গোটা ক্যানভাস জুড়ে নানা বর্ণের হলুদের ছটা। আর ঠিক মাঝখানটায় যেন সোনা ঝরা রং। ভারতীয় শিল্পী ভি এস গায়তোঁড়ের এই বিমূর্ত নিসর্গই ছাপিয়ে গেল আগের সমস্ত রেকর্ড। মুম্বইয়ের তাজ মহল হোটেলে গত কাল বসেছিল ক্রিস্টির নিলামের আসর। ভারতে এই প্রথম বার। সব হিসেবনিকেশ ওলট-পালট করে প্রথম আসরেই বাজিমাত করলেন এ দেশের শিল্পীরা।
দেশ জুড়ে সব খ্যাতনামা শিল্পীর ৮১টি ছবি উঠেছিল নিলামে। বিক্রি হয়ে গিয়েছে তার মধ্যে ৭৯টিই। “এক কথায়, অভূতপূর্ব সাড়া”, জানিয়েছেন ক্রিস্টির সিইও স্টিভেন মার্ফি। সব চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হয়েছে গায়তোঁড়ের নিসর্গের তৈলচিত্রটি। দর উঠেছে ২৩ কোটিরও বেশি। সব ছবি মিলিয়ে যা বিক্রিবাটা হবে বলে হিসেব করেছিলেন কর্মকর্তারা, শেষে দেখা গিয়েছে দাম উঠেছে তার দ্বিগুণেরও বেশি মোট ৯৬ কোটি।
ভারতে ক্রিস্টির নিলাম দেখার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না বলে যেমন ভিড় জমিয়েছিলেন দেশের নানা প্রান্তের সংগ্রাহক, তেমনই উৎসাহ কম ছিল না বিদেশিদের মধ্যেও। যাঁরা হাজির হতে পারেননি, তাঁদের জন্য ছিল ফোনে নিলামের সুযোগ। গায়তোঁড়ের ছবির জন্য ফোনেই এই আকাশছোঁয়া দর হেঁকেছিলেন এক মার্কিন নাগরিক। ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখবেন বলে।
উজ্জ্বল সোনালি রঙের এই নিসর্গের ছবিটি এত দিন ছিল মুম্বইয়ের গ্যালারি মালিক কেকু ও খুরশেদ গাঁধীর কাছে। গত কাল নিলাম পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন যিনি, সেই উগো কে উইহি (এশিয়ান আর্টের ডিরেক্টর)-র কথায়“প্রচুর ছবির ভিড়েও এই কাজ আলাদা করে নজর টানবে। প্রথম দিকের মিনিয়েচার পেন্টিং-এর প্রভাব এতে ভরপুর। এ রকম অসাধারণ ছবি বাজারে আর দু’টো মিলবে না।”
শিল্পীর একেবারে প্রথম দিকের কাজের মধ্যে অন্যতম এই তেল-ছবি। ১৯৭৯ সালে আঁকা, নামহীন এই ছবির কোণার দিকে হিন্দিতে সই-ও আছে গায়তোঁড়ের। স্নাতক পাশ করেন মুম্বইয়ের জে জে স্কুল অব আর্ট থেকে। ’৫৭ সালে টোকিওর ‘ইয়াং এশিয়ান আর্টিস্ট’ প্রদর্শনীতে জেতেন জীবনের প্রথম পুরস্কার। সাত বছরের মাথায় অভিজাত রকফেলার ফাউন্ডেশন থেকে আসে সুযোগ। ভাল অঙ্কের অনুদান পান কাজের জন্য। তার পর বেশ কয়েক’টা বছর কাটিয়েছিলেন নিউ ইয়র্কে। সেখানে মার্ক রথকোর আঁকা থেকে এতটাই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন যে তাঁকে এককালে ভারতের রথকো বলেই ডাকতেন অনেকে। আধুনিক ভারতীয় বিমূর্ত ছবির এই কারিগরকে ১৯৭১ সালে পদ্মশ্রী দেয় ভারত সরকার। ২০০১ সালে দিল্লিতে মারা যান ভি এস গায়তোঁড়ে। মাস কয়েক আগে তাঁর আরও একটা ছবি নজর কাড়ে বিশ্বের তাবড় শিল্পপ্রেমীদের। লন্ডনে সোদবির নিলামে চলতি বছর জুন মাসে ওই ছবিটি বিক্রি হয় প্রায় ছ’কোটি টাকায়।
গত কাল ক্রিস্টির আসরে কোটির তালিকায় অবশ্য গায়তোঁড়ে একা ছিলেন না। বরং বলা চলে কোটিপতির ছড়াছড়ি। তায়েব মেহতার ‘মহিষাসুর’ ১৯ কোটিতে কিনেছেন এক মার্কিন সংগ্রাহক। ভূপেন কক্করের নামহীন ছবির দর উঠেছিল ৪.৮ কোটি। এর ঠিক পেছনেই আছে মনজিৎ বাওয়া-র ‘গজলক্ষী’। বিক্রি হয়েছে প্রায় চার কোটিতে। এ বছরই প্রয়াত হয়েছেন শিল্পী গণেশ পাইন। তাঁর একটি নামহীন ছবি ২.৩ কোটিতে বিকোল কালকের নিলামে। জীবদ্দশায় এত দাম ওঠেনি তাঁর কোনও ছবির।
অমৃতা শের গিল থেকে রবি ঠাকুর, নিলামের দৌড়ে পিছিয়ে নেই এঁরাও। তবে তাদের গায়ে ইতিমধ্যেই জাতীয় সম্পদের তকমা থাকায় দেশ ছাড়তে পারবে না ওই দু’টো ছবি। |