পিলিন-এর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বেরিয়ে পড়লাম আমরা সাত জন। গন্তব্য অজিণ্ঠা।
মহারাষ্ট্রের জলগাঁও স্টেশনে পৌঁছলাম পরের দিন দুপুরে। সেই দিনটা ওখানে কাটিয়ে পরের দিন সকালে চললাম জলগাঁও থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরের অজিণ্ঠা গুহা দেখতে। অজিণ্ঠা গুহার ৫ কিলোমিটার আগে ফর্দাপুর। সেখান থেকে বাকি পথের ভরসা ব্যাটারি চালিত বাস। পাহাড়ি পথে গুহা দেখার জন্য ডুলির ব্যবস্থাও অবশ্য আছে।
অজিণ্ঠার ২৭টি গুহায় সজ্জিত অর্পূব সব গুহাচিত্র এবং ভাস্কর্য। এগুলি মনে করিয়ে দেয় বুদ্ধের জীবনী, জাতক কাহিনী এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর কথা। চিত্রাঙ্কনে প্রাকৃতিক রঙই ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে প্রায় ২৫০০ বছর আগের এই শিল্পের কিছু কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। অবশ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগের এগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টা চোখে পড়ে। সপ্তম শতাব্দীর শেষ দিকে বুদ্ধ ধর্মের প্রভাব কমতে থাকে। গুহাগুলিও কালের গহ্বরে জঙ্গলে ঢাকা পড়ে যায়। ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে এগুলি পুনরাবিস্কৃত হয়। গুহার মধ্যের বড় বড় থামগুলি কী ভাবে বড় বড় গুহাগুলিকে হাজার হাজার বছর ধরে অক্ষত ধরে রেখেছে এবং তার জন্য কী নিঁখুত দক্ষতার প্রয়োজন, তা সত্যিই বিস্মিত করে। কিছু গুহা আবার দ্বিতল। যদিও প্রাকৃতিক নিয়মে তার অনেকাংশই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। গুহার ভিতরে হালকা আলোর ব্যবস্থা রয়েছে তবে ক্যামেরার ফ্ল্যাশ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। সুতরাং গুহার ভেতররে ছবি মনে এঁকেই ফিরতে হল। রাত কাটালাম ঔরাঙ্গাবাদে।
|
অজিণ্ঠা গুহা। ছবি লেখকের সৌজন্যে। |
পরের দিনের দ্রষ্টব্য ইলোরা গুহামন্দির। ঔরাঙ্গাবাদ থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে এই মন্দিরটি অবস্থিত। বৌদ্ধ, জৈন ও হিন্দু ধর্মের সমন্বয় লক্ষ্যণীয়। মন্দিরের ভাস্কর্যে এই প্রত্যেকটি ধর্মের দেবদেবী এবং নিজস্ব বিশ্বাসের নানা উল্লেখযোগ্য ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। প্রথম ১২টি গুহা বৌদ্ধ ধর্মের, পরের ১৬টিতে হিন্দু সংস্কৃতির নির্মানশৈলীর ছাপ রয়েছে। আর শেষ ৫টি জৈন মন্দির। হিন্দু গুহাগুলির মধ্যে ১৬ নম্বরটি সর্বোৎকৃষ্ট, এটিই কৈলাস মন্দির। অপূর্ব নির্মানশৈলী বললেও কিছুই বোধহয় বোঝানো যায় না। এখানেই শ্যুটিং হয়েছিল কৈলাসে কেলেঙ্কারি সিনেমাটির। আর ১০ নম্বর গুহাটি একটি চৈত হল। যার সামনের দিকটা রাজকীয় সজ্জায় সজ্জিত।
ওই দিনই ফিরতি পথে ঔরঙ্গজেবের সমাধি দশর্ন করলাম। যেটি ভারতের একসময়ের একচ্ছত্র অধিপতির হলেও বিলাসবর্জিত এবং অনাড়ম্বর। এরপরে গেলাম দৌলতবাদ দূর্গ দেখতে। দূর্গের চারপাশে গভীর পরিখা। পরিখার জলের মধ্যে দিয়ে রয়েছে গুপ্ত সিঁড়ি। যুদ্ধচলাকালীন দীর্ঘ দিনের জল ও রসদ সঞ্চয়ের ব্যবস্থাও দিব্যি লাগল। সর্ম্পূণ দেবগিড়ি পাহাড়টিকে সুন্দর ভাবে কাজে লাগানো হয়েছে দূর্গ তৈরীতে। আর দুর্গের ভিতর গোলকধাঁধাঁয় পথ হারাবার ভয় তো আছেই।
পরের দিন হাল্কা রোদ্দুর গায়ে মেখে চললাম ঔরাঙ্গাবাদ শহর দর্শনে। শহরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিদ্ধার্থ গার্ডেন। ছোট্ট ছিমছাম একটা চিড়িয়াখানা, যা দেখলেই চিরপরিচিত সেই কথাটাই মনে পড়ে- বন্যেরা বনে সুন্দর। এছাড়া জলের চাক্কিও অবাক করল। ১৬২৪ খ্রীষ্টাব্দে মুঘল আমলে তৈরী এই চাক্কি। সেই সময়ে গোটা শহরের জল সরবরাহ করার ব্যবস্থা এখনও সক্রিয়। আর বিবি কা মকবরা পৌঁছে তো বিস্ময়ের শেষ রইল না। এক ঝলক দেখে তাজমহল বলেই ভ্রম হয়। ১৬৫১-১৬৬১ খ্রীষ্টাব্দে রাজপুত্র আজম শাহ তার মা রাধিয়া উল দূরানীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই মকবরা তৈরী করিয়েছিলেন। এর কাছেই রয়েছে ঔরাঙ্গবাদ গুহা। যার সৌন্দর্য্যও ইলোরার থেকে কোন অংশে কম নয়।
এ বার জলগাঁও থেকে ফেরার পালা। জলগাঁও হয়ে বদনেরা জংশন থেকে অমরাবতীতে অম্বাদেবীর বিখ্যাত মন্দির দেখলাম। তারপর চললাম সাতপুরা পাহাড়ের উপর হিলস্টেশন চিকলদাড়া পাহাড়ে। পাহাড়ের গা দিয়ে নেমে এসেছে মেলঘাট অরণ্য। কথিত আছে এখানেই ভীম কীচককে বধ করেছিলেন। কীচক থেকেই কালক্রমে নাম হয় চিকলদাড়া। মহারাষ্ট্র পর্যটন নিগমের ভ্যালি সাইড কটেজ থেকে এখানকার নিরিবিলি, নির্জন, মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করলাম। চিকলদাড়ার আনাচে কানাচে ঝরে চলেছে ঝর্না ধারা। তবে মেলঘাট অরণ্যে প্রায় ২৫০টি বাঘের বসবাস অদেখা থেকে গেল এ যাত্রায়।
এ বার গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসের রির্টান টিকিটে বাড়ির পথ ধরার পালা।
|
নিজেই লিখুন আনন্দবাজারে। অনধিক ৫০০ শব্দে।
খামে ‘রিটার্ন টিকিট’ লিখে পাঠিয়ে দিন:
আনন্দবাজার পত্রিকা,
এ ১০, ডক্টরস কলোনি,
সিটি সেন্টার, দুর্গাপুর - ৭১৩২১৬।
অবশ্যই সঙ্গে দেবেন ছবি
(নিজেদের বাদে)।
ছবি মেল করতে চাইলে durgapuredit@abp.in |
|