সম্পাদকীয় ১...
ফোঁস
মার্কিন সচিব জন কেরি নয়াদিল্লির নিকট অনুতাপ প্রকাশ করিয়াছেন। অনুতাপ না বলিয়া ক্ষমাপ্রার্থনা বলিলেও ভুল হয় না। মার্কিন ভূমিতে ভারতীয় কূটনৈতিকের গ্রেফতার ও দেহতল্লাশি বিষয়ে নয়াদিল্লির বিরক্তি প্রকাশ ও কূটনৈতিক স্তরে পাল্টা ব্যবস্থাগ্রহণের প্রেক্ষিতেই এই অনুতাপ। বিষয়ের গভীরে ঢুকিবার আগেই একটি কথা পরিষ্কার, একবিংশ শতকে ভারতের গুরুত্ব যে বাড়িয়াছে, মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারত যে আর নিতান্ত হেলাফেলার দেশ নাই, এই ছোট্ট ঘটনাই তাহার প্রমাণ। অভিযোগ ও শাস্তিবিধান যেমনই হউক, ভারতীয় কূটনৈতিক শিবিরকে যে তাহার গুরুত্ব অনুযায়ী মর্যাদা দেওয়া উচিত, কোনও কর্মীর অপরাধ প্রসঙ্গে যে আরও সংবেদনশীলতার সহিত নয়াদিল্লির কর্তৃত্বের সহিত আলাপ-আলোচনা করা বিধেয়, হয়তো ওয়াশিংটন তাহা বিলম্বে বুঝিতেছে। কয়েকটি পশ্চিমি মিত্রদেশ ভিন্ন প্রায় সকল দেশের, বিশেষত দক্ষিণ/পশ্চিম এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার সহিত স্পর্ধিত ব্যবহার ওয়াশিংটনের প্রায় জন্মগত অধিকার। গত জুলাইয়ে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট এভো মোরালেস-এর বিমান ইউরোপের মাটিতে অবতরণে নিষেধাজ্ঞা জারির মধ্যেও এই স্পর্ধাই ছিল। ফ্রান্স বা চিনের সহিত কিন্তু এমন ব্যবহার সহজে ঘটিত না। দ্ব্যর্থহীন ক্ষোভ প্রকাশ করিয়া ভারত বুঝাইয়া দিয়াছে, সে কথামৃতের ভাবধারায় বিশ্বাসী: কোনও মিত্রদেশ যদি তাহার সহিত স্পর্ধিত ব্যবহার করে, ছোবল না মারিলেও ফোঁস করিতে সে বিলক্ষণ সক্ষম।
প্রশ্ন উঠে, ইহা কি নিছক জাতীয় ভাবাবেগেরযুক্তি? দাদাগিরির দেশকে কিল মারিবার আনন্দ? মার্কিন প্রচারমাধ্যম তেমনই মনে করিতেছে বটে। কিন্তু ইহাও ঠিক, জন কেরি কিছু আবেগজর্জরিত বালক নহেন, তাঁহার অনুতাপ প্রকাশেই স্পষ্ট যে গোটা ঘটনায় পদ্ধতিগত গোলমালের সমূহ সম্ভাবনা। মার্কিন আইনমতে দেবযানী খোবরাগাড়ের বিরুদ্ধে গৃহ-পরিচারিকার মাহিনা বিষয়ে সরকারি নথিতে মিথ্যা তথ্য প্রদানের যে অভিযোগ, তাহার প্রেক্ষিতে নাকি ‘নগ্ন তল্লাশি’ ও ‘রন্ধ্র তল্লাশি’ সত্যই আবশ্যক। দাবি সত্য কি না, যাচাই জরুরি। কেননা অপরাধের তুলনায় শাস্তি এ ক্ষেত্রে কেবল গুরু নহে, অতীব আপত্তিকর। মানবাধিকার ভঙ্গের যুক্তিতে অভিযোগ আনীত হইলে অভিযুক্তের মানবাধিকার এ ভাবে লঙ্ঘিত হয় কোন যুক্তিতে? বর্তমান আইন এমন হইলে নিশ্চয়ই তাহা সর্বতোভাবে প্রযোজ্য, বিদেশি কূটনৈতিক কর্মীর ক্ষেত্রেও। তবে কিনা, মেয়ের স্কুলের সম্মুখ হইতে সহসা গ্রেফতার হইতে শুরু করিয়া দৈহিক তল্লাশি পর্যন্ত যে চিত্রটি ফুটিয়া উঠে, তাহা ভ্রুকুঞ্চনযোগ্য। যে দেশে সর্বপ্রকার আইনের ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’-এর দৃষ্টান্ত এখনও নাই, কিন্তু চোরা বর্ণবিদ্বেষের দৃষ্টান্ত যথেষ্ট, সেখানে তো ভ্রু আরওই দ্রুত কুঞ্চিত হয়। কূটনৈতিক কর্মীর মতো ‘এলিট’কে লইয়া টানাটানি, তাই এত গাত্রদাহ: ভারতীয় প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে আর একটি মত। ঘটনা কিন্তু বিপরীত। ‘এলিট’ ঘটনা বলিয়া এত কিছু জানা যাইতেছে, সাধারণ প্রবাসীর হেনস্থা হইলে জানা যাইত না। তথ্য সহজপ্রাপ্য বলিয়াই সাদা চোখে দেখা সম্ভব, কী ভাবে গৃহ-পরিচারিকা সঙ্গীতা হইতে শুরু করিয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত কর্তা পর্যন্ত প্রত্যেকেরই কিছু নিহিত স্বার্থ থাকিয়াছে। সুতরাং অনাবশ্যক নাটকীয়তা বন্ধ করিয়া আপাতত প্রয়োজন যথার্থ তদন্ত ও সুবিচার। এবং প্রয়োজন কূটনৈতিক ‘নিরাপত্তা’ বলিতে ঠিক কী বোঝানো হয়, দুই তরফেই তাহার নির্মোহ নিষ্পত্তি। ভারতের তরফে অভিযুক্তকে আড়াল করিবার চিন্তা বাতুলতা। আবার মার্কিন প্রশাসনের তরফে, উদ্দেশ্য-প্রণোদিত কিংবা উদ্দেশ্যবিহীন অতিপ্রতিক্রিয়া দিয়া সহজ মামলাকে জটিলতর করারও দরকার নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.