়েছে। যেমন, ফেসটিভ পাম কেক, সেলিব্রেশন পাম কেক, রিচ পাম কেক ইত্যাদি। এছাড়া কুইন কেক, চকোলেট মাফিনের বাজারও এই সময় বেশ বেড়ে যায়। সিটি সেন্টারের একটি কেকের দোকান মালিক শেখ আলাউদ্দীন তো সাফ বলেই ফেললেন, “কেকের চাহিদা প্রতি বছর বাড়ছে।” তার সঙ্গে প্যাটিস, চিলি চিকেন রোল, স্যান্ডুইচও দেদার বিকোচ্ছে বলে জানান তিনি। শহরের স্টেশন বাজার লাগোয়া এলাকায় ১৯৬৫ সাল থেকে কেকের দোকান চালাচ্ছেন মহম্মদ আলি। দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম প্রসিদ্ধ কেক প্রস্তুতকারী দুর্গাপুরের একটি সংস্থার কেক বিক্রি করেন তিনি। তিনি বলেন, “৯০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত নানা ধরনের কেক রয়েছে সম্ভারে।” এছাড়া চকো বল, হোয়াইট ফ্রস্ট, ব্ল্যাক ফ্রস্ট, টুইন রোল, স্প্রিং কেকের চাহিদাও রয়েছে। |
দুর্গাপুরের একটি দোকানে বেচাকেনা। ছবি: বিশ্বনাথ মশান। |
কিন্তু পাম কেকের এত জনপ্রিয়তার কারণ কী? এক বেকারি শিল্পী জানালেন, আমন্ড, কাজু, কিসমিস জাতীয় ফল দিয়ে তৈরি কেকের উপকরণ এক মাস ধরে ওয়াইনের মধ্যে ভিজিয়ে রাখা হয়। তবেই আকর্ষণীয় স্বাদ, গন্ধ আসে। এরপর তৈরি হয় কেক। আবার ফ্রুট কেক তৈরিতে ওয়াইনকে কেক থেকে অনেক দূরে রাখা হয়। নানা ধরনের ফলই এর মূল উপাদান।
আসানসোলের মহম্মদ শাহনাজ আনোয়ার নামে এক বেকারি মালিকও জানান, বড়দিন খুশির উত্সব। তাই এই উত্সবে কোনও মানুষ যেন কেক থেকে বঞ্চিত হন সেটা খেয়াল রাখেন তাঁরা। তিনি বলেন, “রেস্তোয় যাতে টান না পড়ে সে জন্য ৪০ টাকা থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকারও কেক বানানো হয়েছে। ইদানিং দেখা যাচ্ছে, বহু মানুষ নিরামিষাশি। সেজন্য নিরামিশ কেকও বানানো হয়েছে।”
আরেক বেকারির মালিক কাসেম ওয়াহিদ বলেন, “সারা বছর ফ্রুট কেক বিক্রি হয়। কিন্তু শীতের এই সময়ে চকোলেট কেকের বিক্রি বেশি। তাই চকোলেট কেকই বানানো হয়েছে।” রয়েছে বিভিন্ন ধরণের বিস্কুট, কুকিজও। কেকের চাহিদা সামাল দিতে সামাল দিতে উত্তরপ্রদেশ থেকে কেক তৈরির কারিগর আনা হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত বেকারি থেকে পাইকারি হারে কেক বিক্রি করা হচ্ছে। মঙ্গলবার থেকে রিটেল কাউন্টার করে বিক্রি করা হবে বলেও জানিয়েছেন কাসেম ওয়াহিদ। শহরের হোটেলগুলিতেও প্রস্তুতি চলছে। দুর্গাপুরে একটি হোটেলে বড়দিনে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ‘ইয়ুল লগ’। ‘ক্রিসমাস ট্রি’র ধাঁচে কেক সাজিয়ে রাখা হয়। ফ্রান্সে প্রচলিত এই পদ্ধতি অনুসরণে দুর্গাপুরের অনেক হোটেলই বড়দিনে এমন আয়োজন করে। |