|
|
|
|
বন্ধুত্ব রক্ষার বার্তা দিয়েও ক্ষমার জন্য চাপ ভারতের
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
১৯ ডিসেম্বর |
ওয়াশিংটনের দুঃখপ্রকাশেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয় নয়াদিল্লি।
দেবযানী খোবরাগাড়ের হেনস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে এখনও দাবি উঠছে, ক্ষমাই চাইতে হবে আমেরিকাকে। তবে একই সঙ্গে বিদেশ মন্ত্রক নজর রাখছে, যাতে এই গোলমালের প্রভাব আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের উপর না পড়ে। বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ নিজেই বলেছেন, “অত্যন্ত মূল্যবান এই সম্পর্ক নিয়ে কোনও পক্ষই ঝুঁকি নেবে বলে আমার মনে হয় না।” সে জন্যই মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি ফোন করে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছেন। ফোন করেছিলেন খুরশিদকেও। সে জন্যই বিষয়টি জানানো হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে। দেবযানীর গ্রেফতারি ও তল্লাশি আইনানুগ পথে হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে হোয়াইট হাউস।
দিল্লির একাংশের বক্তব্য, এ সব থেকেই স্পষ্ট, আমেরিকাও চাইছে না এই ঘটনার প্রভাব পড়ুক দু’দেশের সম্পর্কে। কেরিও সে কারণেই ফোন করেছিলেন। খুরশিদ আজ জানিয়েছেন, কেরি কাল তাঁকেও ফোন করেছিলেন। কিন্তু সেই ফোন ধরতে পারেননি তিনি। শিবশঙ্করের সঙ্গে কথা বলার সময়ে কেরি যে দুঃখপ্রকাশ করেছেন, সেটা হোয়াইট হাউসের ইঙ্গিতে বলেই মনে করছে দিল্লি। তবে খুরশিদ এ-ও বলেছেন, ভারত-মার্কিন বন্ধুত্বের সম্পর্কে এই ঘটনার আঁচ না পড়লেও মার্কিন প্রশাসনের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। সংসদীয় মন্ত্রী কমল নাথের ভাষায়, দুঃখপ্রকাশ নয়, আমেরিকাকে ক্ষমাই চাইতে হবে।
এ দিন কিন্তু বারবারই সুসম্পর্ক রক্ষার বার্তা দিয়েছে আমেরিকা। এর আর একটি প্রমাণ, আমেরিকার সরকারি আইনজীবী প্রীত ভারারর বিবৃতি থেকে মার্কিন প্রশাসনের দূরত্ব তৈরি করা।
কী বলেছিলেন প্রীত? দেবযানীকে রাস্তাতেই হাতকড়া পরানো হয়েছে বলে যে অভিযোগ, তা অস্বীকার করে ভারারা জানান, দেবযানীর সঙ্গে সমস্ত রকম সৌজন্যই দেখানো হয়েছিল। মার্কিন নাগরিকরা যে ব্যবহার পেয়ে থাকেন, দেবযানীও তা-ই পেয়েছেন। গ্রেফতারের পর তাঁকে ফোন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। প্রশাসনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল, পদমর্যাদার কথা না ভেবে অভিযুক্তের বিচার করা। তাঁর শরীর তল্লাশি করা হলেও এক জন মহিলা আধিকারিকই তা করেছেন। মার্কিন বিচার মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, দেবযানীর গোপনাঙ্গে তল্লাশি চালানো হয়নি।
একই সঙ্গে অবশ্য ভারতের একটি অভিযোগও ভারারা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছেন। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে বলা হয়েছে, পরিচারিকাকে প্রতিশ্রুতি মতো বেতন না দিয়ে বেশি খাটানোর অভিযোগে নিউ ইয়র্কে দেবযানীকে গ্রেফতার করে নিউ ইয়র্কের পুলিশ। এর দু’দিন আগে তাঁর পরিচারিকার স্বামী ও দুই সন্তানকে মার্কিন ভিসা দিয়ে নিউ ইয়র্কে যাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। এ নিয়ে গত কালই প্রশ্ন তোলা হয়। আজ এই ঘটনাটি মেনে নিয়ে প্রীত যুক্তি দিয়েছেন, দেবযানীর পরিচারিকা সঙ্গীতা রিচার্ডের পরিবারকে সুরক্ষা দিতেই তাঁদের ভারত থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে। কাদের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা? ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভারারার বক্তব্য, সঙ্গীতার মুখ বন্ধ করতে এবং তাঁকে ভারতে ফিরে যেতে বাধ্য করতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাই বিপদের আশঙ্কায় সঙ্গীতার পরিবারকে নিউ ইয়র্কে সরিয়ে আনা হয়েছে।
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ভারারার কথার গুরুত্ব দিতে চায়নি দিল্লি। খুরশিদ সে কথা জানিয়ে দেন। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিনও জানান, দেবযানীকে কোনও রকমের সৌজন্য দেখানো হয়নি। কূটনীতিকদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে ভিয়েনা সনদও মানা হয়নি। তাঁর সাফ কথা, “গোটা ঘটনায় এক জনই হেনস্থার শিকার হয়েছেন। তিনি হলেন দেবযানী।”
বিদেশ মন্ত্রকের পাল্টা অভিযোগ, মার্কিন প্রশাসনই এখানে ভারতের বিচার ব্যবস্থায় নাক গলিয়েছে। সঙ্গীতা রিচার্ডের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে মামলা চলছে জানা সত্ত্বেও তাঁর পরিবারের লোকেদের নিউ ইয়র্কে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মার্কিন সরকারি আইনজীবী নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন, ভারতের আইনি প্রক্রিয়া থেকে সঙ্গীতার পরিবারকে বাঁচাতেই এমনটা করা হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেন, “কোনও গণতান্ত্রিক মিত্র রাষ্ট্রের আইনি প্রক্রিয়ায় এই ভাবে নাক গলানো সেই দেশের আইনি ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তোলে।” আমেরিকায় ভারতীয় দূতাবাসের তরফে আজ জানানো হয়েছে, দেবযানীকে গ্রেফতারের আগে কোনও ভাবে সতর্কও করা হয়নি।
পরে রাতে মার্কিন বিদেশ দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শেরম্যান কথা বলেন ভারতের বিদেশসচিব সুজাতা সিংহের সঙ্গে। তখনই ওয়েন্ডি জানান, ভারারার কথার থেকে দূরত্বই রাখছে মার্কিন প্রশাসন। নয়াদিল্লি যে গোটা ঘটনায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ এবং ভারতে যে এর ফলে আমেরিকার বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তা বুঝতে পেরেই ক্ষোভ কমাতে এমন একাধিক পদক্ষেপ করেছে মার্কিন প্রশাসন। তাদের বক্তব্য, এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ভারত-মার্কিন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এই ঘটনা দিয়ে মাপা যাবে না। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জে কার্নে জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে গোটা ঘটনাটাই জানানো হয়েছে। কার্নে বলেন, “আমরা বুঝতে পারছি, ভারতে অনেকের কাছেই এটা স্পর্শকাতর বিষয়। এই গ্রেফতারের প্রক্রিয়ায় সমস্ত আইনানুগ প্রক্রিয়া মানা হয়েছে কি না এবং সব রকম সৌজন্য দেখানো হয়েছে কি না, তার পর্যালোচনা হবে।”
একই ভাবে মার্কিন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মেরি হার্ফ জানিয়েছেন, বিদেশসচিব কেরি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছেন। কেরির মেয়ে দেবযানীর সমবয়সী। তাই তিনি এই ঘটনায় দেবযানীর প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে মেননের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। অন্য দেশে কর্মরত নিজেদের কূটনীতিকদের জন্য তাঁরা যে ধরনের সম্মান ও সৌজন্য আশা করেন, আমেরিকাতেও যাতে বিদেশি কূটনীতিকরা একই সৌজন্য পান, তাতে গুরুত্ব দিয়েছেন কেরি।
নয়াদিল্লি এখন চাইছে, ক্ষমার্প্রাথনার পাশাপাশি ওয়াশিংটন দেবযানীর বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিক। আজ খুরশিদ নিজেই এই দাবি তুলেছেন। কিন্তু দেবযানীর পরিচারিকা সঙ্গীতার আইনজীবীরা যে তা মানবেন না, আজ তারও ইঙ্গিত মিলেছে। সঙ্গীতার আইনজীবী জানা সুসম্যানের বক্তব্য, গোটা ঘটনায় নজর দেবযানীর অপরাধের বদলে তাঁর হেনস্থার দিকে ঘুরে গিয়েছে। তবে সংবাদমাধ্যমে যা-ই প্রচার হোক না কেন, দেবযানীর বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণই আদালতে কথা বলবে। ভারতীয় কূটনীতিক শুধু প্রতিশ্রুতির তুলনায় কম বেতন দেননি, বেতন নিয়ে মার্কিন প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন। এই মামলায় পরবর্তী শুনানি ১৩ জানুয়ারি। কিন্তু মার্কিন সরকারি আইনজীবী শুনানির তারিখ পিছোতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
|
চাপান-উতোর |
• দেবযানী কাণ্ডের কথা জানানো হয়েছে বারাক ওবামাকে।
• গ্রেফতার-তল্লাশি কি আইন মেনে, পর্যালোচনা করবে হোয়াইট হাউস।
• শুধু দুঃখপ্রকাশ নয়, ক্ষমাই চাইতে হবে, বললেন কমল নাথ।
• পরিচারিকার পরিবারকে সে দেশে নিয়ে যাওয়া হয়, কবুল আমেরিকার। এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন দিল্লির। |
|
পুরনো খবর: আর বিশেষ সুবিধা নয় কলকাতাতেও |
|
|
|
|
|