সরকারি কর্মীরা ট্রাক না ছাড়লে জেলাশাসককে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিল অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীরা। তাদের গাড়ি ধাওয়া করে পাঁচ জনকে ধরলেন জেলাশাসকই।
ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার রাতে বাঁকুড়া শহর লাগোয়া গন্ধেশ্বরী সেতুর কাছে। পুলিশ জানায়, বৈধ কাগজ না থাকায় বীরভূমের মহম্মদবাজার থেকে পাথরকুচি নিয়ে আসা কয়েকটি ট্রাককে বাঁকুড়ার হেভিরমোড়ে আটক করেছিলেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীরা। সেই ট্রাক ছাড়াতেই মহম্মদবাজার থেকে পাঁচ জন আসে।
বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “কিছু লোক এসে সরকারি কর্মীদের হুমকি দিচ্ছিল। তা বরদাস্ত হয়নি বলেই ওদের ধাওয়া করে ধরা হয়। সরকারি কাজে বাধা দিলে কাউকে রেয়াত করা হবে না।” অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি সংস্কার) পার্থ ঘোষ ধৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে সরকারি কাজে বাধা, হুমকি ও বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভিযোগ করেন। পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “ধৃতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে তাদের ১১ দিনের জন্য জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
জেলাশাসকের নির্দেশেই বুধবার থেকে হেভিরমোড়ে পাথর, বোল্ডার ও মোরাম বোঝাই ট্রাকের কাগজপত্র পরীক্ষা করছিলেন বাঁকুড়া ২ ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীরা। গত দু’দিনে ৫৪টি গাড়ি আটক করা হয়। তার অধিকাংশই মহম্মদবাজারের। সরকারি কর্মীদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে পাঁচ জন এসে হুমকি দেয়, ট্রাকগুলি ছাড়া না হলে জেলাশাসককে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। ফোনে জেলাশাসককে তা জানানো হয়। এই সময়েই আটকে রাখা একটি পাথর বোঝাই ট্রাক আচমকা গঙ্গাজলঘাটির দিকে বেরিয়ে যায়। তার পিছনে অন্য একটি গাড়িতে ওই পাঁচ জন ছিল। পুলিশ না থাকায় তখনই তাদের পিছু নেওয়া যায়নি।
খানিক বাদে জেলাশাসক জনা আটেক পুলিশকর্মীর এসকর্ট নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। তার একটু পরেই গাড়ি নিয়ে পাঁচ জন হেভিরমোড়ের দিকে ফিরে আসে। জেলাশাসক তাদের আটকানোর চেষ্টা করলেও গাড়িটি গতি বাড়িয়ে বাঁকুড়া শহরের দিকে চলে যায়। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি সংস্কার) ও এক দেহরক্ষীকে নিয়ে জেলাশাসক নিজের গাড়িতে চড়ে পিছু নেন। কয়েকশো মিটার ধাওয়া করে গিয়ে গন্ধেশ্বরী সেতুর কাছে তাঁদের গাড়ি সামনের গাড়িটির রাস্তা আগলে দাঁড়িয়ে যায়। পুলিশ কর্মীরা নেমে সেটি ঘিরে ফেলেন। পরে বাঁকুড়া সদর থানা থেকে পুলিশ এসে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ জানায়, দুই পাথর ব্যবসায়ী চন্দন চন্দ ও সাধন মণ্ডল, তাদের কর্মী জয়ন্ত চৌধুরী ও শ্রীতনু চট্টরাজ এবং গাড়ির চালক গণপতি সাহাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার প্রতিবাদে স্থানীয় ট্রাকচালক, মালিকরা কিছুক্ষণের জন্য রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। পাঁচামি মাইন অ্যান্ড ক্রাশার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজির হোসেন মল্লিকের দাবি, “চালান দেখাতে না পারলে ওদের জরিমানা করা যেত। কিন্তু মিথ্যা অভিযোগে ওদের গ্রেফতার করে প্রশাসনই বিশৃঙ্খলা ছড়াতে চাইছে।” হেনস্থা ও মারধরের অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা। তবে বাঁকুড়া জেলা ভূমি দফতর সূত্রে তা অস্বীকার করা হয়েছে। বরং জেলাশাসকের সাহসিকতার কথাই দিনভর কর্মীদের মুখে-মুখে ফিরেছে। |