ছাত্রদের মধ্যে নেশাভাঙ-সহ বিভিন্ন খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা রুখতে ও তাঁদের নিরাপত্তার স্বার্থে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের হস্টেলগুলির বাইরে সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত নিল রোগী কল্যাণ সমিতি। বৃহস্পতিবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। ছিলেন রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন, বর্ধমান পুরসভার পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত প্রমুখ।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনটি ছাত্র ও দুটি ছাত্রী হস্টেল রয়েছে। সব ক’টিতেই সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে স্বপনবাবু জানান। স্বপনবাবু বলেন, “কিছু দিন আগে বর্ধমানের ইউআইটিতে মাত্রাতিরিক্ত নেশা করায় এক ছাত্রের মৃত্যু হয়। তারপরে আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, বর্ধমানের মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলগুলিতেও এমন নানা ধরণের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে ছাত্রেরা। ছাত্রীদের হস্টেলেও বহিরাগতদের অনুপ্রবেশের খবর পেয়েছি। তা থেকেও নানা ধরনের গোলামাল ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।”
এই সিদ্ধান্তের মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে ছাত্রমহলে। দ্বিতীয় বর্ষের দুই ছাত্রী শার্লিন মার্টিন ও শুভশ্রী দত্ত বলেন, “হস্টেলের বাইরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে ওই ক্যামেরা যেন কোনও মতেই হস্টেলের ভেতরে না বসে। তাহলে আমাদের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেবে। আশা করি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নজরে রাখবেন।”
তবে বৈঠকে না ডাকা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে ছাত্রছাত্রীদের একাংশের। চতুর্থ বর্ষের তিন ছাত্র উজ্জ্বল বিশ্বাস, শুভ বাগচি ও অমিয় বালাদের কথায়, “এ দিন যে বৈঠকে হস্টেলগুলিতে সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাতে ছাত্রছাত্রীদের ডাকা হয়নি। ফলে আমরা কিছুই জানতে পারিনি। আমাদের ওই বৈঠকে ডাকা অবশ্যই উচিত ছিল।” তাঁদের আরও দাবি, “প্রতিটি হস্টেলের বাইরে একাধিক সিসিটিভি বসানো প্রয়োজন। তবে ক্যামেরা যেন কোন ভাবেই হস্টেলের ভেতরে বসানো না হয়। তাতে আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপারে নজরদারি করা হবে।” চতুথর্র্ শ্রেণির আরেক ছাত্র অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, “আসলে সিসিটিভি বসালেই যে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা বাড়ানো সম্ভব হবে তা নয়। দরকার প্রচুর নিরাপত্তারক্ষী। যাঁদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। সিসিটিভিতে হস্টেলের ভেতর থেকে কেউ বাইরে বের হলে, তার ছবি উঠবে। কিন্তু সে কোনও খারাপ কাজ করে হস্টেল থেকে বেরোচ্ছে কি না, সেটা তো দেখা যাবে না। তাই এই ব্যাপারে নিদিষ্ট কোনও পদক্ষেপ করতে হলে আমাদের মতামতও নেওয়া জরুরি।”
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মধুশ্রী রায় বলেন, “সিসিটিভি বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ঠিকই। তবে কালই তো আর বসানো হচ্ছে না। বসানোর আগে ছাত্রছাত্রীদের মতামত অবশ্যই নেওয়া হবে।” স্বপনবাবুর দাবি, “নিরাপত্তার স্বার্থে হস্টেলগুলিতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর দাবি উঠেছিল ছাত্রদের তরফেই। তাই আমরা ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হস্টেলের ভিতরে কারা ঢুকছে, সে দিকে নজর থাকা দরকার।”
তবে রোগী কল্যাণ সমিতি এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি না, তা নিয়ে বিতর্কও দেখা দিয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের দাবি, এমন সিদ্ধান্ত একান্তই নিতে হলে তা শুধু মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ নিতে পারেন। যদিও মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রোগী কল্যাণ সমিতির রয়েছে। |