জাতীয় স্তরের মূক ও বধির তরুণী অ্যাথলিটকে ধর্ষণের ঘটনায় দোষী অটোচালককে ১০ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল রায়গঞ্জের ফাস্ট ট্র্যাক আদালত। শনিবার ফাস্ট ট্র্যাক প্রথম আদালতের বিচারক তপনকুমার মণ্ডল ওই সাজা ঘোষণা করেছেন। সাজাপ্রাপ্তকে ৫ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে সাজার মেয়াদ তিনমাস বাড়ানোর নির্দেশ দেন বিচারক। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, সাজাপ্রাপ্ত ওই যুবকের নাম রণজিত্ দাস। উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ থানার বারুইবাড়ি এলাকার বাসিন্দা রণজিত্ দাসের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে এক অ্যাথলিটকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়।
সরকারি আইনজীবী জরিফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “জাতীয় স্তরের অ্যাথলিট ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেছে বলে আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। হেমতাবাদ থানার তত্কালীন ওসি অভিজিত্ দত্ত ও এই মামলার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার রাণা সাহা দ্রুত তদন্ত করায় দেড় বছরের মধ্যে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করল আদালত। চিকিত্সক, পুলিশ ও বাসিন্দা মিলিয়ে ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে আদালত। শুক্রবার অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।” সাজাপ্রাপ্তের আইনজীবী আশিস সরকারের দাবি, ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর বিভিন্ন মহলের প্রচারমূলক আন্দোলনে প্রভাবিত হয়ে আদালত রণজিতকে বিনাদোষে দোষী সাব্যস্ত করেছে। তিনি বলেন, “রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়া হচ্ছে।”
২৫ বছর বয়সী মূক ও বধির অ্যাথলিট ২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে মাদুরাই, শিলিগুড়ি, ঝাড়খণ্ড, দিল্লি, বর্ধমান ও রায়গঞ্জে রাজ্য ও জাতীয় স্তরের বিভিন্ন অ্যাথলেটিক প্রতিযোগিতায় দৌড় ও লংজাম্প সফল হয়ে ৩০ টি সোনা ও ১৫ টি রুপোর পদক জয় করেন। ওই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে উত্তর দিনাজপুর জেলাজুড়ে আন্দোলন শুরু করে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও প্রতিবন্ধীদের সংগঠন সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
আদালত সূত্রের জানা গিয়েছে, ২০১২ সালের ২৪ জুন মূক ও বধির ওই তরুণী রায়গঞ্জে বই-খাতা কিনতে গিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি ফেরার জন্য শহরের শিলিগুড়িমোড় থেকে হেমতাবাদগামী একটি অটোতে ওঠেন। বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার নাম করে অটো চালক স্থানীয় একটি শালবাগানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। এর পরে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাতভর আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। অভিযোগের ভিত্তিতে পরদিনই অটো চালককে গ্রেফতার করে এক মাসের মাথায় চার্জশিট দেয় পুলিশ। তার পর থেকেই আদালতের নির্দেশে জেল হেফাজতে ছিল অভিযুক্ত রণজিত্ দাস। সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, সাজা ঘোষণার পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে রাজ্য সরকারকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ওই তরুণীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। |