মালদহ জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী পদে মৌসম বেনজির নুরের নাম ঘোষণা হতেই বিদ্রোহের আঁচ দেখা দিয়েছে খোদ কোতুয়ালি বাড়িতে। দলীয় সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন কংগ্রেস সাংসদ মৌসম ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী। কারণ, ভাগ্নি মৌসমকে জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী হিসাবে কোনও ভাবে মানতে পারছেন না গনিখান চৌধুরীর মেজো ভাই তথা সুজাপুরের কংগ্রেস বিধায়ক আবু নাসের খান চৌধুরী। তিনি আবার জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি।
মঙ্গলবার সকালে কোতুয়ালিতে সাংবাদিক বৈঠক করে আবু নাসের খান চৌধুরী বলেন, “আমি জেলা কংগ্রেস সহ-সভাপতি। অথচ আমার সঙ্গে ডালু কোনও আলোচনা না করেই মৌসমকে জেলা কংগ্রেস সভাপতি করেছে। আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। ডালু এটা ঠিক করেনি। প্রতিদিনই আমার সঙ্গে ওঁর কথা হচ্ছে, অথচ সভাপতি পরিবর্তনের কথা ওঁরা আমাকে একবারও বলেনি।”
তিনি জানান, মালদহের মানুষ এখনও গণিখানকে ভালবাসে। তাঁর কথায়, “অনেকে দল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আমাকেও তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা বলা হয়। আমি যাইনি। গনি খান কোনও দিনও পরিবারতন্ত্র বিশ্বাস করতেন না। এখন আমরা পরিবারতন্ত্রে যাচ্ছি। নেতৃত্বের জন্য সবাই দল ছাড়ছে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি বদল করার ফলে মালদহে কংগ্রেস লোকসভা ভোটে খারাপ ফল করবে। ভোটের আগে সভাপতি পরিবর্তন করার প্রয়োজন ছিল না। এতে দলের ক্ষতি হবে। এখন পরিস্থিতি যা তাতে সহ সভাপতি পদ থেকে সরে কংগ্রেস ছাড়ব কি না, তা ভাবছি।”
দায়িত্ব পেতে না পেতেই কোতুয়ালিতে বসে আবু নাসের ‘বিদ্রোহ’ করায় রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েছেন কংগ্রেস সাংসদ মৌসম। তড়িঘড়ি দুপুরে জেলা কংগ্রেস পার্টি অফিসে সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন তিনি। তিনি বলেন, “আজকে সকালে আমি লেবু মামার সঙ্গে দেখা করেছি। তখন তো উনি আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। পরে উনি কী বলেছেন, তা বলতে পারব না। আমি আশা করছি, তিনি আগামী দিনে আমাকে সহযোগিতা করবেন।” মৌসম জানান, কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁকে বড় দায়িত্ব দিয়েছে। তিনি বলেন, “গনি খানের আদর্শে মালদহ জেলা কংগ্রেসকে আরও শক্তিশালী ও মজবুত করতে চাই। এর জন্য সকলের সহযোগিতা ও আশীর্বাদ চাইছি। যাঁরা দল ছেড়ে চলে গিয়েছেন, যাঁরা বসে গিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে দলে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রত্যেককে সম্মান ও গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করে দলের কাজ করতে চাই।”
তবে দাদার বক্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী। দিল্লি থেকে তিনি বলেন, “এআইসিসি-র সিদ্ধান্ত এক ব্যক্তি এক পদ, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা কংগ্রেস সভাপতি পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে আমার কোনও হাত ছিল না। দাদার ক্ষোভ অযৌক্তিক। উনি বিষয়টি ঠিক ভাবে দেখছেন না।” কংগ্রেস সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহে জেলা কংগ্রেস কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে আবু হাসেম খান চৌধুরী জেলা কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব মৌসমের হাতে তুলে দেবেন। ওই বৈঠকের পরেই জেলা কংগ্রেসের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন মৌসম। |