সিভিক পুলিশের এক কর্মীকে রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গাছে বেঁধে মারধর করার অভিযোগ উঠল জলপাই রঙের পোশাক পরা কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এক সময় মাওবাদী প্রভাবিত বলরামপুরে থানার তিলাই গ্রামে বুধবার রাতের ঘটনা। আহত বছর আঠারোর তরুণ দিলীপ পরামাণিককে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেননি। পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার বলেন, “স্থানীয় কোনও গণ্ডগোলের জেরে এমনটা হতে পারে। ওই যুবক কথা বলার অবস্থায় এলে তাঁর সঙ্গে কথা বলে ঠিক কী ঘটেছিল জানা যাবে।”
স্থানীয় সূত্রে খবর, রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে জঙ্গলমহল উন্নয়ন বিরোধী প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে যুক্ত হন দিলীপ। এলাকায় এখন তৃণমূল সমর্থক হিসেবে তাঁর পরিচয়। দুর্গাপুজোর আগে তিনি সিভিক পুলিশ যোগ দেন। তিলাই গ্রামটির অবস্থান ঘাটবেড়া-কেরোয়া এলাকায় অযোধ্যা পাহাড়ের নীচে।
|
দিলীপের অভিযোগ, অনেক রাতে তাঁকে ঘুম থেকে তুলে কয়েকজন চাদরে জড়িয়ে গ্রামের এক প্রান্তে নিয়ে যায়। দলে ছিল আট জন। তাদের মধ্যে তিন জন মহিলা। তাঁর কথায়, “ওরা একটা গাছের সঙ্গে আমাকে বেঁধে মুখে একটা তরল ঢেকে দেয়। তার পরেই আমাকে মারধর শুরু করে। ঠিক তখনই গ্রামে পরপর দুটো পটকা ফাটার শব্দ হয়। লোকজনের চিৎকার শুরু হয়। তখন ওরা আমাকে ছেড়ে পালিয়ে যায়।” কারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল? দিলীপ বলেন, “ওরা বলছিল ফের এই এলাকা ওদের মুক্তাঞ্চল করবে। এলাকার সবাই জানে, তারা কারা।”
ওই তরুণ অভিযোগ করেন, আগে এক মাওবাদী নেতা তাকে স্কোয়াডে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি। সম্প্রতি তাঁর মোবাইল ফোনে ফের সেই একই প্রস্তাব দিয়ে ফোন এসেছিল। মারধরের সময় তাঁর মোবাইল ফোন থেকে দুষ্কৃতীরা ‘সিম’টি বের করে নিয়ে যায়। দিলীপ জানান, দুষ্কৃতীরা পালাতেই তিনি দড়ি খুলে বাড়ির দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু মাঝরাস্তায় পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়েছিলেন। তাঁর ভাই জিতেন পরামাণিক, অক্ষয় কুমার বলেন, “রাস্তায় সে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে ছিল। আমরা ওকে তুলে নিয়ে যাই।”
পুলিশ সুপার বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে তিনটে গ্লাস মিলেছে। ওকে কিছু খাওয়ানো হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। ওই তরুণ এখন কথা বলার অবস্থায় নেই।” তবে এই ঘটনায় মাওবাদী যোগের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন পুলিশ সুপার। যদিও গোয়েন্দা সূত্রে দাবি করা হয়েছে, অযোধ্যা পাহাড়ে বর্তমানে মাওবাদীদের স্থায়ী ভাবে কোনও স্কোয়াড নেই। তবে মাঝে মধ্যে দলমা থেকে মাওবাদীরা সংগঠনের জন্য লোকজন খুঁজতে এই এলাকায় যাতায়াত করছে। তাই এই ঘটনাকে পুলিশ হাল্কা ভাবে নিচ্ছে না। |