|
|
|
|
বন্দুক ঠেকিয়ে, যাত্রী পিটিয়ে ট্রেনে লুঠ
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মাঝরাতে দূরপাল্লার চলন্ত ট্রেনে শিশুদের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে রেখেছে খাকি পোশাক পরা এক দল দুষ্কৃতী। অবাধেই চলছে লুঠপাট এবং যাত্রীদের মারধর। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে পাঁচটি কামরায় তাণ্ডব চালানোর পরে চেন টেনে মাঝপথে নেমে গেল দুষ্কৃতীরা।
বুধবার রাতে এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পরে হাওড়ামুখী ভোপাল এক্সপ্রেসের যাত্রীরা ভেবেছিলেন, রেল পুলিশের কাছে গেলে সুরাহা মিলবে। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো অভিজ্ঞতা হল তাঁদের। ডাকাতদের মারের পরে জুটল রক্ষক রেল পুলিশের পিটুনিও। ওই ট্রেনের যাত্রীরা জানান, গঢ়বা রোড স্টেশনে অভিযোগ নেওয়ার বদলে ঝাড়খণ্ডের রেল পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা করতে শুরু করে। তাতে যোগ দেয় স্থানীয় গ্রামবাসীদের একাংশও। লাঠি ও ইটের আঘাতে কয়েক জন যাত্রী জখম হন। পরে অবশ্য রেলের অফিসারদের হস্তক্ষেপে অভিযোগ নেয় পুলিশ।
ঠিক কী ঘটেছিল? |
|
নিজের অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছে তনুশ্রী শীল। —নিজস্ব চিত্র। |
যাত্রীরা জানান, তাঁরা সাপ্তাহিক ভোপাল এক্সপ্রেসে হাওড়ায় ফিরছিলেন। বুধবার রাত আড়াইটে নাগাদ ঝাড়খণ্ডের রমনা স্টেশনে পৌঁছতেই ১০-১২ জন দুষ্কৃতীর একটি দল এস-৮ কামরায় ওঠে। তাদের পরনে ছিল খাকি পোশাক। ট্রেনে উঠেই লুঠপাট শুরু করে দেয় তারা। বাধা দিতে গিয়ে মার খান কয়েক জন পুরুষ যাত্রী। স্বামী ও দুই মেয়ের সঙ্গে ওই কামরাতেই ছিলেন অনিতা শীল। তিনি বলেন, “আমি লোয়ার বার্থে ঘুমোচ্ছিলাম। হঠাৎই একটা লোক আমার গলার হার ও কানের দুল ছিনিয়ে নিল। কেড়ে নিল টাকার ব্যাগও। আমার স্বামী বাধা দিতে গিয়ে মার খান।” অনিতাদেবীর বড় মেয়ে, বছর বারোর তনুশ্রী জানায়, তার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে রেখেছিল দুষ্কৃতীরা। যাত্রীদের অভিযোগ, এস-৮ ছাড়াও আরও চারটি স্লিপার কামরায় লুঠপাট করা হয়েছে। ভোর ৪টে নাগাদ ট্রেনটি গঢ়বা রোড স্টেশনে ঢোকার আগে ডাকাতেরা চেন টেনে ট্রেন থামিয়ে নেমে যায়।
দূরপাল্লার ট্রেনে রেলরক্ষী থাকার কথা। কিন্তু যাত্রীদের অভিযোগ, ওই ট্রেনে প্রথম থেকেই কোনও পুলিশ বা আরপিএফ ছিল না। সাধারণত চেন টানলে পুলিশ ও টিকিট পরীক্ষকেরা ছুটে আসেন। কিন্তু লুটেরারা চেন টেনে ট্রেন থামিয়ে ধীরেসুস্থে নেমে চলে গেল। তবু পুলিশ বা টিকিট পরীক্ষকদের দেখা মেলেনি।
এই লুঠপাটের সঙ্গে রেলকর্মী এবং পুলিশের একাংশও জড়িত বলে যাত্রীদের অভিযোগ। তাঁদের সেই সন্দেহ বাড়ে অভিযোগ জানাতে গিয়ে রেল পুলিশের হাতে আরও এক দফা লাঞ্ছনার পরে। যাত্রীরা জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে ট্রেনটি গঢ়বা রোড স্টেশনে ঢুকলে তাঁরা স্টেশনের জিআরপি-র অফিসে যান। কিন্তু অভিযোগ নেওয়ার বদলে রেল পুলিশ তাঁদের উপরেই চড়াও হয়। আব্দুল রজিব নামে এক যাত্রী বলেন, “প্রথমে লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করে জিআরপি-র লোকজন। তার পরেই স্টেশনের আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যেই স্থানীয় কিছু লোকজন এসে চড়াও হয় আমাদের উপরে।” তবে মারধরের কথা স্বীকার করতে চাননি ঝাড়খণ্ড রেল পুলিশের ডিআইজি টি কাণ্ডস্বামী। তিনি বলেন, “ঘটনাটা ঘটেছে উত্তরপ্রদেশে। মারধরের অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
যাত্রীদের একাংশ জানিয়েছেন, এই ঘটনার পরে তাঁরা ছত্রখান হয়ে যান। ইতিমধ্যে রেলের কয়েক জন অফিসার আসেন। তাঁদের মধ্যস্থতায় রেল পুলিশ শেষ পর্যন্ত অভিযোগ নেয়। ঘণ্টা তিনেক গঢ়বা রোড স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকার পরে ট্রেনটি ফের হাওড়ার উদ্দেশে রওনা দেয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে ভোপাল এক্সপ্রেস হাওড়ায় পৌঁছয়। বাহিনী নিয়ে প্ল্যাটফর্মে হাজির ছিলেন আরপিএফ-কর্তারা। ছিলেন হাওড়ার স্টেশন সুপারও। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। |
|
|
|
|
|