ভাঙাচোরা ঘরগুলো কত স্মৃতি আঁকড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
১০ বছর আগে পর্যন্ত বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র সুতান গেস্ট হাউসে পর্যটকদের ভিড় এই সময়ে উপচে পড়ত।
পরে এই গেস্ট হাউসে পুলিশ শিবির করে। কয়েক বছর পর ২০১০ সালে শিলদা-কাণ্ডের পরে এখানকার শিবির গুঁটিয়ে নেয় পুলিশ। পরে মাওবাদীরা এসে পরিত্যক্ত শিবির ও লাগোয়া গেস্ট হাউস ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেয়।
মাওবাদীরা এখন কোণঠাসা। তবুও দেখা নেই পর্যটকদের। তাঁরা এলেই বা থাকবে কোথায়? এখন শীতের দুপুরে খাঁ খাঁ করে এই অতিথি আবাস। দরজা জানলা সব উধাও। নেই ছাউনি। লাগোয়া খাল থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে বোট। মরচে ধরেছে ওয়াচ টাওয়ারে।
রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে, জঙ্গলমহল হাসছে। গত কয়েক বছরের মন্দা কাটিয়ে চেনা ছন্দে ফিরেছে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র মুকুটমণিপুর। শান্ত জঙ্গলমহলে ফের পিকনিক করতে আসছেন পর্যটকেরা। মাসখানেক আগে খাতড়ায় এসে সুতান ও তালবেড়িয়া জলাধার পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করার জন্য বেশকিছু পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পর্যটকদের নির্ভয়ে জঙ্গলমহলে বেড়াতে আসার আহ্বানও জানান তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর সেই আহ্বানের পরেও পর্যটকদের ঢল নামেনি ওই দুই পর্যটন কেন্দ্রে। এ জন্য পরিকাঠামোর সমস্যা, স্বাচ্ছন্দ্যে ঘাটতি, নিরাপত্তার অভাবজনিত চাপা আতঙ্ককে দায়ী করছেন অনেকে। |
এক সময়ে গমগম করত এই অতিথি নিবাস। ছবি: উমাকান্ত ধর। |
বাঁকুড়া শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে রানিবাঁধ। সেখান থেকে ঝিলিমিলি যাওয়ার রাস্তা ধরে বারোমাইলের জঙ্গল পেরিয়ে ১৩ কিলোমিটার গেলেই সুতান। সেখান থেকে আরও ১০ কিলোমিটার দূরেই তালবেড়িয়া জলাধার। শাল-মহুয়ার জঙ্গলে ঘেরা এই দু’টি এলাকা ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির কাছে এক সময় বেড়ানোর আদর্শ জায়গা ছিল। সুতানের জঙ্গলে এখনও হরিণ, খরগোস, বনমোরগ-সহ বহু প্রাণী রয়েছে। কখনও চলে আসে হাতি। পিকনিক করতে এসে জঙ্গলের পথে এলোমেলো ঘোরার ফাঁকে জলাশয়ের জলে বোটিং করতেন অনেকে। পর্যটকদের থাকার জন্য দু’টি ঘরের একটি গেস্ট হাউস ছিল। এখন সেই বাড়ি হানাবাড়ির সমান। এমনকী একটা নলকূপও নেই। রাস্তাটি অবশ্য সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা জলহর মান্ডি, শুকদেব সোরেন বলেন, “প্রশাসন একটু উদ্যোগী হলেই ফের পর্যটকদের টানতে পারে সুন্দরী সুতান।”
তালবেড়িয়ায় এসেছিলেন হুগলির জাঙ্গিপাড়ার স্বপন সিংহ রায়, গৌতম দে। তাঁরা বলেন, “ঝাড়খণ্ডের গালুডি থেকে ফেরার পথে এখানে এসেছিলাম। বেড়ানোর এত সুন্দর জায়গা। দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই। সুতান যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু রাস্তার যা অবস্থা!” মুকুটমণিপুর বেড়াতে আসা দুর্গাপুরের সুব্রত দাস আক্ষেপ করছিলেন, “সুতান, তালবেড়িয়া ঘুরে দেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু রাতে থাকার কোনও ব্যবস্থা না থাকায় আর যাইনি।”
রানিবাঁধ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের লীনা মণ্ডল অবশ্য দাবি করেছেন, “বারোমাইল জঙ্গলে রাস্তার পাশে ভিউ পয়েন্টের পাশে শৌচাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। সুতান ও তালবেড়িয়া এলাকায় নলকূপ বসানো হচ্ছে। ধীরে ধীরে কাজ হচ্ছে। পর্যটকদের ফিরিয়ে আনতে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।”
খাতড়ার মহকুমাশাসক শুভেন্দু বসু বলেন, “প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় বারোমাইলের জঙ্গল থেকে সুতানের রাস্তার কাজ চলছে। সুতান ও তালবেড়িয়ায় কটেজ নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে। তবে এলাকা বন দফতরের অধীনে থাকায়, তাদের অনুমতি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে কিছুটা সময় লাগছে।” বাঁকুড়ার ডিএফও (দক্ষিণ) শুভ্রাংশু মল্লিক অবশ্য বলেন, “আইন মেনেই বন দফতর থেকে ওই এলাকায় কটেজ বা আবাস তৈরির অনুমতি নিতে হয়। এলাকায় পর্যটনের উন্নতির জন্য বন দফতর সহযোগিতা করবে।” |