সম্পাদকীয় ২...
অনধিকার
বাংলাদেশে জামাতে ইসলামির নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির নিন্দা করিয়া পাকিস্তান পার্লামেন্টের প্রস্তাব সরাসরি কূটনৈতিক সৌজন্যবিরোধী এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের শামিল। এই কথাটি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঢাকাস্থ পাক হাইকমিশনারকে তলব করিয়া জানাইয়াও দেওয়া হইয়াছে। আবদুল কাদের মোল্লা মুক্তিযুদ্ধের সময় শত শত মানুষের হত্যা ও মহিলার ধর্ষণের জন্য প্রত্যক্ষত দায়ী। আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে যুদ্ধাপরাধের জন্য তাঁহার বিচারও হইয়াছে। বিচারে শাস্তি হিসাবে তাঁহার মৃত্যুদণ্ড ধার্য হয়। পাকিস্তানের রাষ্ট্র, কিছু রাজনৈতিক দল এবং জনসাধারণের একাংশ কাদের মোল্লার প্রতি সহানুভূতি পোষণ করিতেই পারেন। সেই সহানুভূতি প্রকাশ্যে তাঁহারা ব্যক্তও করিতে পারেন। কিন্তু পাক পার্লামেন্ট কাদের মোল্লার ফাঁসির বিরুদ্ধে কোনও নিন্দাপ্রস্তাব আনিতে পারে না। ইহা গর্হিত।
পাক জামাতিদের জ্ঞাতিভ্রাতারাই পাক সেনার প্রহরায় ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিকামী নিরস্ত্র জনসাধারণের উপর নারকীয় হত্যালীলা ও ধর্ষণ চালাইয়াছিল। সেই ঘাতক-ধর্ষকদের প্রতি জামাতিদের সহমর্মিতা অতএব সহজবোধ্য। মুক্তিযুদ্ধ তো ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি আধিপত্যের বিরুদ্ধে মুক্তিরই সংগ্রাম। কিন্তু নওয়াজ শরিফের শাসক দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ, ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রভৃতি কোন মুখে কাদের মোল্লার অপরাধের সমর্থন করে? তবে কি পাকিস্তান বাংলাদেশের সহিত সুসম্পর্ক চায় না? তাহাকে শত্রুরাষ্ট্রের তালিকাভুক্ত রাখাই পাক বিদেশনীতির লক্ষ্য? বাংলাদেশ তো সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের মতো কোনও পাক অঙ্গরাজ্য নয়। সেই ১৯৭১ হইতেই তাহা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। তবে কি আজও, মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়া অর্জিত স্বাধীনতার চার দশক পরেও, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ইসলামাবাদ মানিয়া লইতে পারিতেছে না? অন্যথায় পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলি খান কেন কাদের মোল্লার ফাঁসিকে ‘বিচারবিভাগীয় হত্যা’ আখ্যা দিবার ঔদ্ধত্য দেখাইবেন? কেনই বা একাত্তরের দণ্ডিত ঘাতক-দালালদের বিরুদ্ধে যাবতীয় শাস্তি রদ করার পরামর্শ দেওয়া হইবে? দুইটি দল অবশ্য কাদের মোল্লার ফাঁসির বিরুদ্ধে আনীত নিন্দাপ্রস্তাবের খসড়ায় স্বাক্ষর করিতে অস্বীকার করে বিরোধী দল পাকিস্তান পিপল্স পার্টি এবং মুত্তাহিদা কৌমি একতা (এমকিউএম)। বস্তুত এই দুই দলের বিরোধিতার কারণেই নিন্দাপ্রস্তাবের সুর অনেক মোলায়েম করা হয়। পাক রাজনীতিকরা প্রসঙ্গত বাংলাদেশকে পুরাতন ক্ষত খুঁচাইয়া রক্তক্ষরণ ঘটাইতে নিষেধ করিতেছেন। কিন্তু ক্ষতস্থানে প্রলেপ লাগানোর কাজটি তো অদ্যাবধি পাকিস্তান করিয়া উঠিতে পারিল না। বাংলাদেশ বারংবার একাত্তরের কৃতকর্মের জন্য পাকিস্তানের কাছে প্রকাশ্য ক্ষমাপ্রার্থনার দাবি জানাইয়াছে। কিন্তু ইসলামাবাদ তাহাতে আমল দেয় নাই। উপরন্তু তাহারা ঢাকার পতনের ৪২তম বর্ষপূর্তি উদ্যাপন করিতেছে। পাকপন্থী ঘাতকদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা বা গণধর্ষণের জন্য অনুতাপ কিংবা অনুশোচনা দূরস্থান, ঢাকা তথা পূর্ব পাকিস্তানকে তাঁবে রাখিতে না-পারার ব্যর্থতার গ্লানিই যেন পশ্চিমের রাজনীতিকদের একমাত্র আফশোসের বিষয়। স্বভাবতই বাংলাদেশের আমজনতা মর্মাহত। পাকিস্তানের সহিত কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করিবার যে দাবি তাঁহারা তুলিয়াছেন, তাহার পশ্চাদ্বর্তী ক্ষোভের তীব্রতা বুঝিতে কোনও অসুবিধা নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.