|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
‘ভাষা আমার চাকর’ |
আশিস পাঠক |
যেযে রহস্যগুলোর আজও থই পেলুম না, তার একটা হল হোমো-হেট্রো সেক্সুয়ালিটি। টাবুলেশনে দেখতে পাচ্ছি কলেজ জীবনে যে সহপাঠীর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতম প্রেম চলেছিল দীর্ঘদিন, তার প্রিয় বান্ধবী ওরফে ভাবী স্ত্রী সশরীরে বর্তমান ছিল ঢের আগে থেকেই। তবু, বি টি রোড ধরে দুরন্ত মোটরবাইক ছোটাতে ছোটাতে পিলিয়ন সিটে বসা আমার বুকে গলায় সে যখন ঘাড় ঘুরিয়ে গাল ঘসে বলত ‘ভালো লাগছে মিতা, নাকি ভয় করছে?’ তখন কি সে প্রেমিকাকে ভুলে যেত!’’
কৃষ্ণগোপাল মল্লিকের দুখণ্ড চটি গদ্যসমগ্র (সংকলন ও সম্পাদনা অভীক চট্টোপাধ্যায়, প্রতিভাস) থেকে এই কটা লাইনই যে তুলে আনতে হল তার কারণ লেখকের বুকের পাটা এবং কব্জির জোর। যে জোর থাকলে প্রায় বছর তিরিশ আগে ব্যক্তিগতকে এমন গদ্যে প্রকাশ করা যায়, ওই একটা ‘মিতা’ শব্দে বাঙালির প্রেমের ধারণা গড়ে দেওয়া ‘শেষের কবিতা’র রেফারেন্সটা টেনে আনা যায়।
অথচ প্রায় অন্ধকারে ডুবে থাকা লেখক আজ কৃষ্ণগোপাল। উত্তর কলকাতার বনেদি পরিবারের ছেলে, সাংবাদিকের চাকরি ছেড়ে হঠাৎই ‘গল্পকবিতা’ পত্রিকা প্রকাশ শুরু করলেন। তার পরে ‘অধুনা’ প্রকাশনা। সেটাও উঠে গেল। অনিশ্চয় সেই জীবনেই পুরোপুরি লেখালেখি শুরু করলেন গোলদিঘি-প্রাণিত লেখক। ‘মর্মরাহত’ শীর্ষক গদ্যে লিখছেন, ‘গোলদিঘি অবশ্যই আমাকে শুধু লিটেরালি নয়, লিটেরেচারিলি অশেষ করেছে। এতাবৎ যা কিছু ছাইভস্ম লিখেছি, তার চোদ্দো আনাই গোলদিঘি-ঘটিত বা গোলদিঘি-জনিত।’ ছাইভস্ম! ‘অঙ্গ-বিদায়’, ‘প্রাচীন প্রাচীনতর’, ‘কবিয়াল’ কিংবা ‘সিনিয়র সিটিজেন’-এর মতো ব্যক্তিগত গদ্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে— কুণ্ঠাহীন মন আর সম্পূর্ণ নতুন চলনের তির্যকতায় তার প্রকাশের জন্য। যা এই সাম্প্রতিকেও প্রবল ভাবে অনুকৃত। ‘ফ্রিক অব নেচার’-এ লিখছেন, ‘রবীন্দ্র-প্রতিভা বহুমুখী-মাত্র নয়, অসংখ্যমুখী, এই ফর্দ থেকে তাই দু/একটা মুখ ফস্কে গিয়ে থাকতে পারে অতএব, পাঠক, নিজগুণে তা ভজিয়ে নেবেন, প্লিজ। ব্রহ্মাণ্ডে এমন মানুষ আর হয়নি, হবে না। ব্রহ্মা নিজে অবাক, নেচার থ’।’
তিনিই তো লিখতে পারেন ‘ভাষা আমার চাকর
আর, শব্দগুলো কুকুর
ভাষা আমার পা টিপবে জল গড়াবে
বললে তামাক সাজিয়ে দেবে;
শব্দগুলো, তু করলে, আসবে ছুটে
যেখানে থাক—দোরগোড়া বা ছাদের মাথায়।’ |
|
|
|
|
|