দুপুরে ছাত্র পরিষদ ও টিএমসিপির মধ্যে মারপিটের পরে বৃহস্পতিবার রাতেই কলেজে শান্তি বজায় রাখতে সর্বদল বৈঠক ডেকে ছিলেন মহকুমাশাসক আর অর্জুন। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টা পরেই আবারও দু’দলের সংঘর্ষে উত্তপ্ত হল কাটোয়া কলেজ।
রাতের সর্বদল বৈঠকে মহকুমাশাসকের সঙ্গে হাজির ছিলেন কাটোয়া মহকুমার পুলিশ আধিকারিকেরা। সেখানে সব দলের প্রতিনিধিরা কাটোয়া কলেজে শান্তি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও কংগ্রেস ও তৃণমূলের আশঙ্কা ছিল, কাটোয়া কলেজে অশান্তি বাড়বে।
সেই আশঙ্কা সত্যি করে বৈঠকের কয়েক ঘন্টা কাটতে না কাটতেই শুক্রবার দুপুরে ফের গোলমাল বাধল কাটোয়া কলেজে। বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ প্রায় আধ ঘন্টা ধরে ছাত্র পরিষদ ও টিএমসিপির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। কলেজের ভিতর মিছিল করে স্লোগান দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত। দু’পক্ষের মধ্যে ব্যপক ইটবৃষ্টি হয়েছে বলেও অভিযোগ। ছাত্র সংগঠনগুলির দাবি, ওই ঘটনায় দু’পক্ষের ১০ জন জখম হয়েছেন। |
ঘটনার খবর পেয়েই এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব দাসের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ যায় কাটোয়া কলেজে। সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর পুরসভা মোড়, কলেজ মাঠ এলাকায় টহল দেয় তারা। এসডিও (কাটোয়া) তথা কাটোয়া কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি আর অর্জুন কলেজে এসে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শনিবার পর্যন্ত ক্লাস বন্ধ রাখা হচ্ছে। পরে নিরাপত্তার দিকটা খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হলে তবেই ক্লাস চালু করার দিকে এগোব। ছাত্র সংগঠনগুলির সংঘর্ষে কলেজের সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে কাটোয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।”
এ দিকে, ওই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহর তৃণমূলের নেতারা। শুক্রবার বিকালে কাটোয়ার মহকুমাশাসকের কাছে বিষয়টি নিয়ে স্মারকলিপিও দেয় তৃণমূল। দলের কাটোয়া শহর সভাপতি অমর রামের অভিযোগ, “পুলিশ পক্ষপাত করেছে। এক তরফা ভাবে আমাদের সমর্থক ছাত্রদের উপর পুলিশ লাঠি চালিয়েছে। তাতে টিএমসিপি-র তিন সমর্থক গুরুতর জখম হয়ে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। অথচ ওই পুলিশের সামনেই ছাত্র পরিষদ কলেজের ভিতর টিএমসিপিকে মারধর করল, তখন পুলিশ চোখ বুজে ছিল।” এ বিষয়ে পুলিশ প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে রাজি না হলেও জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, “ছাত্র পরিষদ কলেজের সামনের দিক থেকে আর টিএমসিপি কলেজের পিছন দিক থেকে তেড়ে আসছিল। আমরা ছিলাম কলেজের কাছে। সেখানে তখন ইট বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় পরিস্থিতি সামলাতে আমরা দু’দিকেই লাঠি নিয়ে তাড়া করেছি। কোনও পক্ষপাত করা হয়নি।” এসডিও (কাটোয়া) আর অর্জুন বলেন, “কাটোয়া কলেজকে শান্ত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সাড়ে দশটা নাগাদ কাটোয়া কলেজের ভিতরে ছাত্র সংসদের সামনে থেকে শ্রেণিকক্ষের সামনে পর্যন্ত টিএমসিপি-র ১৪-১৫ জন কর্মী-সমর্থক স্লোগান দিচ্ছিল। ছাত্র পরিষদ তাদের স্লোগান দিতে বাধা দেয়। তারপরেই দু’পক্ষের মধ্যে বচসা-লাঠালাঠি, সেখান থেকে ইটবৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। ছাত্র পরিষদের নেতা শেখ সোলেমানের অভিযোগ, “কলেজের সাধারণ পড়ুয়াদের কাছ থেকে পরিচয়পত্র কাড়ছে, আবার নিয়মবহির্ভূত ভাবে কলেজের ভিতর রাজনৈতিক প্রচার করছিল টিএমসিপি। সেই সময় কলেজে স্নাতক স্তরের ক্লাস চলছিল। তাই ছাত্র সংসদের সদস্যরা ওদের বারণ করে। তখনই ওরা আমাদের উপর চড়াও হয়।” তবে টিএমসিপি-র পাল্টা অভিযোগ, ছাত্র পরিষদের সদস্যরা স্লোগান দিচ্ছিল দেখে আমাদের কর্মী-সমর্থকেরাও স্লোগান দিতে থাকে। সেই দেখেই ছাত্র পরিষদ তাঁদের উপর হামলা চালায়। টিএমসিপি-র বর্ধমান জেলার সহ-সভাপতি শুভেন্দু দাসের অভিযোগ, “আমাদেরকে লাঠি, রড ও উইকেট দিয়ে কলেজের ভিতর পেটানো হয়েছে। আর কম পড়ুয়া রয়েছে, এমন শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে পরিচয়পত্র কেড়েছে ছাত্র পরিষদ।”
এ দিন কলেজে গিয়ে দেখা যায়, গোটা চত্বরে ইটের টুকরো ছড়িয়ে আছে। ভাঙা উইকেট, লাঠির টুকরো পড়ে রয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। কলেজ চত্বর পুলিশে ছয়লাপ। ক্লাস হবে না শোনার পরে পুলিশের ঘেরাটোপেই কলেজ ছাড়েন পড়ুয়ারা। কলেজের এক শিক্ষক বলেন, “কলেজের ভেতর ও বাইরে যেভাবে ইট পড়ছিল তাতে বড় দুর্ঘটনা না হলেও কলেজের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল।” |