|
|
|
|
|
আফ্রিকার চেনা পিচে বেসামাল স্মিথরাই |
রিভার্স আর শর্ট হোক আজ
আফ্রিকা-বধে ধোনির স্ট্র্যাটেজি
অশোক মলহোত্র |
|
রবিবার জোহানেসবার্গে ভারত জিতছে? না, জিতছে না? আজ যাঁরা ম্যাচটা দেখলেন তাঁরা মনে হয় খুব সংক্ষেপে উত্তরটা জানতে চান। তৃতীয় দিন ভারত যে ভাবে শেষ করেছিল, শনিবার অত অ্যাডভান্টেজ রেখে মাঠ ছাড়ল বলা যাবে না। সাড়ে চারশোর উপর রান তাড়া করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার পড়েছে দু’টো উইকেট, আসল ব্যাটিংয়ের পঁচাত্তর শতাংশ এখনও বাকি, হাতে একটা দিন টেনশন হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু ভারত যদি টেনশন না করে, যদি মাথা ঠান্ডা রেখে বোলিংটা মন দিয়ে করে, ম্যাচটা দক্ষিণ আফ্রিকা বাঁচাতে পারবে না। টি ব্রেক বা তার পরে ম্যাচটা শেষ হবে। ভারত জিতবে। |
স্মিথের রান আউটের উচ্ছ্বসিত সাক্ষী অশ্বিন। |
কেন বলছি? কয়েকটা কারণ দিই। দক্ষিণ আফ্রিকা এখন ১৩৮ ঠিক, কিন্তু এটাও ঠিক যে ওদের রিভার্স সুইংয়ের সামনে স্বচ্ছন্দ দেখাচ্ছে না। অনেকে বলতে পারেন, ভারত কপালজোরে উইকেট দু’টো পেল। স্মিথ রান আউট। আমলা অদ্ভুত ভাবে ডাক করতে গিয়ে বোল্ড। বিশেষ করে শামির বলে আমলাকে ও ভাবে আউট হতে দেখে অনেকেই বিস্মিত। কিন্তু এখানে বলি, শামি উইকেটটা কপালজোরে পায়নি। জো’বার্গের উইকেট ডাবল পেসড। শর্ট বল করলে ব্যাটসম্যানের বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে কোনটা ছাড়বে আর কোনটা হুক করবে। আমলা ওই অনিশ্চয়তায় ভুগেই বোল্ড হল। ও ভেবেছিল শর্ট বলটা স্টাম্পের উপর দিয়ে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু বলটা অতটা উঠল না, নিচু হয়ে বসে পড়া আমলার গলার পাশ দিয়ে অফস্টাম্প উড়িয়ে দিল! আরও বলব, আমলা বা স্মিথ কেউ শামিদের রিভার্স সুইং ধরতে পারেনি। রবিবার সকালে জাহিররা রিভার্সটা ঠিকঠাক করাতে পারলে, মাঝে মাঝে শর্ট দিয়ে ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করে দিতে পারলে না জেতার কারণ নেই। |
মাত্র চার রানের জন্য দু’ইনিংসে সেঞ্চুরির ইতিহাস গড়া হল না কোহলির। |
কোহলি কথা |
‘...সেঞ্চুরিটা না পাওয়ায় একটু হতাশ তো বটেই। তবে যে ভাবে খেলেছি তাতে খুশি। ঠিক করেই নেমেছিলাম খুব ধৈর্য ধরে খেলব। দুর্ভাগ্য ব্যাটের কোনায় লেগে ক্যাচ উঠে গেল। তবে এখানে ব্যাট করা দারুণ উপভোগ করছি। ওদের বোলাররা আমাকে ওয়ান ডে-তে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল। তার জবাব টেস্টে দেওয়ার জন্য মানসিক ভাবে নিজেকে তৈরি করেছিলাম। জানতাম ওরা শর্ট বল দিয়ে চমকানোর চেষ্টা করবে। তাই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছিলাম। এটা দেখিয়ে দেওয়া জরুরি ছিল যে আমরাও এখানে লড়তে এসেছি। তার জন্য আমার একটা প্ল্যানিং ছিল। সেই প্ল্যান মাফিক খেলে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। ব্যাটিংয়ের সব থেকে বড় অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে হয়েছে বল ছাড়ার ক্ষেত্রে। বিশেষ করে অফ স্টাম্পের উপরে বাউন্স করে আসা বল। পূজারার সঙ্গে পার্টনারশিপটা অসাধারণ। পূজারা তিন নম্বরে দারুণ ব্যাটই শুধু নয়, ওর মানসিকতাও অসাধারণ। আমরা ব্যাট করার সময় একে অন্যকে জিজ্ঞেস করছিলাম, যে বলটায় বিট হচ্ছি, সেটার লাইনে গিয়ে খেলেছি কি না। অফস্টাম্পের বাইরে কভার ড্রাইভের মতো শট না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম...’ |
|
আমি মানছি, ওদের যে ব্যাটিং বাকি, তারা ছ’সাত ঘণ্টা ব্যাট করে কাটিয়ে দিতে পারে। এখনও এ’বি ডে’ভিলিয়ার্স, কালিস, দু’প্লেসি আছে। স্টেইন-ফিলান্ডারও খারাপ ব্যাট করে না। কিন্তু ম্যাচটা ওদের বাঁচাতে হলে ভাল রকম কাঠিন্য দরকার। যেটা ওদের থেকে এখনও খুব বেশি পাচ্ছি না। এই যে দ্বিতীয় ইনিংসে কালিসকে ওরা চার নম্বরে নামাল না, দু’প্লেসিকে পাঠিয়ে দিল সেটার দু’টো মানে হয়। এক, ওরা কালিসকে দিনের শেষ দিকে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে। আর দুই, রিভার্স সুইংয়ের সামনে কালিসকে যে খুব ভাল দেখাচ্ছে না, সেটা ওরাও বুঝতে পারছে। তাই আড়াল করার চেষ্টা। তা ছাড়া তো শুনলাম ফিলান্ডার নাকি প্রেস কনফারেন্সে বলেওছে যে ওরা চাইছে বৃষ্টি হোক। তাতে ওদের লাভ। নিজেদের দেশে যদি বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট টিমের কেউ এই কথা বলে, তা হলে ভেবে দেখুন কতটা টেনশনে ওরা ভুগছে। |
ওয়ান্ডারার্সে ফ্ল্যাশব্যাক |
|
|
অ্যাডিলেড, ১৩ ডিসেম্বর ১৯৯৯। গ্লেন ম্যাকগ্রাকে
‘ডাক’ করতে গিয়ে গায়ে বল লাগিয়ে ফেলে
এল বি ডব্লিউ হন সচিন তেন্ডুলকর। |
ওয়ান্ডারার্স, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৩।
এ বার মহম্মদ শামিকে ডাক
করে বোল্ড হাসিম আমলা। |
|
কিন্তু তাই বলে ভারত যদি আবার ভাবে যে, পঞ্চম দিন লাঞ্চের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে শেষ করে দেওয়া যাবে, ভুল হবে। জো’বার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার রেকর্ড খুব ভাল। ওরা মরণপণ যুদ্ধ চালাবে। ওরা জানে, জো’বার্গে হেরে যাওয়া মানে পরের টেস্টে ভাল কিছু করে কামব্যাক করা কঠিন হয়ে পড়বে। আজ রবিবার ইশান্তদের থেকে যেমন ভাল বোলিংটা জরুরি, তেমনই ধৈর্যও সমান দরকার। সঙ্গে আশা করছি, আজ অন্তত ধোনি বল করতে আসবে না। এ দিন যে কেন এল, বুঝলাম না। পঞ্চম দিন ও সব করতে যাওয়া ঠিক নয়। বিশেষ করে ম্যাচটা যখন ভারতের জেতার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। সত্যি বলতে গেলে, দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট বাঁচিয়ে ফেললে ভারতের এক দিক থেকে সেটা হারই হবে। কোহলি, পূজারারা যে ইনিংস খেলল, সেটার মর্যাদা দেওয়া যাবে শুধু টেস্টটা জিতে। ওরা যে রান করেছে, সেটা বড় নয়। বড় হচ্ছে কী ভাবে রানটা করল। বিরাট বা পূজারা কাউকে দেখে মনে হল না ব্যাট করতে এতটুকু সমস্যা হচ্ছে বলে। কমেন্ট্রি বক্সেও এক জন দক্ষিণ আফ্রিকানকে বলতে শুনলাম যে, বিরাটদের (পূজারার অবশ্য দ্বিতীয় সফর) দেখে নাকি মনে হচ্ছে প্রথম বারের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওরা আসেনি। দক্ষিণ আফ্রিকাতেই ছোট থেকে খেলে ওরা বড় হয়েছে!
সাউথ আফ্রিকায় দু’জন তরুণ ভারতীয় ব্যাটসম্যান এমন কমপ্লিমেন্ট শেষ কবে পেয়েছে, মনে করতে পারছি না! |
ছবি: এএফপি। |
পুরনো খবর: রাহুলদের উত্তরসূরি পেয়ে গেল ভারত
|
|
|
|
|
|
|