আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহেই বাগনান লেভেলক্রসিং-এর উপরে রেলওয়ে উড়ালপুল নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে দাবি রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতরের। উড়ালপুলটি তৈরি হচ্ছে রাজ্য-রেলের যৌথ উদ্যোগে। রেল কর্তৃপক্ষের অধীনে যে জমি রয়েছে, সেটি ও লাইনের উপরে সেতুর অংশ করার কথা রেলের। রাজ্য সরকারের তরফে বাকি কাজ করার কথা রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতরের।
রেল তার অংশে অধিকাংশ কাজই সেরে ফেলেছে। বাকি আছে রেল লাইনের উপরে সেতুর দু’টি দিক জুড়ে দেওয়া। ওই কাজটি হবে আজ, শনিবার। সে কারণে শনিবার রাত পৌনে ১টা থেকে পর দিন রবিবার দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগের বাগনান স্টেশন দিয়ে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। ওই সময়ের মধ্যেই গার্ডার বসিয়ে সেতুর দু’টি মুখ জুড়ে দেওয়া হবে বলে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার জানিয়েছেন। |
জুড়বে উড়ালপুলের দুই প্রান্ত। সে কারণে শনিবার রাত পৌনে ১টা থেকে রবিবার দুপুর
পৌনে ১টা পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগের বাগনান স্টেশন
দিয়ে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। ছবি: সুব্রত জানা। |
অন্য দিকে জোর কদমে কাজ করছে রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতরও। সেতুটি বাগনানের খাদিনান গ্রামে মুম্বই রোডের কাছ থেকে শুরু হয়ে লেভেলক্রসিং পার করে খালোড়ে বাগনান-শ্যামপুর রোডে মিশেছে। সেতুর দু’দিকে অ্যাপ্রোচ রোড তৈরির কাজ চলছে। এই কাজও শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে বলে জানান পূর্ত (সড়ক) দফতরের বাস্তুকারেরা। রাজ্য সরকারের তরফে কাজটির সঙ্গে যুক্ত ঠিকা সংস্থা ম্যাকিনটস বার্ন-এর এক আধিকারিকের দাবি, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই তাঁদের তরফে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে যাবে।
বাগনান লেভেলক্রসিংয়ের উপরে উড়ালপুলটির জন্য বিভিন্ন তরফ থেকে বহু দিন ধরেই দাবি করা হচ্ছিল। বাগনান থেকে শ্যামপুরের মধ্যে অসংখ্য গাড়ি চলাচল করে। তাদের লেভেলক্রসিং পার হতে হয়। জেলার অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্র গাদিয়াড়ায় যাতায়াত করতে হলেও লেভেলক্রসিং পার হতে হয়।
হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগে ট্রেনের সংখ্যা বেশি থাকায় বেশিরভাগ সময় লেভেলক্রসিংয়ে গেট দীর্ঘ ক্ষণ বন্ধ রাখতে হয়। ফলে লাইনের দু’দিকে গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে। যাত্রীরা অধৈর্য হয়ে পড়েন। অনেকে লেভেলক্রসিংয়ের কাছেই বাস বা ট্রেকার থেকে নেমে রেললাইনের উপর দিয়ে হেঁটে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন ধরার জন্য স্টেশনে আসেন।
আবার লেভেলক্রসিংয়ের গেট যখন গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়, ট্রেনকে দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। দিনের পর দিন গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানজট। উড়ালপুলটি চালু হলে একদিকে যেমন ট্রেন চলাচলে গতি আসবে, মিটবে বাগনানের যানজট সমস্যা।
উড়ালপুলটি অবশ্য অনেক আগেই তৈরি হয়ে যেত। বছর দশেক আগেই এর নির্মাণ কাজ শুরুর পরিকল্পনা করা হয়। রেল এবং রাজ্য সরকার যৌথ ভাবে এর নকশাও অনুমোদন করে। তারপরে রেল তার অংশের বেশ কিছুটা কাজ সেরে রাখে। কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফে কাজটি শুরু করা যায়নি মূলত জমি অধিগ্রহণে সমস্যা দেখা দেওয়ায়। এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও হয়। জমির সমস্যাটি মিয়ে যাওয়ায় ২০১০ সালের মাঝামাঝি রাজ্য সরকার তার অংশের কাজ শুরু করে। শেষ করার কথা ছিল পরের বছরের জানুয়ারি মাসের মধ্যেই। কিন্তু বেশ কিছুটা কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে এর নকশায় ত্রুটি ধরা পড়ে। সেই ত্রুটি সংশোধন করে ফের নতুন করে কাজ শুরু হয়। বাজেটও বেড়ে যায়। রাজ্য সরকারের তরফের ১৯ কোটির বাজেট বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ কোটি টাকায়। রেলের সঙ্গে সম্মিলিত বাজেট বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫ কোটি টাকায়।
রাজ্য পূর্ত (সড়ক) দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, রাজ্য সরকারের তরফে কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। ঠিকা সংস্থাকে বলা হয়েছে অন্যান্য অংশ থেকে আরও কর্মী নিয়ে এসে কাজটি শেষ করার জন্য। রাজ্যের পূর্ত (সড়ক) দফতরের মন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার বলেন, “প্রতিমাসে বাগনানের রেলওয়ে উড়ালপুল নিয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে। আসা করছি সময়সীমার মধ্যেই কাজ শেষ করে উড়ালপুলটি ব্যবহারের জন্য খুলে দিতে পারব।” |