পুস্তক পরিচয় ২...
আখ্যানের ভিতর আর এক আখ্যান
মিও ডিঙোতে পারছি না বিশাল এই গহ্বরটা। সময় শুকিয়ে ঘন হয়ে থাকা একটা গহ্বর। শৈশব, যৌবন, সেক্স, ভালোলাগা, পছন্দ, স্মৃতি, কল্পনা, সম্পর্ক সমস্ত ঢুকে আছে ওই গর্তটার মধ্যে।’ শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সময়ের স্বাদ’ গল্পের কয়েকটি লাইন। স্বাদু গদ্যে লেখা গল্প-সংকলনটির নাম গল্প (মিত্র ও ঘোষ, ১২০.০০)। নাগরিক মন নিয়ে সম্পর্কের গভীরে ঢুকে পড়েন শেখর। তাঁর গল্পের বাস্তব আধুনিকতার চালু সংজ্ঞা ভেঙে ঢুকে পড়ে অন্য কোনও গহীন বাস্তবে।
যাদুকাঠি-র (কথাজাতক, ৭০.০০) লেখক শবর রায়ের গদ্যের হাতটি চমৎকার। যাদুকাঠি কাহিনিকে সুতোর মতো গেঁথে রাখে। এ-কাহিনির অন্যতম প্রধান চরিত্র দীপের পুরনো দিনের কথা বা ছোটবেলার কথা মনে পড়লে যে অনুভূতিটা হয় সেটা এরকম: ‘হাসি কান্না মান অভিমান আনন্দ বেদনায় ঘেরা প্রতিটি সম্পর্কের ভেতর অনেক আলোছায়া খেলা করে। সম্পর্কের যেটুকু দৃশ্যমান, আড়ালে থেকে যায় তার অনেক বেশী।’
এক লড়াকু মেয়ের কাহিনি বন্দনা ভৌমিকের অন্নপূর্ণার আশ্রম-এ (গাঙচিল, ১৭৫.০০)। এক যৌনকর্মীর হত্যার প্রতিবাদে পারমিতা বাকি যৌনকর্মীদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে যখন আন্দোলনে নামে, তার ঘরে ফেরার সব রাস্তা একে একে বন্ধ হয়ে যায়। সে যৌনকর্মীদের সন্তানদের নিয়ে একটি আশ্রম-বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হয়, উপন্যাসটি শেষ হয় তারই স্বগতকথনে: ‘পিছন ফিরে তাকানোরই বা কী আছে! সব কিছুই তো ফেলে এসেছ, ছেড়ে এসেছ। পুরনো বাড়ি, পুরনো অভ্যাস, পুরনো সম্পর্ক, সবই তো ছেড়েছ। আশ্রমবাসী মানুষদের পূর্বাশ্রম-এর কথা স্মরণ করতে নেই।
অঞ্জলি লাহিড়ীর সোনার সিঁড়ির উপকথা (দে’জ, ২৫০.০০) মূলত প্রেমের উপন্যাস হলেও তাতে উঠে এসেছে মেঘালয়ের খাসি জনজাতি সমাজের অনুপুঙ্খ। তাদের প্রাচীন ইতিহাস, লোককথা, ধর্মীয় বিশ্বাস, আচার-ব্যবহার, ভাষা, পোশাক-পরিচ্ছদ, জীবনযাপন প্রণালী। সেই সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে প্রবাসী উদ্বাস্তু বাঙালির মর্মবেদনা।
শুভ্রেন্দু রায় চৌধুরীর উপন্যাস বিকেলে ভোরের আলো-র (গ্রাভো প্রিন্টস, ১৫০.০০) নিটোল কাহিনিতে আধুনিক জীবনের স্বপ্ন, সংঘাত, বিপন্নতা ও মনস্তত্ত্ব। দৈনন্দিনের অভিজ্ঞতাই শিল্পের সীমা মেনে তাঁর জীবনবোধে হয়ে উঠেছে সৃজনশীল।
‘পথের ধারে দুটো বাবলা গাছ পাতাপুতাহীন কঙ্কালের মতো খাড়া দাঁড়িয়ে। খটখটে ডাল আকাশের দিকে মেলে বৃষ্টির জন্যে কান্না জুড়েছে। একটাও মানুষ দেখা যায় না। পাখি না, ফড়িংও না। কেবল পায়ের নিচে তপ্ত বালি, মাথার ওপর ঝলসানো আকাশ।... যেদিকে তাকানো যায় ধূধূ বালির ওপর রোদের ঝিলিমিলি। গাছ নেই, ছায়া নেই, কেবল অন্তহীন ঢেউ ছড়ানো বালিয়াড়ি।’ কানাই কুণ্ডুর ‘শেষ বিন্দু’ পড়তে-পড়তে টের পাওয়া যায় নির্মাণকৌশলে কতটা ব্যতিক্রমী গল্পলেখক তিনি। শুধু বাংলার নয়, সারা ভারতের গল্প তাঁর কলমে। বেরিয়েছে তাঁর গল্পসংকলন আরো পঞ্চাশ (একুশশতক, ২৫০.০০)।
পূর্ণকুম্ভ মেলার প্রাঙ্গণে সর্বস্তরের মানুষের সমাবেশ। সবার, সবারই মুখে বেঁচে থাকার, পুনঃ পুনঃ বেঁচে থাকার কী নিদারুণ আর্ত-উল্লাস। সেই আদি সনাতন ভারত ও ভারতবাসীর মুখচ্ছবি। নলিনী বেরার উপন্যাস অমৃত কলস যাত্রা (দে’জ, ২৫০.০০)। বাংলা উপন্যাসে সচরাচর চোখে পড়ে না যে লোকায়তের পৌরুষ, পুরাণ বা মিথ ভাঙার লোকায়তিক পেশি, আলাদা উপভাষার খর চলিষ্ণুতা, সে সব দুর্লভ বৈশিষ্ট্যেই ঋদ্ধ যেন নলিনীর উপন্যাস। আখ্যানের ভিতর আর-এক আখ্যান, অধ্যাত্ম ও আর্য ভারতের ভিতর অন্য এক অনার্য ভারত-আত্মার অনুসন্ধান।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.