কন্যাশ্রীর আবেদন পত্রের জন্য শংসাপত্র নিতে এসেছে নুসরত্ পারভিন ও নুরসামা বেগম। কিন্তু যিনি দেবেন, সকাল ১১টাতেও দফতরে পা পড়েনি তাঁর।
দফতরের একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি জমা দিতে এসে সওয়া ১১টাতেও চিঠি গ্রহণ কেন্দ্র খোলা পেলেন না আরপিএফ ইনস্পেক্টর প্রশান্ত ভট্টাচার্য।
নাতির জন্মের শংসাপত্র নিতে এসেছেন সৌকত আলি। সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দাঁড়িয়েও ওই দফতরের কর্মীর দেখা পেলেন না তিনি। ট্রেড লাইসেন্সের আবেদনপত্র নিতে এসেছেন কুণালপ্রসাদ গৌতম। সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দফতরের কারও দেখা না পেয়ে দাঁড়িয়ে তিনিও।
অনগ্রসর জাতির শংসাপত্র নিতে এসে পৌনে ১২টাতেও কর্মীর দেখা পাননি আকিব জাভেদ।
বার্ধক্য ভাতার আবেদন জমা দিতে এসে দুপুর ১২টাতেও আধিকারিকের দেখা পেলেন না মধুবালা মাজি।
কুলটি পুরসভা নিয়ে এ ধরণের অভিযোগ নতুন নয়। বাসিন্দারা বারবার কাজের সময়ে কর্মী না থাকা, আধিকারিক না থাকা নিয়ে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু লাভ বিশেষ হয়নি। তাঁদের দাবি, বেনিয়মটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। |
শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৫, ভিড় জমতে শুরু করেছে কুলটি পুরসভার বাইরে। |
কার্যনির্বাহী আধিকারিক থেকে উপপুরপ্রধান সকলেই অবশ্য মেনেও নিয়েছেন অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, অনেক কড়াকড়ি করেও বাগে আনা যাচ্ছে না কর্মীদের।
যেমন, শুক্রবার সকাল পৌনে ১০ টায় পুরসভায় গিয়ে দেখা গিয়েছে দফতরের প্রধান দরজা খোলা। একাধিক দফতরের দরজাও খোলা। চেয়ার টেবিলের ঝাড়পোচও সারা। দফতরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী লক্ষ্মী রুইদাস জানান, রোজই সকাল ৮টা নাগাদ এসে এসব কাজ করে রাখেন তিনি। কিন্তু দফতর তো খোলে ১০টায়? তিনি বলেন, “বাবুরা বলেছেন, সকালেই খুলে দিবি। কেউ এলে বলবি, এখনও কেউ আসেনি।” তা বাবুরা কাজে কখন আসেন? লক্ষ্মী বলেন, “এই শীতে সাড়ে ১১টার আগে কেউ আসবে বলে মনে হয় না।” |
|
|
১০টা ৪০, একাই বসে উপ-পুরপ্রধান বাচ্চু রায়। |
১০টা ৫০, তখনও তালা ঝুলছে অফিস ঘরে। |
|
তাঁর কথার সত্যতা বোঝা গেল খানিক পরেই। নাতির জন্মের শংসাপত্র নেওয়ার জন্য আসা সৌকত আলির অভিযোগ, “দু’দিন ধরে ঘুরছি। কর্মীদের দেখা পাচ্ছি না। আজও এখনও কেউ আসেননি।” এর মধ্যেই পুরসভায় ঢুকলেন উপপুরপ্রধান বাচ্চু রায়। নিজেই দফতর ঘুরে দেখলেন তিনি। চেয়ার টেবিল ফাঁকা, কোনও কর্মীর দেখা নেই। ততক্ষণে পুরসভার বাইরে বিভিন্ন পরিষেবা পেতে নাগরিকদের ভিড় জমে গিয়েছে। বাচ্চুবাবুকে প্রশ্ন করা হল, এই অবস্থা কেন? বাচ্চুবাবুর জবাব, “এই দফতর আমিই দেখি। অনেকবার কড়াকড়ি করেছি। কিন্তু পারছি না। ওরা একজোট হয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি করে যে পুরসভার সাধারণ কাজকর্ম চালানোই দায় হয়ে পড়ে।”
সাড়ে ১০টা নাগাদ কন্যাশ্রীর আবেদনপত্রের জন্য পুরসভায় শংসাপত্র নিতে এসেছিল নুসরত্ পারভিন ও নুরসামা বেগম। তারা বলে, “এক ঘন্টা বসে আছি। যিনি দেবেন তিনি আসেননি।” খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ছোটেলাল সাউ নামে এক কর্মী এই কাজটি করেন। তিনি যখন পৌঁছলেন ঘড়ির কাঁটা তখন পৌনে ১২ টার ঘরে। দেরি কেন? তিনি বলেন, “রোজ হয় না। আজই দেরি হয়ে গেল।” |
সকাল সাড়ে ১১টা, তখনও এসে পৌঁছননি সাধারণ বিভাগের আধিকারিক। |
রেল নিরাপত্তা বাহিনীর এসআই পদমর্যাদার অফিসার প্রশান্ত ভট্টচার্য সাড়ে ১১টা নাগাদ একটি চিঠি দিতে এসে দেখেন, সংশ্লিষ্ট দফতরে কেউ নেই। দরজায় তালা। প্রশান্তবাবুর অভিযোগ, “কাউকে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছি।” সাড়ে ১১টা নাগাদ দেখা গেল, জন্ম -মৃত্যুর শংসাপত্র নিতে লম্বা লাইন পড়েছে। অথচ কোনও কর্মী নেই। জানা গেল, এই দফতরের প্রধান রামেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনও আসেননি তিনি। ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি পুরসভার কাজে বাইরে আছি। আমার এক অধস্তন কাজগুলি করে দেবে।” পৌনে ১২টায় দেখা গেল, হারাধন কাঁঠাল নামে এক কর্মী ফাইলবন্দি কাগজপত্র নিয়ে বসলেন। দেরি কেন জিজ্ঞাসা করায় বললেন, “এটাই তো সময়।”
পুরসভার কর বিভাগ, সাধারণ বিভাগ, নিকাশি বিভাগ-সবর্ত্র একই ছবি। দেরিতে আসা আর তাড়াতাড়ি যাওয়া, এটাই যেন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব কিছু শোনার পরে মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস বলেন, “সব জানি। জেলার আধিকারিকেরাও সব খবর জানেন। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও খবর পৌঁছেছে বলে শুনেছি।” |
ছবিগুলি তুলেছেন শৈলেন সরকার। |