মূল স্রোত ও বৃত্তিশিক্ষার সমন্বয়ে সায় কেন্দ্রের

১৯ ডিসেম্বর
ভোটে যাওয়ার বেলায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে সময় নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কিন্তু রাজনীতি বিচ্ছিন্ন করে দেখলে, মূল স্রোতের শিক্ষার সঙ্গে বৃত্তিমূলক শিক্ষার সমন্বয়ের অভাব নিয়ে সমস্যাটি এ বার মেটার আশা দেখা দিচ্ছে। ‘ন্যাশনাল স্কিল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্কে’ আজ চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। এর পর মূল স্রোতের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সমন্বয় সহজ হবে বলেই দাবি তাঁর সরকারের।
তাতে কী লাভ হবে? খুবই সোজা করে বললে, অষ্টম শ্রেণিতে মূল স্রোতের শিক্ষা (জেনারেল এডুকেশন) ছেড়ে দিয়ে পরের সাত বছর সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে বৃত্তিমূলক শিক্ষা নিয়েও এ বার অনায়াসে পাওয়া যেতে পেরে স্নাতক ডিগ্রি। বৃত্তিমূলক শিক্ষা নিয়ে স্নাতকোত্তর এমনকী ডক্টরেটও করা যেতে পারে। আবার বৃত্তিমূলক শিক্ষার যে কোনও স্তর থেকে ফিরে আসা যেতে পারে মূল স্রোতের শিক্ষায়। সামান্য সময়ের জন্য একটি ‘ব্রিজ কোর্স’ করে নেওয়া ছাড়া সে ক্ষেত্রে বর্তমানের মতো কোনও সময় বা বছর নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই।
সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, এক বছর আগে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন (স্কিল ডেভেলপমেন্ট) নীতি ঘোষণার পরেই কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক এবং মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক মিলে মূল স্রোতের পঠনপাঠনের সঙ্গে বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সমন্বয়ের জন্য একটি কাঠামো তৈরির উদ্যোগ নেয়। পরবর্তীকালে হরিয়ানায় সেই কাঠামো পাইলট ভিত্তিতে প্রয়োগ করেও দেখা হয়। রিটেল এবং অটোমোবাইল-এই দুই ক্ষেত্রে হরিয়ানার কিছু স্কুলে বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তার পর বহু আলোচনা এবং যোজনা কমিশনের বিবেচনার পরেই এ বার ‘ন্যাশনাল স্কিল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্কে’ চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সরকার।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে এক সচিব স্তরের আমলা আজ জানান, মূল স্রোতের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা এত দিন সমান্তরাল ভাবে চলেছে। তাই বৃত্তিমূলক শিক্ষার দিকে ঝুঁকলে উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি এবং যোগ্যতা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা কাজ করত যুব সম্প্রদায় ও অভিভাবকদের মধ্যে। কারণ, অষ্টম শ্রেণি বা মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়ার পরে কেউ যদি বৃত্তিমূলক শিক্ষা নেন তা হলে বর্তমান পরিস্থিতিতে বড় জোর একটি ডিপ্লোমা পেতে পারেন। সমাজে ও বর্তমান সরকারি ব্যবস্থায় কোনও চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি এর পরেও কেবল অষ্টম বা মাধ্যমিক পাশ বলেই গণ্য হন। কিন্তু এ বার আর তা হবে না। সরকারের ওই আমলার কথায়, এর ফলে বৃত্তিমূলক শিক্ষায় প্রচুর শিক্ষার্থী যোগ দেবেন বলেই আশা করা হচ্ছে। উৎপাদন ও পরিষেবা ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের জন্যও তাঁদের সামনে রাস্তা খুলে যাবে।
‘ন্যাশনাল স্কিল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্কে’ স্পষ্ট ভাবে এই সমন্বয়ের বিষয়টি বলা আছে। যেমন, বৃত্তিমূলক শিক্ষার কোন স্তর মূল স্রোতের শিক্ষা ব্যবস্থার কোন স্তরের সমতুল হবে তা বলা রয়েছে। আবার প্রার্থীর যোগ্যতা বিচার করতে যাতে সমস্যা না হয় তা মাথায় রেখেই বৃত্তিমূলক শিক্ষার সিলেবাস এবং পরীক্ষার নিয়ম কানুন তৈরি করা হচ্ছে। মূল স্রোতের কোনও স্নাতক ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার স্নাতকের মধ্যে যাতে কোনও বৈষম্য না হয় তাও নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ বার প্রশ্ন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের মধ্যে রাজনীতি কোথায়?
বস্তুত জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি ঘোষণার নেপথ্যে রাহুল গাঁধীর উদ্যোগ রয়েছে বলে গোড়া থেকেই জানাচ্ছেন কংগ্রেস নেতারা। তাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিকের জোগান বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। লোকসভা ভোটে যুব সম্প্রদায়কে কাছে টানতে দক্ষতা উন্নয়ন নীতিকে ব্যবহারের কথা ভেবেছেন রাহুল। কিন্তু ওই নীতি তৈরি করেই তো ভোট পাওয়া যাবে না। কারণ, তার রূপায়ণের পথে অন্যতম সমস্যা ছিল মূল স্রোতের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে বৃত্তিমূলক শিক্ষার সমন্বয়ের বিষয়টি। মন্ত্রিসভা সমন্বয়ের নীতি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়ার এই বিষয়টি কংগ্রেস ভোট প্রচারে অস্ত্র করবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়টি নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে। এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সাফ বক্তব্য, “সমন্বয়ের ভাবনাটি যখন মনমোহন সরকারের তখন কংগ্রেস তো কৃতিত্ব নেবেই। তবে রাজনীতি বিচ্ছিন্ন করে দেখলে ভবিষ্যতে যুব সম্প্রদায়ের কাছে শিক্ষার ও মর্যাদার নতুন দরজা খুলে যাবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.