লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে নানা পেশার বিশিষ্টজনদের মধ্য থেকেই প্রার্থী দিতে চান বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রে এমনই খবর মিলেছে। দল সূত্রের খবর, দলের পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক তথা সাংসদ বরুণ গাঁধীর নির্দেশে পাহাড় ও সমতলের বিশিষ্টজনদের নামের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে বাছাই করে একটি তালিকাও তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই দার্জিলিঙের বাসিন্দা এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার এবং শিলিগুড়ির আইনজীবীদের সঙ্গে বরুণ গাঁধীর প্রতিনিধির আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
যদিও বরুণ গাঁধীর সঙ্গে ওই বিশিষ্টজনেদের মুখোমুখি আলোচনার প্রক্রিয়া শুরুতেই কিছুটা হলেও ধাক্কা খেল। আজ বুধবার শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে বিজেপির জনসভায় বক্তৃতা করার কথা ছিল বরুণ গাঁধীর। কথা ছিল, শিলিগুড়ির একটি অভিজাত হোটেলে শহরের কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত চিকিত্সক, আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত বাস্তুকার এবং দার্জিলিঙের প্রাক্তন কয়েকজন সেনা অফিসারদের সঙ্গে বুধবার বৈঠকও করবেন বরুণ। ওই বৈঠকে জলপাইগুড়ির কয়েকজন চিকিত্সকও থাকবেন বলে জানা গিয়েছিল। যদিও মঙ্গলবার বিকেলে সেই কর্মসূচি বাতিল করা হয়। বিজেপির উত্তরবঙ্গের পর্যবেক্ষক বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী বলেন, “দিল্লির আবহাওয়া খারাপ থাকায় মঙ্গলবার সকালে বিমান বাতিল হয়ে যাওয়ায় বরুণ গাঁধী আসতে পারেননি। দুপুরেও তিনি উড়ান ধরতে পারেননি। তবে, তিনি জানিয়েছেন, দ্রুত তিনি উত্তরবঙ্গে আসবেন। তখনই বিভিন্ন কর্মসূচি রাখা হবে।”
আগামী লোকসভা নির্বাচনে ফের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমথর্র্ন না-মিললে দার্জিলিং আসনে একাই লড়বে বিজেপি। অন্তত, দলের পাহাড় ও সমতলের নেতাদের অনেকে তেমনই মনে করছেন। কারণ, বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব দার্জিলিং লোকসভা আসনে স্থানীয় প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। বিজেপি সূত্রের খবর, রাজ্যের পর্যবেক্ষক বরুণ গাঁধী এমন ‘মুখকে’ দলের লোকসভায় প্রার্থী করতে চাইছেন, যাঁর সঙ্গে অতীতে কোনসময়ে বিজেপির কোনও সংস্রব ছিল না। অথচ সেই ব্যক্তি নিজের পেশা তথা কর্মক্ষেত্রের সফলতার জন্য সমাজে বিশিষ্ট বলে পরিচিত। উত্তরবঙ্গের ৮টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৬টিতেই গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। বস্তুত, দার্জিলিং আসনে স্থানীয় কাউকে প্রার্থী করার কথা ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন গত লোকসভা ভোটে বিজেপির জোটসঙ্গী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতৃত্ব।
উত্তরবঙ্গ তথা রাজ্যে দলের লোকসভায় সাফল্য বলতে একমাত্র দার্জিলিং আসন। সে কারণেই দার্জিলিং আসন নিয়ে সক্রিয় হয়েছেন বরুণ গাঁধী। দলের একটি সূত্রের খবর, দার্জিলিং-সহ জলপাইগুড়ি আসনে দলেরই বেশ কিছু প্রবীণ নেতা প্রার্থী হতে চেয়ে আবেদন করেছিলেন। সব আবেদনই বরুণ গাঁধী পত্রপাঠ নাকচ করে দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। এমনকী প্রার্থী খুঁজতে দলের নেতাদের দায়িত্ব না নিয়ে, নিজের ‘নেটওয়ার্কের’ উপরেই নির্ভর করছেন গাঁধী পরিবারের ওই সদস্য। যদিও, প্রতিটি ক্ষেত্রেই দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের সঙ্গে আলোচনা করেই পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। রাহুলবাবু বলেন, “দার্জিলিং আসন নিয়ে পৃথক ভাবে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সামগ্রিক ভাবে সব আসনের ক্ষেত্রেই সমাজে যারা প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচিত তাঁদের কথা ভাবা হচ্ছে। সে তালিকায় সব পেশার বাসিন্দারাই রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা চলছে। পাশাপাশি দলের কর্মকর্তা, যাঁদের দক্ষতা এবং পরিচিতি রয়েছে, তাঁরাও প্রার্থী হওয়ার জন্য বিবেচিত হতে পারেন।”
বরুণ গাঁধীর ঘনিষ্ঠ এক বায়ুসেনার অফিসার উত্তরবঙ্গে মূলত তাঁর হয়ে দৌত্য চালাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। বায়ুসেনার ওই অফিসার বর্তমানে দিল্লির বাসিন্দা। তিনি-ই দার্জিলিঙের এক প্রাক্তন সেনা অফিসারকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। পাহাড়ের বাসিন্দা ওই অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার প্রার্থী হতে রাজি না হলে, শিলিগুড়ির এক চিকিত্সক অথবা আইনজীবীকেও প্রস্তাব দিয়ে রাখা হয়েছে।
দল সূত্রের খবর, দ্রুত শিলিগুড়িতে না আসতে পারলে, শিলিগুড়ির বিশিষ্টজনদের দিল্লি উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে বলে বরুণ গাঁধীর ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানিয়েছেন। |