বাসের মাথায় চড়ে বসেছেন এক পাল যাত্রী। নড়বড় করতে করতে চলেছে ট্রেকার, চার পাশে ঝুলছেন যাত্রীরা। বাসের মাথায় বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পণ্য। যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ছে বাস, অটো, ট্রেকার।
আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে পথে বেরোলেই চোখে পড়ে এই ধরনের দৃশ্য। নিয়ম মেনে যাত্রী পরিবহণ না করাই যেন দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে দুর্ঘটনাও ঘটছে। পরিবহণ আইন যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না, স্বীকার করেছেন কমিশনারেটের এডিসিপি (ট্রাফিক) সুরেশ কুমার চাডিভে। যাত্রীবাহী যানের উপরে নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আশপাশের জেলা ও ভিন্ রাজ্য থেকে বহু বাস যাতায়াত করে এই দুই শিল্প শহরে। সেগুলিতে যাত্রী পরিবহণের পাশাপাশি মাথায় পণ্য চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া নৈমিত্তিক ব্যাপার। তা ছাড়া নিষেধ সত্ত্বেও যাত্রীবাহী বাসগুলি জনবহুল রাস্তায় যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা-নামা করে। |
নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও বাসের মাথায় চলছে পণ্য পরিবহণ-সহ যাত্রী নেওয়া। |
এডিসিপি (ট্রাফিক) জানান, দূরপাল্লার বাসের ছাদে পণ্য পরিবহণ তো হয়ই, অনেক ক্ষেত্রে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া আপত্তিকর জিনিসপত্র নিয়েও যাতায়াত করে বাসগুলি। সন্ধ্যা ৭টার পরে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে দাঁড়ালে দেখা যায়, এক দিকে কলকাতা ও অন্য দিকে ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশগামী বাসগুলির মাথায় ডাঁই করে পণ্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এডিসিপি জানান, পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে আপত্তিকর ওষুধ, বিস্ফোরক-সহ অবৈধ জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে বহু বার। মাথায় পণ্য বোঝাই করে জাতীয় সড়ক ধরে দ্রুত গতিতে ছুটে যাওয়ার সময়ে নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনার কবলেও পড়ে।
সম্প্রতি আসানসোলের দামাগড়িয়ার কাছে পণ্য বোঝাই দূরপাল্লার বাস উল্টে দু’জনের মৃত্যু হয়। দুর্গাপুরেও মাস দেড়েক আগে এ রকম একটি বাস দুর্ঘটনায় পড়ে। এডিসিপি (ট্রাফিক) সুরেশকুমার চাডিভে বলেন, “আমরা এই দূরপাল্লার বাসগুলিকে জানিয়েছি, আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের উপর দিয়ে যাওয়ার সময়ে মাথায় পণ্য নিয়ে যাওয়া যাবে না।” |
বাসের মাথায় ইচ্ছে মতো যাত্রী পরিবহণ ও পণ্যের পারাপার। |
শিল্পাঞ্চলের নানা এলাকায় অটো রিকশা চলে। কিন্তু চালকেরা অনেক সময়েই নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি যাত্রী পরিবহণ করেন। পুলিশ জানায়, একটি অটোয় চার জনের বেশি যাত্রী নেওয়ার নিয়ম নেই। অথচ, বাস্তবে দেখা যায়, একটি অটোয় ছ’জনের বেশি যাত্রী তুলছেন চালকেরা। পুলকার হিসেবে যে সব অটো শহরে চলে, সেগুলিতেও নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি পড়ুয়া পরিবহণ করা হচ্ছে। এডিসিপি-র (ট্রাফিক) দাবি, এই শিল্পাঞ্চলে চলাচলকারী অটো রিকশাগুলির কোনওটিরই পরিবহণের বৈধ অনুমতিপত্র নেই। তবু দিনের পর দিন তারা কী ভাবে চলছে, ব্যবস্থাই বা নেওয়া হচ্ছে না কেন, সে প্রশ্নে এডিসিপি বলেন, “কয়েকটি প্রশাসনিক ত্রুটি আছে। সেগুলি ঠিক করেই ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” দেখা গিয়েছে, আসানসোলের দোমহানি, চুরুলিয়া, জামুড়িয়া, সালানপুর, দুর্গাপুরের কাঁকসা, অন্ডাল-সহ নানা অঞ্চলে ট্রেকার চলাচল করে। ট্রেকার চালকেরা নির্দিষ্ট সংখ্যার অনেক বেশি যাত্রী তোলেন। বস্তুত, বাদুড়ঝোলা হয়ে ট্রেকারে যাতায়াত করেন মানুষজন। এ বিষয়েও কঠোর পদক্ষেপ করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। |
আসানসোল ও দুর্গাপুরের নানা এলাকায়
ছবিগুলি তুলেছেন শৈলেন সরকার ও সব্যসাচী ইসলাম। |