দেবযানী নিয়ে রফা খুঁজছে ভারত, আমেরিকাও

২০ ডিসেম্বর
দেবযানী খোবরাগাড়েকে নিয়ে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা এ বার ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলতে চাইছে ভারত। বিষয়টি কী ভাবে মোকাবিলা করা হবে, তার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে দু’তরফের আলোচনা হয়েছে বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর।
স্বয়ং বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ আজ সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা সমাধানসূত্র খোঁজার চেষ্টা করছি। আমার আশা, আমরা সেটা খুঁজেও পাব।” মন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়েছেন, ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দু’দেশের কাছেই অত্যন্ত ‘মূল্যবান’ এবং সেটা ‘রক্ষা’ করা জরুরি।
আমেরিকার মাটিতে দেবযানীর হেনস্থার প্রতিক্রিয়ায় ভারত যে ভাবে মার্কিন কূটনীতিকদের সুযোগসুবিধায় কোপ বসিয়েছিল এবং দেবযানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইবার জন্য মার্কিন প্রশাসনকে চাপ দিচ্ছিল, তার তুলনায় খুরশিদের আজকের বক্তব্য অনেকটা নমনীয়। অন্য দিকে আমেরিকার তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ক্ষমা প্রার্থনা বা অভিযোগ প্রত্যাহারের প্রশ্নই নেই। মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র মারি হার্ফও বলেছেন দেবযানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ অত্যন্ত ‘গুরুতর’। দেবযানী ‘গা-বাঁচাতে পারবেন না’।
মারির অভিযোগ, পরিচারিকা সঙ্গীতা রিচার্ডের তরফে দেবযানীর বিরুদ্ধে যে ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে, সে ব্যাপারে ভারতীয় দূতাবাসকে জুলাই মাসেই জানানো হয়েছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধও করা হয়েছিল। যদিও ভারতের বক্তব্য, ৪ সেপ্টেম্বরের আগে তারা কিছু জানত না। মারির আরও বক্তব্য, “আমরা অভিযোগ প্রত্যাহারের কথা ভাবছিই না। এটা পুরোপুরি আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন।”
এই সব বিবৃতিতে অবশ্য খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না ভারত। কারণ, বুধবার মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরির সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন এবং বৃহস্পতিবার মার্কিন রাজনৈতিক সচিব ওয়েন্ডি শেরম্যান ও বিদেশসচিব সুজাতা সিংহের যে কথোপকথন হয়েছে সেটা যথেষ্ট ইতিবাচক। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, “সঙ্কট কাটাতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মার্কিন আইনজীবী প্রীত ভারারা দেবযানীর বিরুদ্ধে যা বলেছেন, কেরি বা শেরম্যান কিন্তু তার হুবহু প্রতিধ্বনি করেননি।” শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনাকে বিবাদ নিরসনের পরবর্তী ধাপে পৌঁছনোর সিঁড়ি বলে মনে করছে সাউথ ব্লক। আজ রাতে ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়লের সঙ্গে কথা বলেছে বিদেশ মন্ত্রক। সেখানেও রফাসূত্র নিয়েই আলোচনা হয়েছে।
সেটা কী? দেবযানীকে রাষ্ট্রপুঞ্জের স্থায়ী কমিশনে নিয়ে আসার কথা বলেছে ভারত। সেটা হলে দেবযানীর কূটনৈতিক রক্ষাকবচ বা ইমিউনিটি বাড়বে। তিনি পাসপোর্ট ফেরত পাবেন। দেশে ফিরতে পারবেন। মার্কিন প্রশাসনকে আর আনুষ্ঠানিক ভাবে অভিযোগ প্রত্যাহার করতে হবে না। মামলাটি এমনিই ধামাচাপা পড়ে যাবে। কিন্তু যেহেতু দেবযানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে তাঁর পদমর্যাদা বাড়ছে, সে ক্ষেত্রে এই সুযোগসুবিধা তাঁর উপরে বর্তাবে কি না (রেট্রোঅ্যাক্টিভ হবে কি না), সেটা নিয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে। তাই নিয়েই দু’দেশের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে।
বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, কূটনীতিতে সব সময়ই কৌশলের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে দেবযানীর ব্যাপারে মার্কিন প্রশাসনের আচরণ যে নিন্দনীয়, তা যথেষ্ট রণংদেহি ভঙ্গিতেই তুলে ধরেছে ভারত। গোটা বিশ্বের কাছেই এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া গিয়েছে যে, গোটা ঘটনায় ভারত অত্যন্ত রুষ্ট। এ বার কৌশলের সময় এসেছে। সেই কারণেই ভারত-মার্কিন গুরুত্বের কথা ভেবে সমাধানসূত্রের সন্ধান করা হচ্ছে। তবে এমন ভাবে তা করা হবে, যাতে তা দু’দেশের পক্ষেই সম্মানজনক হয়।
কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য ভারত যতই চাপ দিক, বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া হোয়াইট হাউসের পক্ষে সম্ভব নয়। এমন কোনও নজিরও অতীতে নেই। কিন্তু দেবযানীর হেনস্থাকে কেন্দ্র করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ধূলিসাৎ হয়ে যাক এটাও চাইবে না ওয়াশিংটন। বিশ্বজোড়া আর্থিক মন্দার পর ওবামা প্রশাসন এমনিতেই যথেষ্ট চাপে রয়েছে। ভারতে তাদের বিস্তৃত বিনিয়োগক্ষেত্র রয়েছে। সে দেশের বিভিন্ন সংস্থা ভারতে অসামরিক পরমাণু চুল্লি বসানোর জন্য মরিয়া। তা ছাড়া আগামী বছর আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর ভারতের উপর আমেরিকার নির্ভরতা আরও কিছুটা বাড়বে। এই অবস্থায় ভারতের সঙ্গে বড় কোনও সংঘাতে যাবে না মার্কিন প্রশাসন।
ভারতও বিষয়টা গোটাতে চাইছে। অর্থনীতি-কূটনীতি-বিদেশনীতি, কোনও দিক থেকেই আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করে ফেলার ঝুঁকি নেওয়ার প্রশ্ন নেই। ভারতীয় রফতানিকারীরা তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ভারতীয় পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে আমেরিকা বাধানিষেধ চাপালে, সেটা ভাল হবে না। শুক্রবার কলকাতায় এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন (ইসিজিসি) এবং ডান অ্যন্ড ব্র্যাডস্ট্রিট আয়োজিত এক আলোচনাসভায় ইসিজিসির এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর গীতা মূরলীধরণ বলেন, “রফতানিকারীদের ঝুঁকির ব্যাপারটি খেয়াল রাখা দরকার।” বিদেশমন্ত্রীও স্পষ্ট বলেছেন, “দু’দেশের সম্পর্ক যে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ সে ব্যাপারে আমরা সচেতন। বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ রয়েছে এই সম্পর্কে।”
পাশাপাশি রয়েছে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বাধ্যবাধকতা। হেনস্থার প্রশ্নে যতই সুর চড়াক, দেবযানীর তরফে যে কোনও ত্রুটিই নেই, এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারছে না দিল্লি। তারই মধ্যে আজ মহারাষ্ট্র বিধানসভায় আদর্শ আবাসন কেলেঙ্কারি নিয়ে বিচারবিভাগীয় কমিশনের যে তদন্ত-রিপোর্ট পেশ হয়েছে, সেখানে বেআইনি সুবিধাভোগীদের তালিকায় মুখ্যমন্ত্রী অশোক চহ্বাণ-সহ দেবযানীর নামও রয়েছে। আজ দিল্লিতে কংগ্রেসের কোর কমিটিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, আমজনতার কাছে জাতীয়তাবাদী ভাবমূর্তি তুলে ধরতে দেবযানী নিয়ে সরব হওয়া গিয়েছে। কিন্তু এখন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোলে গোটা ব্যাপারটা হিতে বিপরীত হয়ে উঠতে পারে। সে দিক থেকেও দেবযানীর বিষয়টা আর টেনে লম্বা করতে চাইছে না দিল্লি।
কিন্তু আমেরিকা যে প্রকাশ্যে এখনও সুর নরম করেনি, তার কী হবে? বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, উত্তেজনা কমানোর জন্য শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা সঠিক পথেই এগোচ্ছে। খুরশিদের কথায়, “আমার কাছে যেটা অর্থপূর্ণ সেটা হল মার্কিন বিদেশসচিবের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার কথা এবং শেরম্যানের সঙ্গে সুজাতা সিংহের আলোচনা। তার নীচের পর্যায়ে কোনও কথারই মানে হয় না।” আমেরিকার সঙ্গে যে গোপনে বোঝাপড়া চলছে, তা স্পষ্ট করে দিয়ে বিদেশমন্ত্রী জানান, “কূটনীতির বৈশিষ্টই হল যে তার একটি দিক জনমানসের সামনে আনা হয়। অন্য দিকটি গোপনে রাখা হয়। এ ভাবেই আমরা বিষয়টিকে দেখছি।”

প্রতিবাদে ভাঙচুর
ভারতে মার্কিন সামগ্রী নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবিতে, মুম্বইয়ে নতুন তৈরি হওয়া একটি ডমিনো’জ-এর দোকানে ভাঙচুর করল বিক্ষুব্ধ জনতা। শুক্রবার এই ঘটনা ঘটেছে। আমেরিকায় ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়েকে হেনস্থা করার প্রতিবাদেই এই হামলা চালান তাঁরা। পুলিশ এবং ওই মার্কিন বহুজাতিক সংস্থার ভারতীয় শাখার তরফে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, হামলায় কারও জখম হওয়ার খবর নেই।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.