দক্ষিণা দিলেই রাস্তা পার অবৈধ পাথর, মোরাম
রাস্তা দিয়ে হুশহুশ করে যায় ট্রাকগুলো। কোনওটায় পাথরকুচি, কোনটায় মোরাম, বোল্ডার রয়েছে। কিন্তু কতগুলি ট্রাকে মাল পরিবহণের বৈধ কাগজ রয়েছে?
বুধবার থেকে বাঁকুড়ার হেভিরমোড়ে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের টানা ধরপাকড়ে বৈধ কাগজ না থাকার অভিযোগে ৫৪টি ট্রাক ধরা পড়তেই ফের উঠে এল এই প্রশ্ন।
বীরভূমের মহম্মদবাজারের মতো বাইরের এলাকা থেকে যেমন বাঁকুড়ায় পাথরকুচি আসে, তেমনই এই জেলার উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তের পাথর খাদান থেকেও পাথর বাইরে যায়। প্রশাসনের একাংশই স্বীকার করেছেন, জেলায় যত বৈধ খাদান রয়েছে, অবৈধ খাদানের সংখ্যা তার থেকে ঢের বেশি। ফলে পাথর হয়ে নিয়ে যাওয়া ট্রাকে বৈধ চালান থাকার কথাও নয়।
তা হলে কী ভাবে পাথর যাচ্ছে? পাথর ও পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত লোকজনরাই জানাচ্ছেন, ঠিক জায়গায় দক্ষিণা দিলে শুধু বাঁকুড়া নয়, সর্বত্রই এই পাথর পাঠানো যায়। এই চক্রে পুলিশ থেকে প্রশাসনের কর্মীরাও জড়িয়ে রয়েছেন বলে অভিযোগ। যদিও পাথর ব্যবসায়ী সমিতি বা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা তা মানতে নারাজ। বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “অবৈধ ভাবে চলা খাদান ও মালপাচার বন্ধ করতেই আমরা অভিযানে নেমেছি। শুধু হেভির মোড়ই নয়, জেলার বিভিন্ন এলাকাতেই এই অভিযান চলবে। যাঁরা যুক্ত, তারাও রেহাই পাবেন না।”
বাঁকুড়া জেলা ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রের খবর, খাতড়া মহকুমায় বর্তমানে ৬টি বালিখাদ, একটি পাথর খাদান ও ৫টি মোরাম খাদান রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই মহকুমারই ইঁদপুর, হিড়বাঁধ, রানিবাঁধ, রাইপুর এলাকাতেও বেশ কয়েকটি বেআইনি পাথর ও মোরাম খাদান চলছে। পাশাপাশি সিমলাপাল, রাইপুর, রানিবাঁধ এলাকায় নদীঘাট থেকে বেআইনি বালি তোলা হয় বলে অভিযোগ। এই খাদানগুলির তথ্য অবশ্য প্রশাসনের নথিতে নেই। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) পার্থ ঘোষ বলেন, “জেলায় রানিবাঁধ ও গঙ্গাজলঘাটিতে দু’টি বৈধ পাথর খাদান রয়েছে। বাকি সবই অবৈধ।”
বাঁকুড়া সদর মহকুমার ছাতনা, গঙ্গাজলঘাটি, শালতোড়া, মেজিয়া, বড়জোড়া ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে বোল্ডার, মোরাম, পাথর তোলা হয়। তারও অনেকগুলি চলছে বেআইনি ভাবে। ছাতনা ও শালতোড়ার পাথুরে জমি থেকে যন্ত্রের মাধ্যমে কালো পাথর কাটা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এখান থেকে পাথর বর্ধমান জেলার বিভিন্ন রাস্তা ধরে বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে। মেজিয়া থেকে পাচার হচ্ছে কয়লা। একই ভাবে পুরুলিয়ার মানবাজার, বান্দোয়ান, পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ি থেকে রানিবাঁধ, হিড়বাঁধ, ইঁদপুর হয়ে পাথর, বোল্ডারবোঝাই গাড়ি বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর মহকুমায় ঢুকছে। অন্য দিকে বীরভূম জেলার রামপুরহাট মহকুমা এলাকা থেকেও পাথর, বোল্ডারবোঝাই গাড়ি রানিগঞ্জ, মেজিয়া, গঙ্গাজলঘাটি হয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় আসছে।
বৈধ কাগজ ছাড়াই কী ভাবে একের পর এক জাতীয় ও রাজ্য সড়ক পেরিয়ে যায় এই গাড়িগুলি? এই কারবারের সঙ্গে জড়িতদের কয়েকজন জানিয়েছেন, সোজা পথে ব্যবসা করার হ্যাপা অনেক। তাই স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে মোটা দক্ষিণার বিনিময়ে ওই রাস্তায় ট্রাক নিয়ে যাওয়ার ছাড়পত্র মিলে যায়। এক কারবারির কথায়, “ট্রাকে যে পরিমাণ বালি, পাথর, বোল্ডার, মোরাম, কয়লা থাকে সেই হিসাবেই টাকার পরিমাণ কমে-বাড়ে।
ওই ব্যবসায়ীদের দাবি, কোনও থানা এলাকায় কয়লার ট্রাক পিছু সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। পাথর ও বোল্ডারের জন্য দুই থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্তও ওঠে। বালি ও মোরাম ৫০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে থাকে। দরটা অবশ্য থানা অনুযায়ী বাড়ে-কমে। তাঁদের হিসেব বলছে, প্রতি মাসে এই বেআইনি কারবার চালানোর জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা ‘তোলা’ দিতে হয় পুলিশকে। এরই পাশাপাশি যে সব এলাকায় এই খাদান চলছে সেখানকার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের একাংশকেও হাতে রাখার জন্য কিছু খরচ করতে হয়।
এই সব খাদানে কাজ করার সুবাদে স্থানীয় গ্রামবাসীদের অনেকে যুক্ত থাকেন। শ্রমিকেরা কাজ করে দিনে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা মজুরি পান। জেলার এক বিএলআরও-র কথায়, “এই সমস্ত চোরাই কারবার রোখার পিছনে পুলিশের একটা ভূমিকা থাকে। সে জন্য রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাড়ি তল্লাশি করেন পুলিশ কর্মীরা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় পুলিশ টাকা নিয়ে বৈধ কাগজ না থাকা গাড়িকেও ছেড়ে দেয়। ফলে এই বেআইনি কারবার দিনের পর দিন বেড়ে যাচ্ছে।” খাতড়ার এসডিপিও কল্যাণ সিংহ রায় অবশ্য বলেন, “ভূমি সংস্কার দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবেই আমরা মাঝে মধ্যেই রাস্তায় তল্লাশি চালাই।” খাতড়ার মহকুমাশাসক শুভেন্দু বসু বলেন, “বৈধ কাগজ না থাকলেই প্রতিটি মালবাহী গাড়ি থেকে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হচ্ছে। নজরে এলে ওইসব গাড়ি ধরপাকড় করা হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.