এক দিকে আমির খান। যার সিনেমা দেখার জন্য অপেক্ষা বছরভর। কখনও বা তার থেকেও বেশি। সেই নায়ক যখন ‘ধুম-থ্রি’তে খলনায়কের ভূমিকায় তখন তাকে দেখার আগ্রহ তো থাকবেই।
অন্য দিকে, বাংলা উপন্যাসের নায়ক সিনেমার পর্দায়। ছোটবেলায় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চাঁদের পাহাড়’ পড়ে কল্পনায় শঙ্করের সঙ্গী হয়নি এমন বাঙালি কমই আছে। সেই শঙ্করের ভূমিকায় কেমন অভিনয় করল দেব? আর খবরের কাগজ, টিভির দৌলতে তো জানা হয়ে গিয়েছে আফ্রিকায় শ্যুটিংয়ের নানা গল্প। পর্দাতেও সেই রোমাঞ্চ রয়েছে তো?
শুক্রবার দিনভর এই প্রশ্নের উত্তর হাতড়াতেই ভিড় উপচে পড়ল বহরমপুর, কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন হলে। বড় দিনের উৎসবের ছুটির শীতের আমেজে হিন্দি ও বাংলা ওই দুটি সিনেমা শুরুর দিনই সাড়া জাগিয়েছে দর্শক মহলে। দর্শক তালিকায় রয়েছে দশ বছরের খুদে থেকে বয়স্করাও। দর্শকদের ভিড় দেখে খুশি সিনেমা হল কর্তৃপক্ষও।
চাঁদের পাহাড় একই সঙ্গে চলছে বহরমপুরের গোরাবাজার মোহন সিনেমা হলে ও কাদাইয়ের সূর্য সিনেমা হলে। তবে মোহনে যেখানে একটি মাত্র ‘শো’ চলছে, সেখানে সূর্যতে চলছে তিনটি করে শো। সিনেমা হলের কর্মী প্রবীণ বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সিনেমা হল প্রায় ভর্তি বললেই চলে। শেষ মুহূর্তে টিকিটের চাহিদা তৈরি হতে পারে মনে করে অনেকেই অগ্রিম টিকিট কেটেছেন।” |
বহরমপুর ও কৃষ্ণনগরের সিনেমাহলে ভিড়। —নিজস্ব চিত্র। |
শুক্রবার দুপুরে কৃষ্ণনগরে শহরের একমাত্র সিনেমা হলের টিকিট কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন। অপেক্ষা ক্যাটরিনা কাইফ-আমির খান অভিনীত ধুম-থ্রি দেখার জন্য। সামান্য চিৎকার শুনে একটু এগোতেই বোঝা গেল সমস্যা টিকিট না পাওয়া ঘিরে। হল তো ‘হাউসফুল’। অপেক্ষা আরও একটা দিনের। প্রথম দিনের প্রথম শো না দেখতে পাওয়ার আক্ষেপ এক ঝাঁক কলেজ পড়ুয়ার চোখে-মুখে।
চাঁদের পাহাড়ের নায়ক দেবের আগের ছবি ‘রংবাজ’ হাউসফুল চলেছে কয়েক দিন আগেও। এ বার সপরিবারে চাঁদের পাহাড় দেখতে এসেথেন এণন পরিবারের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ম্যাটিনি শো দেখে বেরিয়ে আসা অভিজ্ঞান সাহার চোখেমুখে উচ্ছ্বাস। আবেগ জড়ানো গলায় সিনেমা নিয়ে তাঁর কথা, “ফাটাফাটি ছবি। দেব তো অসাধারণ! সেই সঙ্গে দুর্দান্ত ফটোগ্রাফি।” আবার ধুম-থ্রি সিনেমার টিকিট না পেয়ে অঙ্কুশ সাহা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে হলে এসেছেন ‘চাঁদের পাহাড়’ দেখতে।
‘চাঁদের পাহাড়’ থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে ধুম-থ্রি চলছে ঋত্বিক সদনে। আমির খান-অভিষেক বচ্চনের টানে শনিবারও ‘হাউসফুল’। সদন কর্তৃপক্ষ ভিড় সামাল দিতে দিনে চার বার সিনেমা দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শনিবারের টিকিটও শেষ। খড়গ্রাম থেকে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে সৌরিন পাল ধুম-থ্রি দেখতে এসেছেন। সিনেমার বিরতিতে বেরিয়ে তিনি বলেন, “বহরমপুরে কোনও কাজ নেই। শুধুই ধুম-থ্রি দেখার জন্যই এসেছি।” কেমন লাগল? উত্তর, “সিনেমা না দেখলে বোঝানো যাবে না কেমন!”
তবে এ দিক থেকে কৃষ্ণনগর কিছুটা পিছিয়ে। শহরের কোনও হলে মুক্তি পায়নি ‘চাঁদের পাহাড়’। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়া পলি ভট্টাচার্যর আক্ষেপ, ‘‘চাঁদের পাহাড় আমার প্রিয় উপন্যাস। সেলুলয়েডের পর্দায় চাঁদের পাহাড় দেখব ভেবেছিলাম। কিন্তু হতাশ হতে হল। তবে আমি আর আমার বন্ধুরা ঠিক করেছি কলকাতার হলে গিয়ে ওই সিনেমা দেখব।’’ দিনের শেষে এগিয়ে রইল কোন সিনেমা? কাকে দেখতে ফের হলমুখী হবে দর্শক? কোন সিনেমার আলোচনায় মাতবে ক্যান্টিন, কলেজ মাঠ, বাড়ির রক? উত্তর দেবে সময়। আর দর্শকরাই। |