পাঁচ বছর বয়সেই তাঁর দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিয়েছিল গুটি বসন্ত। তাই লেখাপড়া হয়নি। তবে রোগ তাঁর থেকে কাড়তে পারেনি একটি গুণ। তা হল যে কোনও গান একবার শুনেই তা কণ্ঠস্থ করার দক্ষতা। মালদহে রতুয়ার মহানন্দটোলার শিল্পী শান্তিরঞ্জন চক্রবর্তী এর পর একে একে পারদর্শী হয়ে ওঠেন শ্যামাসঙ্গীত নজরুল গীতি, পল্লি গীতি, ভাওয়াইয়া, কীর্তন, এমনকী বাউল গানেও।
তাঁর কণ্ঠকে স্বীকৃতি দিয়েছিল আকাশবাণী ও কলকাতা দূরদর্শনও। অতিথি শিল্পী হিসেবে ১৯৮২ সাল থেকে তিনি গান গেয়েছেন আকাশবাণী কলকাতায়। এক সময় সংসার চালাতে নিয়মিত গান গাইতেন কাছে-দূরের জলসায়। এখন আর ছোটাছুটি করতে পারেন না ৬৫ বছরের শান্তিরঞ্জন। স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে এখন তাঁর দিন কাটছে অর্থসঙ্কটে। সরকারি কোনও সাহায্যও তিনি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ।
পলেস্তরাহীন ইটের দেওয়ালের মাথায় টিনের চালা দেওয়া ঘরেই স্ত্রী রাজলক্ষ্মীদেবী ও মেয়ে দেবপ্রিয়াকে নিয়ে থাকেন ওই শিল্পী। ১৯৮২ সালে ৩৪ বছর বয়সে আকাশবাণীতে প্রথম গান গাওয়ার সুযোগ পান। সেখান থেকে পাওয়া সাম্মানিক আর নানা জলসা-অনুষ্ঠান থেকে আয়এই দুই দিয়েই খরচ জুগিয়েছেন দুই মেয়ের পড়ার। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এখন অশক্ত শরীরে আর ছোটাছুটি করার ক্ষমতা নেই। আকাশবাণী থেকে বছরে সাম্মানিক বাবদ মেলে ৪ হাজার টাকা। শান্তিরঞ্জনবাবু বলেন, “ওই টাকায় আর ক’দিন চলে? সরকারি ভাতা পেলে পরিবার নিয়ে দু’টি খেয়ে পরে বাঁচতে পারতাম।” ওই শিল্পীর বাড়ি যে এলাকায় সেখানেই বাড়ি রতুয়ার কংগ্রেস বিধায়কের। রতুয়ার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় বলেন, “শান্তিরঞ্জনবাবু যাতে আর্থিক সাহায্য পান সে জন্য বাম আমলে তদ্বির করে ফল হয়নি। বর্তমান সরকার তো দুঃস্থ শিল্পীদের সাহায্য করার কথা বলছে। দেখি কী হয়।” সাহায্যের আশায় ব্লকে এসে বিডিওকে গান শুনিয়ে গিয়েছেন শান্তিবাবু। রতুয়া-১ বিডিও নীলাঞ্জন তরফদার বলেন, “উনি ব্লক অফিসে এসে আমাকে নজরুলগীতি শুনিয়ে ছিলেন। আমি অভিভূত। ওই শিল্পীর বিষয়টি আগে আমার জানা ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী দুঃস্থ শিল্পীদের জন্য ভাতার বন্দোবস্ত করেছেন। শান্তিবাবুর নাম পাঠানো হবে।” এই সব আশ্বাসকে সঙ্গী করেই দিন কাটছে ৬৫ বছরের শান্তিরঞ্জনবাবুর। বছরের অনেক দিন কাটে আধপেটা খেয়েই। তিনি বলছেন, “পঞ্চায়েত থেকে একটা বার্ধক্য ভাতা তো পেতে পারি!” ওই শিল্পীর কথা অজানা নয় পঞ্চায়েত প্রশাসনেরও। মহানন্দটোলা পঞ্চায়েতের প্রধান সুকেশ যাদব বলেন, “পঞ্চায়েতের থেকে শিল্পী ওনাকে কোনও ভাবে সাহায্য করা যায় কি না দেখছি।” |