প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের না নিয়েই ট্রেন স্টেশন অতিক্রম করে চলে গেল। আর তার ফলে প্রায় পাঁচশোরও বেশি যাত্রী সময়মতো তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারলেন না। এমনকী চলন্ত ট্রেনে উঠতে গিয়ে এক যুবতী-সহ তিন জন কমবেশি আহতও হলেন। শুক্রবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ি জংশন স্টেশনে। আহত ওই যুবতীকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনায় ক্ষুব্ধ যাত্রীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে বিশেষ অনুমতি নিয়ে অন্য একটি ট্রেনে এই যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়। জানা গিয়েছে স্টেশনের কেবিন মাস্টারের ভুলেই এই বিপত্তি। কেবিন মাস্টারের সঙ্গে ওই ট্রেনের চালক, গার্ডেরও সমন্বয়ের অভাব হয়। নিউ জলপাইগুড়ির এরিয়া ম্যানেজার পার্থ শীল বলেন, “ওই যাত্রীদের অন্য ট্রেনে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেন এমন হল তা দেখা হচ্ছে।”
যাত্রীদের অভিযোগ, কোচুভেলি-ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসের শুক্রবার শিলিগুড়ি জংশনে আসার নির্ধারিত সময় ছিল, দুপুর দু’টো। কিন্তু তা দেরি হওয়ায় সওয়া চারটা নাগাদ ট্রেন আসার ঘোষণা করা হয়। সেইমতো যাত্রীরা নির্ধারিত প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করেন। ট্রেন ঘোষণামত আসে এবং গতিও কমিয়ে দেয়। কয়েকজন তারই মধ্যে লাফ দিয়ে উঠে পড়ে। কিন্তু ট্রেন না থেমে ফের গতি বাড়িয়ে দেয়। এতে ভয় পেয়ে তাঁরা আবার ট্রেন থেকে নামার জন্য লাফ দেন। তাতেই প্লাটফর্মে পড়ে হাত ভেঙে যায় এক যুবতীর। শিশির টপনো নামে ওই যুবতীর বাড়ি ডুয়ার্সের হান্টাপাড়া চা বাগানে। দলগাঁও স্টেশনে যাওয়ার টিকিট কেটেছিলেন তাঁরা। ওই যুবতীর ভাই জয় বলেন, “ট্রেনে জায়গা রাখার জন্য দিদি আগেই চলন্ত ট্রেনে উঠে পড়েছিল। ট্রেন না থামায় দিদি লাফ দেয়। বাঁ হাত ভেঙে গিয়েছে। এক ঘন্টা হয়ে গেলেও কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি।” পরে অবশ্য রেলকর্মীদেরই সহায়তায় শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
রেল সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি জংশন উত্তর কেবিনের কেবিন মাস্টার দেব সুরেশ কুমার দু’মিনিট আগেই ক্লিয়ারেন্স সিগন্যাল দিয়ে দেন। তাতেই বিপত্তি হয়। থামতে গিয়েও ফের গতি বাড়িয়ে দেন ড্রাইভার। ট্রেন থামানোর চেষ্টা করেনি গার্ডও। ট্রেনের গার্ড বি কে এক্কা রেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, সিগন্যাল পেয়ে যাওয়ায় তিনি ট্রেন থামাননি। রেলের অভ্যন্তরীণ সূত্রের খবর, ওই ট্রেনের চালক গার্ড-সহ জংশনের কেবিন মাস্টার ও স্টেশন ম্যানেজার সুরেন সইকিয়ার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
ডুয়ার্সের আটিয়াবাড়ি চা বাগানের বাসিন্দা গণেশপ্রসাদ উপাধ্যায় হাসিমারা যাবার জন্য টিকিট কেটেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, “ট্রেন এমনিতেই লেট ছিল। তার উপরে ট্রেন না থামায় সকলে ভয় পেয়ে যায়। দৌড়াদৌড়িতে কয়েকজন আহতও হয়েছেন।” ঘটনার পরে স্টেশন ম্যানেজারকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান যাত্রীরা। এ বিষয়ে স্টেশন ম্যানেজার কিছু বলতে চাননি। পরে অসমগামী সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেসে প্রায় পাঁচশো যাত্রীর একই টিকিটে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হলে বিক্ষোভ কমে। |