অজয়-দামোদরের পাড়ে দেদার বালি চুরি, ফাঁকি রাজস্বে
মরমিয়ে চলছে বালি চুরির ব্যবসা। কোথাও নদী বাঁধের গায়ে কাটা হচ্ছে বালি। কোথাও আবার বালি কেটে নেওয়ায় বিপন্ন সেতু। ফলে প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এমনই অভিযোগ নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, অজয় নদের তীরে লাউদোহা, কাঁকসা ও পাণ্ডবেশ্বরের বিভিন্ন জায়গায় বালি মাফিয়ারা মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে নিয়মিত বালি তুলছে। কাঁকসার দেউল পার্কের কাছ থেকেও তোলা হয় বালি। একই ছবি দামোদরের তীরেও। অন্ডাল, ডিভিসি ব্যারাজ সংলগ্ন এলাকা, গলসির বেশ কিছু জায়গাতেও চলছে অবৈধ বালির কারবার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বালি ব্যবসায়ীর দাবি, বীরভূম জেলা থেকেও বালি মাফিয়ারা এ পাড়ে এসে বালি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

কাঁকসায় অজয়ে চলছে বালি চুরি। বিকাশ মশানের তোলা ছবি।
মাইনস অ্যান্ড মিনারেলস (ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেশন) আইন ১৯৫৭-র ২০১২ সালের সংশোধনী অনুযায়ী নদীখাত থেকে বালি তোলার জন্য সরকারি অনুমতি প্রয়োজন। বালি বিক্রি করে যে অর্থ পাওয়া যায় গড়ে তার ৮ শতাংশ সরকারকে রাজস্ব (রয়্যালটি) দেওয়াও বাধ্যতামূলক। কিন্তু সরকারি আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই দুর্গাপুর মহকুমায় বালি মাফিয়ার দল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে এক দিকে, সরকারের রাজস্বে ফাঁকি পড়ছে, অন্য দিকে বিপাকে পড়ছেন বৈধ বালি ব্যবসায়ীরা।
গলসি ১ ব্লকের অমরপুর, নবঘণ্ট ও বিড়িনপুর গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বালির অবৈধ কারবারিরা নিয়ম না মেনে নদীর পাড়ের কাছ থেকে গভীরভাবে বালি তুলে নিচ্ছে। ফলে দামোদরের পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। গ্রাম থেকে একশো মিটারের মধ্যে চলে এসেছে দামোদর নদের জল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অজয় নদ তীরবর্তী পাণ্ডবেশ্বরের কেন্দ্রা ঘাট, শ্যামলা প্রভৃতি জায়গাতেও বেআইনিভাবে বালির কারবার চলছে।
মহকুমা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, বালি মাফিয়ারা মূলত দু’ধরণের। একটি দলের কাছে বালি তোলার কোনও অনুমতি থাকে না। তাঁরা বেশ কয়েকটি লরি ও বড় যন্ত্র নিয়ে এসে রাতের অন্ধকারে বালি চুরি করে। আবার অনেকের কাছে বালি তোলার অনুমতি থাকলেও নির্ধারিত পরিমাণের থেকে তারা বহুগুণ বেশি বালি তুলে নেয়। ওই আধিকারিকের আরও দাবি, অবৈধ কারবারিদের ধরতে বেশি বেগ পেতে হয় না। কিন্তু যাঁদের কাছে বৈধ অনুমতি থাকে তাঁরা যখন অতিরিক্ত বালি তোলেন সমস্যা হয় তখনই। তুলে নেওয়া, একই চালানে একাধিক লরি বের করে নেওয়ার মতো বেআইনি কারবার চালিয়ে থাকে তারা। পরিস্থিতি এমনই যে অবৈধ বালি কারবারিদের রমরমার জেরে মাইনর মিনারেল হিসাবে বালি থেকে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দুর্গাপুর মহকুমায় চলতি বছরে কমের দিকে।
মহকুমা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রে খবর, কাঁকসা ব্লক থেকে বালি বাবদ রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় কমে গিয়েছে ২০ শতাংশেরও বেশি। গলসির ক্ষেত্রে এই হার প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ। সবথেকে খারাপ অবস্থা অন্ডালে। সেখানে গত বছরের তুলনায় রাজস্ব আদায়ের হার ৬০ শতাংশ কমে গিয়েছে। তবে লাউদোহা ও পান্ডবেশ্বরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে কী ভাবছে প্রশাসন? মহকুমা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বেআইনি বালির কারবারে রাশ টানতে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরগুলিকে নিয়মিত অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নভেম্বরের শেষ দিকে অভিযান চালিয়ে নিউ টাউন শিপ থানা এলাকায় তিনটি এবং কাঁকসা থানা এলাকায় দুটি অবৈধ বালির লরি আটক করাও হয়েছে। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “আর এসব চলবে না। কড়া হাতে লাগাম টানা হবে। সেভাবেই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.