পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলার ফলাফল ছিল শোচনীয়। তার পরে শহরের পুরসভা ভোটে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘিরে প্রবল বিতর্ক এবং তার জেরে দলের অন্দরে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বর্ধমান জেলা। কর্মী-সমর্থকদের মনোবলেও তার প্রভাব পড়ছে। লোকসভা ভোটের আগে সেই জেলার সংগঠনকে চাঙ্গা করতে এ বার সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাতে চাইছে আলিমুদ্দিন।
বর্ধমানের নেতা এবং সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য নিরুপম সেন অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন। এই অবস্থায় বর্ধমানের সংগঠনকে উজ্জীবিত করতে বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে দলের অন্য দুই পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও সূর্যকান্ত মিশ্রকে। লোকসভা ভোটের প্রস্তুতির কথা মাথায় রেখেই মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর বর্ধমানে সমাবেশ করতে যাচ্ছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু। পঞ্চায়েত ভোটের পরে এই প্রথম বার।
তার আগে রবিবার তাঁর যাওয়ার কথা হুগলির চুঁচুড়ায়। পরে যাওয়ার কথা আর এক কোণঠাসা জেলা পূর্ব মেদিনীপুরেও। বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু ইতিমধ্যেই বর্ধমান জেলায় ঘুরে এসেছেন। ওই জেলায় আরও সফরসূচি রয়েছে তাঁর। প্রথম সারির নেতাদের সামনে রেখে আলিমুদ্দিন আপাতত বার্তা দিতে চাইছে, পুরনো বিতর্ক পিছনে ফেলে লোকসভা ভোটের আগে রাজ্য সিপিএম এখন বর্ধমান জেলার পাশেই।
ভোট বয়কটের পথ যে কোনও ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়, দলের অন্দরে এই মতেরই প্রবক্তা ছিলেন বুদ্ধবাবু। শেষ পর্যন্ত রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী তাঁর মত মেনেই বর্ধমান জেলা নেতৃত্বের সিদ্ধান্তকে খারিজ করেছিল। আবার দলের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সভাপতি পদে বর্ধমান জেলার নেতা আভাস রায়চৌধুরীর জায়গায় সম্প্রতি আনা হয়েছে গৌতম দেবের জেলা উত্তর ২৪ পরগনার সায়নদীপ মিত্রকে। কিন্তু এ সবের জেরে দলের মধ্যে একঘরে হয়ে-পড়া বর্ধমান জেলা যাতে মনোবল হারিয়ে না ফেলে, তা-ও এখন লোকসভা ভোটের আগে মাথায় রাখতে হচ্ছে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বকে। সে জন্যই যাচ্ছেন স্বয়ং বুদ্ধবাবু। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “পঞ্চায়েত ভোটে বর্ধমান জেলায় যে লাগামছাড়া সন্ত্রাস হয়েছিল, এটাও ঘটনা। পরিস্থিতি ওই রকম না-হলে পঞ্চায়েতের ফল অন্য রকমও হতে পারত। আক্রমণের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও লড়াই যে ছেড়ে দেওয়া যাবে না, সেটাই সকলে এখন বলছি। সব জেলার জন্যও বলছি।”
সিপিএমের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট বলছে, বর্ধমানের তিনটি লোকসভা আসনেই এ বার অত্যন্ত কঠিন লড়াই। গত বারের জেতা তিনটি আসনেই প্রার্থী বদলানো হবে, না নতুন-পুরনো সমন্বয় ঘটানো হবে, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে দলে। জানুয়ারিতে রাজ্য কমিটির বৈঠকে লোকসভার প্রস্তুতি নিয়ে আরও সবিস্তার আলোচনা হবে। |