নিজেকে গোপন করার গ্লানি কাটাতেই লড়াই জয়িতাদের
য়ন্ত থেকে জয়িতা। পথটা মোটেই মসৃণ ছিল না। ছোট বেলা থেকেই মা-কে নকল করা, পুরুষ বন্ধুদের প্রতি বেশি মনোযোগী হওয়া, নিজের এই প্রবণতায় নিজেকে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন জয়ন্ত মণ্ডল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলাবিভাগে স্নাতক হয়ে চলে এসেছিলেন উত্তর দিনাজপুরে। পরিবারের আপত্তিকে কিছুটা দূরে সরিয়েই, কাজ শুরু করেছিলেন সমকামীদের নিয়ে। এখন পুরোদস্তুর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী। নিজেকে খোলাখুলি সমকামী বলতেও দ্বিধা নেই। গত বছরের আদমসুমারিতে পুরুষ বা মহিলা পরিচয় না দিয়ে নিজেকে ‘আদার্স’ সম্প্রদায়ে নথিবন্ধ করেছিলেন। সে সময় থেকেই জয়ন্তর পরিবর্তে জয়িতা নাম ব্যবহার করতে শুরু করেন।
শিলিগুড়িতে সাংবাদিক সম্মেলনে নর্দার্ন ব্ল্যাক
রোজ সোসাইটি। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে এসে জয়ন্ত/জয়িতা বলেন, “এক সময় আমাকে হোটেলে ঘর দিত না। পড়শিরা কটাক্ষ করত। সমকামিতা বৈধ বলে দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের পরে আত্মবিশ্বাস পেয়েছিলাম। এখন আবার বিপন্ন বোধ করছি। এক সময়ে পরিবারকে বলেছিলাম, সরকারও পাশে রয়েছে। এখন পরিবারের সদস্যরা পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন। যাকে বিয়ে করব ভেবেছিলাম, তিনিও এখন হতাশাগ্রস্ত।”
এ দিন জলপাইগুড়ি থেকে শিলিগুড়িতে এসেছিলেন দীপঙ্কর দত্তও। শহরের একটি প্রতিষ্ঠিত কলেজের কলা বিভাগের স্নাতক। তিনিও স্কুলে থাকাকালীন তাঁর যৌন চেতনার ভিন্নতা বুঝতে পেরেছিলেন। তখন থেকে নিজেই সমকামিতা নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। দীপঙ্করবাবু বললেন, “পরিবার থেকে আমি কিন্তু সমর্থন পেয়েছি। পাড়ার ক্লাবের সঙ্গেও আমি যুক্ত। সব কিছ ভাল চলেছে। হঠাৎই যেন সব কিছু বদলে গেল।”
‘দিনাজপুর নতুন আলো’র সম্পাদক জয়ন্ত বা ‘জলপাইগুড়ি উত্তরায়ণ’-এর সম্পাদক দীপঙ্করের মতো মালদহ, কোচবিহার থেকেও অনেকেই বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে জড়ো হয়েছিলেন। সমকামিতা নিয়ে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের রায় তাঁদের এক সূত্রে গেঁথে দিয়েছে। শিলিগুড়ির নর্দান ব্ল্যাক রোজ সোসাইটি সকলকে ডেকে বৈঠক করে এ দিন জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি তৈরি করেছে। উদ্দেশ্য সমকামিতার স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলন করা। রাষ্ট্রপতির কাছে, চিঠি পাঠানো উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলিকে চিঠি পাঠানোর মতো বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত এ দিন নেওয়া হয়েছে। সোসাইটির দফতরেই ওই বৈঠক হয়েছে। এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করেছে বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা। সমকামী, উভগামী, হিঁজড়েদের নিয়ে কাজ করা ব্ল্যাক রোজ সোসাটির সম্পাদক শিলাদিত্য ঘোষ বলেন, “প্রথমে যখন সমকামীদের নিয়ে কাজ শুরু করি, তখন অনেক কটাক্ষ, প্রতিকূলতা আমাদের সামনে এসেছে। সবটাই সামলানো গিয়েছিল। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে অনেকেই বিপন্নতায় ভুগছেন। সে বিপন্নতা কাটানোর লক্ষ্যেই উত্তরবঙ্গের ছয় জেলার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি মঞ্চ করা হয়েছে। চলতি মাসের শেষে সমকামিতার স্বীকৃতির দাবিতে শিলিগুড়ির হাসমি চকে অবস্থানে বসব।”
জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি জানিয়েছে, দিল্লি বা কলকাতার বড় শহরের থেকে উত্তরবঙ্গের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। সমকামী সংগঠনের সদস্যরা এখনও প্রকাশ্যে পরিচয় দিতে দ্বিধা বোধ করেন। সমকামীদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে যুক্ত তাকলেও, মুখ ফুটে নিজের পরিচয় দিতে কুন্ঠা বোধ করেন। মালদহের এক সদস্যের কথায়, “সমকামী সংগঠনে কাজ করি বলে যদি সকলে সমকামী হিসেবে ধরে নেয়, তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু অনেক সময়ে নিজেকে সমকামী বলে দাবি করলে অনেক অন্তরায় তৈরি হয়, পরিবারের গঞ্জনাও শুনতে হয়। তাই অনেকে সংগঠনের সদস্য হয়েও সে ভাবে প্রকাশ্যে আসে না। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে কুন্ঠা বোধ আরও বেড়ে গিয়েছে। সেই কারণেই আন্দোলনের প্রস্তুতি।” শিলিগুড়ির একটি সামাজিক সংগঠনের কমিউনিটি লিডার শৌভিক ঘোষাল বলেন, “কারও যৌন চেতনায় হস্তক্ষেপ করাটা অগণতান্ত্রিক। সে কারণেই সকলকে এক করে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.