|
|
|
|
ট্রাক থেকে নামানো হচ্ছে বাড়তি পণ্যও
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে ট্রাকে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহণ ঠেকাতে তৎপর হয়েছে পরিবহণ দফতর। এ বার থেকে নিয়মিত প্রতিটি রাস্তায় পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের টহল দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। সম্প্রতি এই নির্দেশ পেয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিবহণ দফতর তল্লাশি শুরু করে। প্রথম ৫ দিনেই ২৫টি অতিরিক্ত পণ্য বহনকারী গাড়ি আটক করা গিয়েছে। জরিমানা বাবদ সরকারি কোষাগারে জমা পড়েছে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা।
শুধু জরিমানা আদায় করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না পরিবহণ দফতর। বেআইনি ভাবে যে বাড়তি পণ্য বহন করার জন্য ট্রাক আটকানো হচ্ছে, সেই মাল গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে নির্দেশ জারি করেছিল আগেই। বাড়তি মাল নিয়ে ট্রাক চলাচল করায় রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে বলে জাতীয় সড়ক বিভাগ ও পূর্ত দফতরও বারবার অভিযোগ করেছে। এ সবের জেরেই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পরিবহণ আধিকারিক প্রিয়াঞ্জন দাস বলেন, “সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী অতিরিক্ত পণ্য বহনকারী গাড়িকে জরিমানা করার পাশাপাশি অতিরিক্ত পণ্য নামিয়ে দেওয়ার নির্দেশ এসেছে। আমরা সেই মতো কাজ করছি।” |
|
আরটিও অফিসের সামনে নামানো হচ্ছে অতিরিক্ত পণ্য। —নিজস্ব চিত্র। |
সরকারি আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ট্রাক-লরিতে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহণের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। পরিবহণ দফতর মাঝেমধ্যে ধরপাকড় চালালেও জরিমানা আদায়ে বিশেষ কিছু করেনি। আর জরিমানার পরিমাণও আহামরি কিছু নয়। ফলে, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ট্রাক ব্যবসায়ীরা দিনের পর দিনে গাড়িতে বাড়তি মাল চাপিয়েছেন। পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “যদি একটি ট্রাক মাসে বা ৩ মাসে একবার ধরা পড়ে, তবে জরিমানা দিলেও গায়ে লাগে না।” তাই এ বার জরিমানা আদায়ের নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, যে গাড়িতে যত টন বাড়তি পণ্য রয়েছে, সেই হিসেবে প্রতি টনে এক হাজার টাকা এবং মোটার উপর অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা জরিমানা বাবদ দিতে হবে। ধরা যাক, কোনও গাড়িতে ৩০ টন পর্যন্ত মাল নিয়ে যাওয়ার ছাড়পত্র রয়েছে। কিন্তু তাতে চাপানো হয়েছে ৫০ টন মাল। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ২০ টনের জন্য ২০ হাজার টাকা এবং আরও ২ হাজার টাকা মিলিয়ে মোট ২২ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। সেই সঙ্গে বাড়তি ২০ টন মাল গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে।
নতুন এই নিয়মকে স্বাগত জানাচ্ছেন ট্রাক মালিকেরাও। ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মেদিনীপুর জোনের সভাপতি রাজু বালি বলেন, “আমাদের দাবি ছিল, শুধু জরিমানা আদায় নয়, গাড়ি থেকে অতিরিক্ত পণ্য নামিয়েও দিতে হবে। এ বার তা চালু হওয়ায় আমরা খুশি।” কিন্তু এ তো ট্রাক মালিকদের লাভ কমবে? রাজুবাবুর কথায়, “কিছু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার লোভে এ সব করেন বটে। কিন্তু রাস্তার হাল খারাপ হলে গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বাড়ে। অতিরিক্ত পণ্য পরিবহণ করার ক্ষেত্রে ঝুঁকিও থাকে।” নিয়মিত নজরদারি চললে এ সবই আটকানো যাবে বলে মনে করছেন ট্রাক মালিকেরা।
এতদিন অবশ্য নজরদারি-নিয়মের ফাঁক গলেই চলত অতিরিক্ত পণ্য পরিহণ। বিভিন্ন ট্রাকের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের পণ্য পরিবহণের অনুমোদন রয়েছে। এখন মালবাহী গাড়িও বেরিয়েছে নানা ধরনের। কোনও গাড়িতে ১২ টন পণ্য নিয়ে যাওয়ার অনুমোদন রয়েছে তো কোনও গাড়িতে ৩০ টন, ৪৫ টন বা ৫৪ টন। যে ধরনের গাড়িতে যত পরিমাণ পণ্য পরিবহণের সরকারি অনুমোদন রয়েছে, সেই অনুপাতে রোড ট্যাক্স নির্ধারিত হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য পরিবহণের জন্য রোড ট্যাক্স দিয়ে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহণ করে ট্রাকগুলি। এতে সরকারি রাজস্বের বিপুল ক্ষতি হয়। ক্ষতি হয় রাস্তারও। নজরদারি-জরিমানার কড়াকড়িতে বাড়তি পণ্য পরিবহণের প্রবণতা কমে কিনা, সেটাই এখন দেখার। |
|
|
|
|
|