সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অভব্য ব্যবহার, ভাঙচুরের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল দুর্গাপুরে তৃণমূলের এক শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে।
দেবদাস মজুমদার নামে ওই আইএনটিটিইউসি নেতা এর আগেও নানা ঘটনায় জড়িয়েছেন। শুক্রবার সকালে দুর্গাপুরে দ্য মিশন হাসপাতালে গিয়ে গোলমাল পাকানোর পরে তাঁর নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়। ওই নেতার আচরণে বিরক্তি প্রকাশ করেন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেনও। পরে তাঁর নির্দেশে সংগঠনের বর্ধমান জেলা সভাপতি হাসপাতালে গিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান।
নিউ টাউনশিপ থানায় ডায়েরিতে হাসপাতালের সিইও প্রবীর মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, এ দিন সকালে ৯টা নাগাদ দেবদাস মজুমদার বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন। সকাল ১০টায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক আসবেন বলে জানানো হতেই তিনি চেঁচামেচি জুড়ে দেন। দেরির জন্য কর্তৃপক্ষ বারবার দুঃখপ্রকাশ করলেও হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করতে থাকেন তিনি। চিকিৎসক এলে তাঁর সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন। অপমানিত চিকিৎসক তাঁকে দেখবেন না বলে জানালে হাসপাতালের চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও-র কাছে গিয়ে চেঁচামেচি-গালিগালাজ করেন। নেতার দাবি ছিল, এক ঘন্টা অপেক্ষা করানোর জন্য তাঁকে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অন্যথায় দলবল জুটিয়ে হাসপাতাল ভাঙচুরের হুমকিও দেন তিনি।
অভিযুক্ত নেতা অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে পাল্টা দাবি করেন, সুগারের সমস্যা নিয়ে এর আগেও তিনি চার বার চিকিৎসক রাজর্ষি মুখোপাধ্যায়ের কাছে গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে হাসপাতাল থেকে তাঁকে জানানো হয়, পরের দিন সকাল ৯টার মধ্যে আসতে হবে। তা না হলে চিকিৎসক তাঁকে দেখবেন না। এক ঘন্টা অপেক্ষা করার পরে সকাল ১০ টা নাগাদ তাঁকে ডাকা হয়। কেন এ ভাবে একজন রোগীকে অপেক্ষা করানো হল জানতে চাইলে চিকিৎসক তাঁর ফাইল ছুড়ে ফেলে দেন। পরে হাসপাতালের কয়েক জন কর্মী তাঁকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করাতে চারতলায় নিয়ে যান। সেখানে কয়েক জন তাঁকে ঘিরে ধরে উল্টোপাল্টা মন্তব্য করেন।
এই অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেন, অনিবার্য কারণে চিকিৎসকের দেখতে কিছুটা দেরি হওয়ায় তাঁরা দেবদাসবাবুর কাছে বারংবার দুঃখপ্রকাশ করেন। কিন্তু তাতে কান না দিয়ে তিনি ক্রমাগত দুর্ব্যবহার করে গিয়েছেন। দ্য মিশন হাসপাতালের চেয়ারম্যান সত্যজিৎ বসু বলেন, “এই ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয় নিয়ে এখানে কাজ করতে হয়। মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন জড়িয়ে থাকে।” তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন, গোলমালে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে। দেশ-বিদেশ থেকে আসা রোগী ও তাঁদের পরিজনেরাও দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। পুলিশ ছাড়াও দুর্গাপুর মহকুমাশাসকের কাছেও অভিযোগের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে।
গণ্ডগোলের খবর শুনে আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেন বলেন, “এটা অত্যন্ত অন্যায় কাজ। আমাদের সংগঠনের যিনিই জড়িত থাকুন, তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়কে বলব।” আইএনটিটিইউসি-র তরফে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে দুঃখপ্রকাশ করার নির্দেশও দেন তিনি। অবিলম্বে অভিযুক্ত নেতাকে ডেকে কথা বলতেও বলেন। পরে প্রভাতবাবু হাসপাতালে গিয়ে সিইও এবং অপমানিত চিকিৎসকের দেখা করে আইএনটিটিইউসি তথা তৃণমূলের তরফে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। বিষয়টি নিয়ে দেবদাসবাবুর সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডের (ডিপিএল) আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দেবদাসবাবু ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে এর আগে বারবার অন্য সংগঠন, এমনকী নিজের সংগঠনের অন্য গোষ্ঠীর লোকজনের উপরে চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ডিপিএল সূত্রের খবর, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি দেবদাসবাবুর অবসর। তাঁর চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির দাবিতে গত ২৯ অক্টোবর ডিপিএলের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান দেবদাসবাবুর অনুগামীরা। কর্তাকে ধাক্কাধাক্কিও করা হয় বলে অভিযোগ। কারখানার নিরাপত্তা বিভাগ তদন্ত করে বিদ্যুৎমন্ত্রী ও সচিবের কাছে রিপোর্টে জানায়: ‘নিরাপত্তা রক্ষীদের সামনেই ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে ধাক্কাধাক্কি করা হয়।... সংস্থার প্রধানের এমন হেনস্থায় কর্মীদের মনোবলে ধাক্কা লেগেছে।’
এ দিন ফের গণ্ডগোলের অভিযোগ ওঠার পরে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।” |