বৈধ কাগজপত্র না থাকায় মহম্মদবাজারের দুই পাথর ব্যবসায়ী-সহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে বাঁকুড়া পুলিশ। এই ঘটনায় বীরভূম জেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেন না, বৈধ কাগজপত্র না দেখে বীরভূম থেকে পাথর বোঝাই ট্রাকগুলি ছাড়া হল কেন?
খাদান থেকে পাথর নিয়ে যাওয়ার আগে কাগজপত্র দেখার দায়িত্ব ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের। বীরভূম জেলা ভূমি সংস্কার আধিকারিক শ্যামাশিস রায় বলেন, “জেলা প্রশাসন এখন বেশ সক্রিয়। বৈধ কাগজপত্র দেখার জন্য জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ১২টি চেক পোস্ট আছে। ওখানকার কর্মীরা ঠিকঠাক কাজ করছেন কি না, তাও নজরদারি করার জন্য একটি দল রয়েছে।” এত কিছু ব্যবস্থা থাকার পরেও, বৈধ কাগজপত্র না থাকায় বুধ ও বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর এবং পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৫৪টি পাথর বোঝাই ট্রাক আটক করেছে। যার অধিকাংশই বীরভূমের মহম্মদবাজার এলাকার। এ প্রসঙ্গে শ্যামাশিসবাবু বলেন, “এতগুলি গাড়ি চালান ছাড়া যদি এখান থেকে গিয়ে থাকে, তা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।” জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনারও দাবি, “জেলা প্রশাসন সক্রিয়। অথচ এমন ঘটনা কী করে হল, ভূমি দফতর বিষয়টি দেখছে।” |
এমনই অবস্থা পাথর খাদান এলাকার রাস্তাগুলির। ঢোলকাটা যাওয়ার রাস্তা। |
এ দিকে, পাঁচামি এলাকার পাথর বোঝাই ট্রাক আটক ও গ্রেফতারের ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার মহম্মদবাজারে রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন ট্রাক মালিক ও অন্য কর্মীরা। ১৫-২০ মিনিট অবরোধ চলে। অবরোধকারীদের দাবি, বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্বেও অন্যায় ভাবে তাঁদের ধরা হয়েছে। ট্রাক মালিকদের পক্ষে রাজীব ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, “৩২-৩৪ টন পাথরের চালান আছে। অথচ গাড়িগুলিকে ধরা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও মালিকদের হেনস্থা করা হয়েছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচামি পাথর খাদান এলাকায় দৈনিক প্রায় ১৫০০ ট্রাক যাওয়া আসা করে। জেলাশাসক জগদীশ প্রসাদ মিনার দাবি, “খাদান এলাকা থেকে রাজস্ব আদায় বেড়ে ৪৪ কোটি হয়েছে। বছর তিনেক আগে ৭ কোটি ছিল।” যদি রাজস্ব বেড়েই থাকে, তা হলে এলাকার উন্নয়ন হচ্ছে কোথায়? এই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা। কারণ, সোঁতসাল মোড় থেকে পাঁচামি হয়ে ঢোলকাটা, রাইপুর থেকে হরিণসিঙা হয়ে ঢোলকাটা দু’টি রাস্তার অবস্থা ভয়ঙ্কর খারাপ। এ ছাড়া, সাগরবাঁধি, তালবাঁধ-সহ সমস্ত খাদান এলাকার রাস্তাই বেহাল। পূর্ণিমা হাঁসদা, লক্ষ্মী সোরেন, বাবুরাম মাড্ডি, জটাই কিস্কুদের ক্ষোভ, “এখানকার পাথর নিয়ে গিয়ে অন্য জায়গায় রাস্তা ও বড় বড় অট্টালিকা গড়ে উঠছে। অথচ আমাদের এলাকার উন্নতি নেই।” আদিবাসী গাঁওতা নেতা সুনীল সোরেন, সম্পাদক রবীন সোরেন বলেন, “এখান থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হলেও প্রশাসন ফিরে তাকায় না। রাস্তা, পানীয়, স্বাস্থ্য সবেরই খারাপ অবস্থা।” |
পাঁচামি থেকে বিপজ্জনক এবং ওভারলোডিং করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পাথর।
অথচ কোনও দিকেই প্রশাসনের নজর নেই বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। |
সত্যিই রাস্তাঘাট, পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। পরিষেবার উন্নতির দাবিতে বহুবার নানা জায়গায় বিক্ষোভ-অবরোধ রয়েছে। শুধুই প্রশাসনের তরফ থেকে আশ্বাস মিলেছে। অবস্থার উন্নতি হয়নি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেআইনি ভাবে পাথর নিয়ে যাওয়া এবং ওভারলোডিং-এর জন্য রাস্তাঘাটের শোচনীয় অবস্থা। পাঁচামি মাইনস অ্যান্ড ক্র্যাশার ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজির হোসেন মল্লিকের দাবি, “যাঁদের খাদান ও ক্র্যাশার আছে, তাঁদের সমস্ত পারমিট বৈধ। কিছু কিছু ক্র্যাশারের পারমিট অবৈধ হলেও হতে পারে। শুধু পাঁচামি এলাকার পাথর যাচ্ছে তা নয়। পাঁচামির পাথরের সুনাম থাকায়, এখানকার নাম ব্যবহার করে অন্য এলাকার পাথরও বেরিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের এ দিকটাও দেখা দরকার।”
জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী অবশ্য বলেন, “বাঁকুড়ায় পাথর গাড়ি ধরার বিষয়টি শুনেছি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতর দেখছে। রাস্তা সংস্কার-সহ এলাকার উন্নয়নের বিষয়ে জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। শীঘ্রই অবস্থার পরিবর্তন হবে।” |