|
|
|
|
কাছে নেই পরিবহণ অফিস, গাড়ি কিনেও সমস্যা ঘাটালে
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঘাটাল |
দিন পনেরো আগে ঘাটাল শহরের একটি দোকান থেকে মোটর সাইকেল কিনেছেন শ্রীকান্ত কোটাল। কিন্তু তারপরে বেজায় সমস্যায় পড়েছেন তিনি। ঘাটাল শহরে পরিবহণ দফতরের কোনও শাখা অফিস না থাকায় মোটর সাইকেল রেজিস্ট্রেশনের জন্য তাঁকে ছুটতে হবে সত্তর কিলোমিটার দূরে মেদিনীপুর শহরে। শুধু তাই নয়, গাড়ির কর প্রদান, ড্রাইভিং লাইসেন্স-সহ সংশ্লিষ্ট সমস্ত কাজের জন্যও মেদিনীপুর ছাড়া গতি নেই। মোটর সাইকেলের এত ‘হ্যাপা’ জানলে কেনার আগে আরও ক’ বার ভাবতেন শ্রীকান্তবাবু। এখন সে সুযোগও নেই।
ঘাটাল মহকুমায় পরিবহণ দফতরের অফিস না থাকায় নিত্য এমনই নানা সমস্যায় ভুগতে হয় এলাকাবাসীকে। একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসন থেকে জন প্রতিনিধিদের লিখিত ভাবে আরটিও অফিস খোলার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। স্মারকলিপি দিয়েছেন। বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। কাজ হয়নি কিছুতেই। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিবহণ দফতরের আধিকারিক প্রিয়াঞ্জন দাস বলেন, “জেলাশাসক ঘাটালে একটি অফিস চালু করার জন্য পরিবহণ দফতরে চিঠি পাঠিয়েছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দফতর থেকে কোনও নির্দেশ আসেনি।”
পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘাটাল মহকুমার পাঁচটি ব্লকে বিভিন্ন কোম্পানির প্রায় ১৫টি বাইকের দোকান রয়েছে। চারটির বেশি গাড়ির দোকানও রয়েছে ঘাটালে। তথ্য বলছে, ঘাটাল মহকুমার বিভিন্ন দোকান থেকে দিনে গড়ে ২-৩টি করে মোটর বাইক বিক্রি হয়। মাসে সবচেয়ে কম হলেও ৬০-৭০টি মোটর বাইক বিক্রি হয় ঘাটাল মহকুমায়। চার চাকার বিক্রিও মন্দ নয় ঘাটালে। মাসে গোটা দশেক বিভিন্ন ধরনের চার চাকার গাড়ি বিক্রি হয়। প্রাথমিক ভাবে মোটর বাইক বা চার চাকার গাড়ি কেনার পর মালিকদের সত্তর কিলোমিটার দূরে গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের জন্য যেতে হয় মেদিনীপুরে পরিবহণ দফতরের অফিসে। অথচ, জেলারই ঝাড়গ্রাম মহকুমাতে দিব্যি পরিবহণ দফতরের অফিস রয়েছে।
পরিবহণ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ঘাটাল মহকুমা থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য মেদিনীপুর অফিসে গড়ে মাসে শতাধিক আবেদন জমা পড়ে। অনেক সময় মেদিনীপুরে গিয়েও আধিকারিকরা না থাকায় ফিরে আসতে হয়। লাইসেন্স পাওয়ার জন্য একাধিক বার যেতে হয়রানি বাড়ে। ব্যাক্তিগত অথবা ব্যবসার জন্য লাইসেন্স পাওয়া গাড়ির মালিকদের সরকারি কর দিতে হলেও সেই মেদিনীপুরে যেতে হয়।
প্রায় দু’দশক আগে থেকে ঘাটাল মহকুমার বাসিন্দারা ঘাটালে পরিবহণ দফতরের একটি শাখা অফিস চালু করার জন্য আন্দোলন শুরু করেন। বিভিন্ন সময়ে ঘাটালের মহকুমাশাসক থেকে স্থানীয় বিধায়কদের কাছে এই নিয়ে লিখিত ভাবে অনুরোধও জানানো হয়েছে। কিন্তু সমস্যার সুরাহা হয়নি। ঘাটালের বাস মালিদকের পক্ষে মোহন দাস বলেন, “প্রতি বছর গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেটের জন্য আমাদের তেল পুড়িয়ে মেদিনীপুর যেতে হয়। ঘাটালে অফিস চালু হলে এত সমস্যা হত না।” ট্যাক্সি মালিক পুলক প্রামাণিক বলেন, “ঘাটালে পরিবহণ দফতরের নির্দেশিকা না মেনে অটো, ট্রেকার-সহ বিভিন্ন ধরনের যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল করে। দিনের পর দিন ঘাটালে বেআইনি গাড়ি দাপিয়ে বেড়ালেও দেখার কেউ নেই। ঘাটালে পরিবহণ দফতরের অফিস থাকলে নজরদারি আরও বাড়বে।”
ঘাটালের তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দোলই বলেন, “আমার কাছে আবেদন আসার পরই দফতরের মন্ত্রীর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছি। আপাতত সাময়িক ভাবে সপ্তাহে দু’দিন মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের একটি ঘরে পরিবহণ দফতরের কাজ শুরু করার কথা ভাবা হচ্ছে। পরে ঘাটালে স্থায়ী শাখা আফিস চালুর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|