আজ পর্যন্ত যেটা কোনও দিন হয়নি, প্রোটিয়াদের সেই কাজটাই এ বার করে দেখাতে হবে। সত্যি বলতে কী, এর পর যদি বুলরিং থেকে অক্ষত অবস্থায় বেরোতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা, তা হলেও ওদের প্রশংসা করতে হবে। ওদের গর্ব দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। নিজের ডেরাতেই সিংহরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বিশ্বের সেরা টেস্ট দল পালিয়ে বাঁচতে বাধ্য হচ্ছে!
বিদেশের মাটিতে ভারতের দারুণ পারফরম্যান্সের উদাহরণ নেই, এমন নয়। কিন্তু ভারতের এই টিমটার মতো তরুণ দল স্টেইন অ্যান্ড কোম্পানির মতো অপ্রতিরোধ্য বিপক্ষকে তাদের ঘরের মাঠেই বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে এ রকম উদাহরণ খুব বেশি পাবেন না। সবাই ভেবেছিল ভারতকে নিজেদের নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে। তার জায়গায় কী হচ্ছে? না, শিকারি পশুর দাঁত-নখই অকেজো হয়ে পড়ছে। |
মর্কেলের গোড়ালির এখন যা অবস্থা। শনিবার নিজেই
এই ছবি টুইট করলেন দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার। |
কোনও এক বিরাট কোহলি একা প্রোটিয়াদের যথেষ্ট যন্ত্রণা দিচ্ছিল। এ বার তার সঙ্গে যোগ হল চেতেশ্বর পূজারা। ‘ডাবল ট্রাবল’ আর কাকে বলে! সৌরাষ্ট্রের তরুণ ব্যাটসম্যানের প্রশংসা না করে পারছি না। কোহলির মতো ও-ও যে অমূল্য, সেটা প্রমাণ করে দিল পূজারা। ক্রিজে পূজারা কী অদ্ভূত রকম শান্ত থাকতে পারে। এক বারও তাড়াহুড়ো করে না। সব সময় বলটাকে নিজের ব্যাটে আসার যথেষ্ট সময় দেয়। এর সঙ্গে যোগ করুন রান করার এমন একটা খিদে, যা মেটানো প্রায় অসম্ভব। আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, কোহলি আর পূজারা ক্রিকেটের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিসেবে কেরিয়ার শেষ করবে।
মুরলী বিজয়কেও ভুলে গেলে চলবে না। দ্বিতীয় ইনিংসে ও যে রকম নিঃস্বার্থ ভাবে নতুন বলটাকে ভোঁতা হতে দিল, তার প্রশংসা করতেই হবে। দক্ষিণ আফ্রিকা তখন বিপক্ষ ব্যাটিংয়ে চিড় ধরানোর জন্য মরিয়া হয়ে বল করছিল। কিন্তু ভারতের দ্বিতীয় উইকেটের জুটির গড়া পাথরের দেওয়ালে বারবার ধাক্কা খেতে হল ওদের। এই ভিতটার উপর ভর করেই তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে পূজারা-কোহলি দুর্দান্ত খেলল। আর দিনের শেষ সেশনে মিলিত ভাবে ১৭৫ রান করে ফেলল।
তাই বলে ভাববেন না আমি তরুণ ব্যাটসম্যানদের প্রতি পক্ষপাতী। টিম ইন্ডিয়ার ফাস্ট-মিডিয়াম পেসার ত্রয়ীর জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। জাহির খান রাজকীয় ভাবে বল করল। ইশান্ত শর্মাকে দেখে মনে হল যেন এক পেসারের পুনর্জন্ম দেখছি। আর মহম্মদ শামি যেন একটা তরুণ ঘোড়া, যে ভাবমূর্তি নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নয়। এই তিন জনের সামনে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকানদের দেখে মনে হল ওদের ঠিকঠাক টেকনিক বা ফুটওয়ার্ক কোনওটাই নেই। ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকান বোলাররা যত না রিভার্স সুইং করাল, তার চেয়ে বেশি রিভার্স সুইং পাচ্ছিল ভারতীয় পেসাররা। আর শামি-ইশান্তদের লাইন-লেংথও বিপক্ষ বোলারদের চেয়ে অনেক বেশি ভাল ছিল।
ভারতীয়দের দিক থেকে এখন পর্যন্ত ব্যাপারটা গেম আর সেট-এ দাঁড়িয়েছে। যদি শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা ওদের দিকে না-ও যায়, ভারত আর একমাত্র ভারতই মাথা উঁচু করে ডারবানের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। |