লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবা-মায়ের সঙ্গে মাঠে কাজ করেছে ওরা। কখনও বা নিজেদের গ্রামে পরিবারের সকলের সঙ্গে আদিবাসী নাচের সঙ্গে পা-ও মিলিয়েছে। এ বার তারাই মঞ্চস্থ করল রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য ‘চণ্ডালিকা’। ‘তারা’ হল নদিয়ার গাংনাপুর থানার কুশুরিয়া গ্রামের ২০ জন আদিবাসী ছেলেমেয়ে। সম্প্রতি রানাঘাটের রবীন্দ্রভবন সার্ধশতবর্ষ মঞ্চে এই নৃত্যনাট্যের সাক্ষী হয়ে রইলেন কয়েকশো সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ।
বৈদ্যপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুশুরিয়া গ্রামে ৬০টির মতো আদিবাসী পরিবারের বাস। বেশিরভাগেরই পেশা দিন মজুরি। সেখানেই পাটুলি কৃষি প্রদর্শন খামারের সহ-কৃষি অধিকর্তা অনীশ দাস। যিনি প্রায় সকলের কাছেই অনীশ স্যার। আদরি ওরাঁও বলেন, “আমরা স্বামী-স্ত্রী পাটুলি কৃষি খামারে কাজ করতে যেতাম। সেখানেই পরিচয় হয়েছিল অনীশবাবুর সঙ্গে। তিনিই উৎসাহ দিয়েছেন।’’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চণ্ডালিকা’ নৃত্যনাট্যে চণ্ডালিকা কন্যা প্রকৃতি, মাকে তিরস্কার করেছিল নিম্ন বর্ণে তার জন্ম দেওয়ার জন্য। এরপর প্রকৃতির দেখা হয় বৌদ্ধ ভিক্ষু আনন্দর সঙ্গে। আনন্দই প্রথম প্রকৃতিকে জানায় এই পৃথিবীতে সকলেই সুন্দর, শোভন এবং সমান। |
‘চণ্ডালিকা’র একটি দৃশ্যে কুশীলবরা। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য। |
নৃত্যনাট্যের কাহিনীর মতোই এই আদিবাসী শিশুদের জীবনেও এসেছে নতুন মোড়। তাই নাটক শেষে দর্শকদের হাততালি পেয়ে অভিভূত তারা। চণ্ডালিকার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছে মামণি ওরাঁও, চণ্ডালিকার চরিত্রে অমিতা ওরাঁও, আনন্দর চরিত্রে অরবিন্দ ওরাঁও-সহ আরো অনেকে।
অনীশ দাস বলেন, “দীর্ঘ দু’বছরের চেষ্টা আজ সফল হল। ওই আদিবাসী মানুষগুলো একশো দিনের কাজ করতে খামারে আসত। সেই থেকেই তাদের সঙ্গে আলাপ। ওদের নাচ দেখে মনে হয়েছিল চণ্ডালিকা নৃত্যনাট্য করলে কেমন হয়! সেই ভাবনাই রূপ পাওয়ায় আমি খুশি।” নৃত্য নির্দেশক অসিত আচার্য বলেন, “প্রথমে সমস্যা হয়েছে। ওরা প্রথমে নিজেদের মতো হাত ধরে গোল হয়ে নাচায় অভ্যস্ত ছিল। অনেক চেষ্টা করে তা বদলাই। ওরা খুব ভাল কাজ করেছে।”
অনুষ্ঠান মঞ্চে গ্রামের ১৫জন পড়ুয়াকে শসংসাপত্রও দেওয়া হয়েছে। রানাঘাটের মহকুমাশাসক সুপর্ণকুমার রায়চৌধুরী, কৃষি আধিকারিক রঞ্জন রায়চৌধুরী, কৃষি তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক রানা দেবদাস-সহ বিশিষ্টরা হাজির ছিলেন। তিনি বলেন, “খুব শীঘ্রই বাকিদের সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। ওদের জন্য বেশ কিছু সরকারি সুযোগ রয়েছে। সে বিষয়েও আলোকপাত করেছি।” |