কর্তাদের সামনে পেয়ে সমস্যা উজাড় গ্রামবাসীর
মস্যার কথা জানানোর জন্য হাতের কাছে কাউকে তেমন পেতেন না তাঁরা। কোনও অভাব-অভিযোগ থাকলে যেতে হয় সংশ্লিষ্ট দফতরে। কখনও দাবিপূরণের আশ্বাস, কখনও পরে দেখা করার কথা শুনে ফিরতে হয়। দাবি মেটে কদাচিৎ। তাই প্রশাসনের আধিকারিকদের সামনে পেয়ে বুধবার রাতে এলাকার নানা সমস্যার কথা নিয়ে এক যোগে সরব হলেন কাঁকসার গোপালপুরের বাসিন্দারা।
বুধবার রাতে গোপালপুর পঞ্চায়েত অফিসের পাশে কবি সুকান্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বসেছিল প্রশাসনের দরবার। ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক রুমেলা দত্ত, দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক কস্তুরী সেনগুপ্ত, কাঁকসার বিডিও রাখী বিশ্বাস ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পূর্ণিমা বাউড়ি-সহ নানা সরকারি দফতরের আধিকারিকেরা। গোপালপুর ছাড়াও বাঁদরা, বাঁশকোপা, বামুনাড়া, বৃন্দাবনপুর, কেশবপুর, পাথরডিহার শ’তিনেক বাসিন্দা হাজির হন বৈঠকে।
এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত চিকিৎসক মেলে না অভিযোগ গ্রামবাসীদের।
দরবারে প্রথম দাবি ওঠে একশো দিনের কাজ নিয়ে। সুমন ঘরামি নামে এক গ্রামবাসী দাবি করেন, পরিবারের সবাইকে বছরে একশো দিনের কাজ দিতে হবে। মহকুমাশাসক অবশ্য জানান, প্রতিটি পরিবারকে একশো দিনের কাজ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে, পরিবারের সবাইকে নয়। এর পরে অনেকে মিলে দাবি তোলেন, তাঁদের বিপিএল তালিকাভুক্ত করতে হবে। মহকুমাশাসক জানান, কোন পরিবার বিপিএল তালিকাভুক্ত হবে তা সমীক্ষার ফলের উপরে নির্ভর করে। এখনই প্রশাসনের তরফে এ ব্যাপারে কিছু করা সম্ভব নয়। তবে ওই বাসিন্দারা সরকারি সাহায্যের জন্য লিখিত আবেদন করলে, কী ভাবে তা করা সম্ভব, ভেবে দেখা হবে। কন্যাশ্রী ফর্ম না পাওয়া নিয়েও অনেকে অভিযোগ জানান। বৈঠকে উপস্থিত স্থানীয় স্কুল পরিদর্শক তপোব্রত দে জানান, ইতিমধ্যে স্কুলে-স্কুলে ফর্ম পাঠানো হয়ে গিয়েছে। এর পরেও কেউ না পেয়ে থাকলে দেখা হবে। এ ছাড়া বাধর্ক্য ভাতা, বিধবা ভাতার মতো বিভিন্ন প্রকল্পে অন্তর্ভূক্তির দাবিও তোলেন অনেকে। মহকুমাশাসক জানান, প্রতি বছর কত জনকে এই সব প্রকল্পের আওতায় আনা হবে, তার সংখ্যা সীমিত থাকে। তবু তাঁদের আবেদন বিবেচনার আশ্বাস দেন তিনি।
জাতীয় সড়কের সঙ্গে গোপালপুরের একমাত্র সংযোগকারী রাস্তা বেহাল। অবিলম্বে তা সংস্কারের ব্যবস্থার দাবি জানান কৃষ্ণেন্দু হালদার। জেলা পরিষদ সদস্য দেবদাস বক্সী বলেন, “ইতিমধ্যে বিষয়টি জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের নজরে এনেছি। তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।” বাঁশকোপার তনু হালদারের অভিযোগ, “কারখানার ভারী গাড়ি চলাচল করায় বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রামের ভিতরে যাওয়ার রাস্তা বেহাল।” গোপালপুরে একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও নিয়মিত চিকিৎসক আসেন না বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ রমেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, “ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ছুটিতে আছেন।” এই সূত্রেই বাসিন্দারা দাবি জানান, গোপালপুরের জনসংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। এখানে অন্তত একটি ২০ শয্যার হাসপাতাল গড়া হোক। বাঁদরা গ্রামের সুনীল শ্যাম বলেন, “একশো দিনের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ৯০ দিনের উপরে কাজ হয়ে গিয়েছে আমাদের এলাকায়। এর পরে আমাদের কি হবে?” বিকল্প কর্মসংস্থানের সন্ধান দিতে পারেননি প্রশাসনের কর্তারা।
মোটের উপরে, প্রশাসনিক আশ্বাসে সন্তুষ্ট গ্রামবাসীরা। কিন্তু খুশি নন গোপালপুর উত্তরপাড়ার মানুষজন। তাঁরা জানান, বাংলাদেশ থেকে ১৯৭১ সালের পরে এসে বসতি গড়েছেন। অনেকেই তফসিলি জাতিভুক্ত বলে দাবি। কিন্তু সে সংক্রান্ত শংসাপত্র চেয়ে দ্বারস্থ হলে ব্লক অফিস বারবার তাঁদের ফিরিয়ে দেয়। সুবল সরকার নামে এক বাসিন্দা প্রশ্ন তোলেন, “পড়াশোনা ও চাকরির ক্ষেত্রে তফসিলি জাতিভুক্তদের সরকার বহু সুযোগ-সুবিধা দেয়। আমরা না হয় এ দেশের নাগরিক ছিলাম না, কিন্তু আমাদের ছেলে-মেয়েরা তো জন্মেছে এ দেশেই। তা হলে তারা কেন জাতিগত শংসাপত্র পাবে না?” মহকুমাশাসক অবশ্য বলেন, “সরকারি আইনে স্পষ্ট বলা আছে, ১৯৭১ সালের পরে যাঁরা বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন, তাঁদের জাতিগত শংসাপত্র দেওয়া যাবে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.