টাকা এসে পড়ে রয়েছে। কিন্তু পযর্টনের মরসুম শুরু হয়ে গেলেও অযোধ্যা পাহাড়ে চড়ার রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু করতে পারেনি পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। এ বার পর্যটকদের মন অযোধ্যা পাহাড় কতটা টানবে, সংশয়ে পর্যটনশিল্পের সঙ্গে যুক্ত লোকজন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যটকদের পুরুলিয়ামুখী করতে বার বার জোর দিয়েছেন। জেলা সফরে পুরুলিয়া এলেই তিনি প্রতি বার কার্যত নিয়ম করে জেলা প্রশাসনকে অবহেলিত পযর্টনক্ষেত্রগুলির পরিকাঠামোর উন্নতিতে নজর দিতে বলেন। কিন্তু শিরকাবাদ থেকে অযোধ্যা পাহাড়ের হিলটপে ওঠার রাস্তাটি অত্যন্ত খারাপ হয়ে পড়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর জুলাই মাসে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য এক কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। কিন্তু কোনও ঠিকাসংস্থাই ওই টাকায় রাস্তাটি সংস্কারে আগ্রহ দেখাননি। ফলে এ বার ঠান্ডা পড়ে গেলেও অযোধ্যা পর্যটকদের কতটা খুশি করবে তা নিয়ে সংশয়ে এলাকার মানুষজন।
মাওবাদীদের দৌরাত্ম্য শুরু হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে অযোধ্যা পাহাড় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন পযর্টকেরা। পরে অযোধ্যা উৎসব শুরু করে জেলা প্রশাসন। চালু করা হয় পুরুলিয়া শহর থেকে হিলটপ পর্যন্ত বাস চলাচলও। গত বছরে পর্যটকদের আনাগোনাও কিছুটা বাড়ে। শিরকাবাদ থেকে পাহাড়ের হিলটপ পর্যন্ত ওঠার প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তায় দু’পাশের সৌন্দর্য পর্যটকদের মন ভরিয়ে দেয়। কিন্তু ওই রাস্তার অনেকখানি এখন খানাখন্দে ভরে উঠেছে। পাকদণ্ডী পথের কোনও কোনও বাঁক এমনই বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে, যে কোন সময়ই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অথচ রাস্তাটি সংস্কারের কাজ থমকে রয়েছে। তাই অনেকে বাধ্য হয়ে ঘুরপথে বলরামপুর-বাঘমুণ্ডি হয়ে পাহাড়ে উঠছেন। কিন্তু এ জন্য পাহাড়ে পৌঁছতে ৩০-৩৫ কিলোমিটার পথ বেশি ঘুরতে হচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ওই ঘুরপথেই হিলটপে যেতে হয়েছিল। |
বর্তমানে পুরুলিয়া শহর থেকে পাহাড় অর্থাৎ হিলটপ পর্যন্ত একটি সরকারি বাস চলে। প্রায় বছর দুয়েক আগে অযোধ্যা উৎসবের সময় এই বাসটি চালু করা হয়। ওই বাসের নিত্যযাত্রীরা জানাচ্ছেন, রাস্তার অবস্থা এমনই ভয়ঙ্কর, যে যখন তখন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। পাহাড়ের বাসিন্দা পেশায় গাইড বেণু সেন বলেন, “সব পযর্টকের এক অভিযোগ এত সুন্দর জায়গা, অথচ রাস্তা অত্যন্ত খারাপ। এ ভাবে যদি রাস্তাটাকে অবহেলা করা হয়, পযর্টকেরা কী ভাবে পাহাড়মুখী হবেন?” অন্য এক গাইড ফুচু মাছুয়ার বলেন, “এই রাস্তা দিয়ে পাহাড়ে উঠতে গিয়ে অনেক সময় গাড়ি বিকল হয়ে পড়ছে। এতে আখেরে অযোধ্যা পাহাড়েরই তো বদনাম হচ্ছে। পর্যটকদের কাছে এই বার্তা ছড়িয়ে পড়লে তাঁরা কি আর এখানে আসবেন!” তাঁদের মতে, রাস্তাটিকে ভালো করে গড়ে গার্ডওয়াল দিয়ে ঘিরে দিলে ঝুঁকিও কমবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর পযর্টনের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে জেলা প্রশাসন ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য বছর খানেক আগে একটি প্রকল্প পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের কাছে পাঠায়। তার ভিত্তিতে গত জুলাই মাসে এই রাস্তা সংস্কারের জন্য এক কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। টাকা হাতে আসায় ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য টেন্ডারও ডাকা হয়। কিন্তু সংস্কারের জন্য একটি দরপত্রও জমা পড়েনি।
জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত জেলা বাস্তুকার কান্তি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও ঠিকা সংস্থা দরপত্র জমা দেয়নি। সম্প্রতি পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের বাস্তুকাররা ফের ওই রাস্তা পরিদর্শন করেছেন।”
জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের বরাদ্দ করা অর্থ এত কম যে কোনও ঠিকাসংস্থাই রাস্তাটি সংস্কারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বরাদ্দ বাড়িয়ে ওই রাস্তা ভালো ভাবে সংস্কার করার জন্য পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ দফতরের মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।” পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদার আশ্বাস, “ওই রাস্তাটি যাতে সংস্কার করা হয়, সে জন্য দফতর বরাদ্দ বাড়াবে।” |