মন্দির নগরী বিষ্ণুপুরের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে বছর বছর হয়ে আসছে বিষ্ণুপুর মেলা। চালু হয়েছে পর্যটন দফতরের বিষ্ণুপুর উৎসবও। কিন্তু প্রশাসনের দৃষ্টির আড়ালে রয়ে গিয়েছে বিষ্ণুপুরের মদনমোহন মন্দির লাগোয়া সুপ্রচীন জলাধারটি। সংস্কার না হওয়ায় আগাছায় ভরে উঠেছে ওই জলাধার। আবর্জনা পড়ে দূষিত হয়ে উঠেছে জলাধারের জল। এ নিয়ে বাসিন্দা থেকে পর্যটকদের ক্ষোভ থাকলেও জলাধার সংস্কারে উদ্যোগী নয় প্রশাসন।
ক’দিন বাদেই ২৩ ডিসেম্বর থেকে টানা পাঁচ দিন ধরে বিষ্ণুপুর মেলা চলবে। কার্যত ওই ক’দিন জনসমুদ্রে ভাসবে বাংলার প্রাচীন এই মন্দির নগরী। তার আগেই শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গিয়েছে এখানে পর্যটকদের আনাগোনা। তবুও সংস্কারের বালাই নেই এলাকার প্রাচীন এই ঐতিহ্যবাহী জলাধারের।
১৬৯৪ খ্রীষ্টাব্দে মল্লরাজা দুর্জন সিংহ তাঁর রাজধানী বিষ্ণুপুর শহরের শাঁখারীবাজারে তৈরি করেন অনন্য শিল্প শৈলির নিদর্শন মদনমোহন মন্দির। এই মন্দিরের গায়ে রয়েছে টেরাকোটার দশাবতার, কৃষ্ণলীলার পৌরানিক কাহিনীচিত্র থেকে পশু-পাখি, হংসলতার অপূর্ব প্যানেল। বিগ্রহের স্নানের জন্য মন্দিরের পাশেই তৈরি করা হয়েছিল প্রাচীন স্থাপত্যের দর্শনীয় ওই জলাধার। মন্দির দেখতে এসে অনেক পর্যটকই দেখেন ওই জলাধার। কিন্তু জলাধারের বর্তমান দুরাবস্থা দেখে তাঁরা কষ্ট পান।
|
কয়েক দশক আগে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দফতর বিষ্ণুপুরের কয়েকটি মন্দিরের সঙ্গে মদনমোহন মন্দির সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়। কিন্তু মন্দির লাগোয়া এই জলাধার সংরক্ষণের তালিকার বাইরে থেকে যায়। ফলে দেখভালের অভাবে নষ্ট হতে চলেছে প্রাচীন জলাধারটি। দীর্ঘদিন পরিষ্কার না হওয়ায় তা এখন আবর্জনার স্তূপে প্রায় আড়াল হয়ে পড়েছে। আশেপাশে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি গুমটি। জলাধার এলাকায় রাতে আলোও জ্বলে না।
স্থানীয় বাসিন্দা রতন নন্দী, আদিত্য মণ্ডলদের ক্ষোভ, “জলাধারে নামার জন্য বাঁধানো সিঁড়ি রয়েছে। এমন জলাধার সাধারণত দেখা যায় না। কিন্তু এখন তা মশা, মাছির আঁতুর ঘরে পরিণত হয়েছে। জলাধারের দেওয়ালে আগাছা জন্মাচ্ছে। পর্যটকেরা উঁকি মেরে জঞ্জালের দুর্গন্ধে সরে যাচ্ছেন। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এই জলাধারটি হয়তো কয়েক বছর পরে ধংস হয়ে যাবে।” কলকাতা থেকে বিষ্ণুপুরে বেড়াতে আসা আসা সুকুমার দত্ত বলেই ফেললেন, “প্রাচীন স্থাপত্যের এই দশা! এ শুধু আমাদের দেশেই সম্ভব।”
ইতিহাসবিদ চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন, “সারা ভারতে এমন বিশাল ও প্রাচীন জলাধার গুটিকয়েক রয়েছে। বিষ্ণুপুরে এমন দু’টি জলাধার রয়েছেএকটি মদনমোহন মন্দির লাগোয়া শাঁখারীবাজারে, অন্যটি লালগড়ে। তবে লালগড় প্রকৃতি উদ্যানের জলাধারটির সংস্কার করা হলেও শাঁখারীবাজারের জলাধারটির তা হয়নি।”
মদনমোহন উৎসব ও সেবা পুজো কমিটির সহ-সভাপতি অশোক কর্মকার বলেন, “আমরা মহকুমা প্রশাসন ও পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের বিষ্ণুপুর অফিসে জলাধারটি সংরক্ষণের আবেদন জানিয়েছি বহুবার। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মন্দির চত্বরেও আলোর ব্যবস্থা করা হয়নি। পুরসভার দেওয়া একটা টিমটিমে আলোই রাতে মন্দিরের ভরসা।” ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দফতরের বিষ্ণুপুরের আধিকারিকরা অবশ্য এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত বলেন, “বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।” |