প্ররোচনায় মৃত্যু ব্যবসায়ীর, অভিযুক্ত তৃণমূল
ছেলের মৃত্যুতে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ জানাতে গেলে গুরুত্ব দেয়নি পুলিশ। আদালত নির্দেশ দিলেও নড়ে বসেনি থানা, বর্ধমানের পুলিশ সুপারের কাছে এমন অভিযোগ জানাল মাস দেড়েক আগে অস্বাভাবিক মৃত্যু হওয়া এক ব্যবসায়ীর পরিবার। শুক্রবার পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বর্ধমান থানাকে অবিলম্বে এই ঘটনার তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
গত ১৫ নভেম্বর বর্ধমানের দুবরাজদিঘির বাসিন্দা শেখ সাজেদের মৃত্যু হয়। তাঁর মা হাসনা বেগম আদালতে দায়ের করা অভিযোগে জানিয়েছিলেন, বর্ধমানের রেল ওভারব্রিজের কাছে তাঁদের একটি চায়ের দোকান রয়েছে। সেটি পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস। দোকানটি তৃণমূল আশ্রিত কিছু দুষ্কৃতী জোর করে বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করায় সাজেদ প্রতিবাদ জানান। তার জেরে তাঁকে মারধর করে দোকানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাজেদ বারবার দোকান খোলার জন্য অনুরোধ করলে ওই দুষ্কৃতীরা বলে, দু’লক্ষ টাকা না দিতে হবে। তা না হলে দোকানের সামনে গেলে বা দোকান খোলার চেষ্টা করলে পিটিয়ে মারার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
পরিবারের দাবি, এই ঘটনার জেরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ৯ নভেম্বর গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন সাজেদ। প্রথমে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, পরে অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ১৫ নভেম্বর অনাময়ে তাঁর মৃত্যু হয়। সাজেদের স্ত্রী সুলতানা বেগমের দাবি, তাঁর স্বামী তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র সদস্য।
শেখ সাজেদের মা ও স্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।
তিনি সংগঠনের বর্ধমান তৃণমূল ওভারব্রিজ হকার্স ইউনিয়নেরও সদস্য ছিলেন। সুলতানার অভিযোগ, “স্থানীয় তৃণমূল নেতা ইফতিকার আহমেদ ওরফে পাপ্পুর তোলাবাজির প্রতিবাদ করার জন্যই আমার স্বামীকে দোকান থেকে উচ্ছেদ করে দু’লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ আমাদের সাহায্য না করায় অসহায় অবস্থায় পড়ি। আজও একমাত্র আয়ের উৎস ওই দোকানটি খুলতে না পেরে প্রায় অনাহারে দিন কাটাচ্ছি। পুলিশ সুপারকে সে কথাই জানাতে এসেছিলাম। তিনি বর্ধমান থানাকে ডেকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।”
হাসনা বেগম জানান, তাঁরা সিজেএম আদালতের স্মরণাপন্ন হলে অবিলম্বে ওই ঘটনায় এফআইআর দায়ের করে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বর্ধমান থানাকে। থানা তাতেও গুরুত্ব দেয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। হাসনা বেগম আদালত ও পুলিশ সুপারের দফতরে যে অভিযোগ জমা দিয়েছেন, তাতে ইফতিকার আহমেদ, মনসুর রহমান মল্লিক, শেখ স্বপন ও শেখ আলো নামে চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। ইফতিকার আহমেদ এলাকায় তৃণমূল নেতা হিসেবে পরিচিত। পুলিশ সুপার বলেন, “আমি বর্ধমান থানার পুলিশকে ডেকে ঘটনার তদন্ত শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছি। ওই পরিবারের সদস্যেরা যা দাবি করছেন, তা যদি সত্যি হয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দোকানটিও খোলানো হবে।”
ইফতিকার আহমেদের অবশ্য দাবি, “ওই দোকানটি ওভারব্রিজে ওঠার রাস্তার এক পাশে ছিল। নতুন করে রাস্তা তৈরির জন্য অন্য অনেকগুলি দোকানের সঙ্গে সেটিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে টাকা চেয়ে হুমকির যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা মিথ্যা।” বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমি এই ঘটনার কিছুই জানি না। অভিযাগ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা হবে।” বর্ধমান থানা অবশ্য অভিযোগ নিতে অনীহার অভিযোগ মানতে চায়নি। থানার তরফে দাবি করা হয়, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁদের নাম-ধাম বিশদে জানাতে বলা হয়েছিল অভিযোগকারীদের। কিন্তু তার পরে তাঁরা আর আসেননি। শুক্রবার সন্ধ্যায় বর্ধমান থানার আইসি দিলীপকুমার গঙ্গ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই পরিবারের সদস্যদের দোকানটি খুলতে বলা হয়েছে। যদি কেউ তাতে বাধা দেয়, তাহলে গ্রেফতার করা হবে। সাজেদকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার একটি মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজা হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.